প্রয়োজন ফুরোলে কেটে পড়ে– এটাই বর্তমান মানবিক মূল্যের বাহ্যিক রূপ। ইউজ এ্যান্ড থ্রো। রাত্রি ফুরোলে হাজার টাকার বেলোয়াড়ি ঝাড় যেমন সমস্ত কদর হারিয়ে ফেলে বোঝা হয়ে দাঁড়ায় সংগঠকদের কিংবা আয়োজক কর্তার কাঁধে।
স্মৃতির সুতিকাঘর যেমন পরিণত হয় বিস্মৃতির আঁস্তাকুড়ে। যে সন্তান মাতার গর্ভে হাঁফিয়ে উঠেছিল পৃথিবীর নন্দনকাননে প্রস্ফুটিত হবার অভিপ্রায়ে সেই সন্তানই বড় হয়ে গর্ভধারিনীকে কেমন কুৎসিত ভাবে, জঘন্য উপায়ে পরিত্যাগ ক’রে নিজেকে অপরাজিত”সৈনিক” বলে প্রমাণ করতে চায়।
যে মাতা অশেষ দুঃখ যন্ত্রণাকে সহ্য করে লালন করেছিলেন তাঁর আদরের সন্তানকে তিনি কেমন সহজেই ব্রাত্য হয়ে পড়েন নিজ সন্তানের অমূল্য জীবনের ব্যাধি হয়ে। তার ভবিষ্যৎ কী? — এ প্রশ্নের সদুত্তর কেন নিঃশব্দে ঢাকা আজোও? সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে- কেন?
সমগ্র ব্যাপারটা দুর্ভাগ্যজনক হলেও অতীব বাস্তব। পিতা যেন কেবল Production machine.এই অবস্থা থেকে, এই অসহায় অসুস্থতা থেকে কর্মক্ষমহীন বৃদ্ধ পিতা মাতার বাঁচার প্রাথমিক দায়িত্ব কার এবং কাদের? বাস্তবের কঠিন আঘাতে ক্ষত বিক্ষত সন্তান পিতা-মাতার ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজেকে নিষ্কুলষ প্রমাণ করতে চাওয়াটা যেন বতর্মান ” সামাজিক প্রাথমিক শর্ত”।
এই ক্ষতিপূরণের জয়যুদ্ধে অবতীর্ণ মানবশিশু আবার দেখব কবে? এই ক্রমবর্ধমান অবক্ষয়ের হাত থেকে মুক্তি পেতে কোন চিকিৎসালয় আজোও গড়ে উঠছে না কেন?
অভিভাবক হিসেবে প্রয়োজন বোধ করি রাষ্ট্রীয় আইন কিংবা প্রশাসনিক ব্যবস্থা। প্রয়োজন মানবিক ভেদবুদ্ধির অবসান যা দ্রুত নিঃশেষ করতে পারে পিতা-মাতার ন্যূনতম চাহিদা স্নেহের উজ্জ্বল রৌদ্রে; রাত্রির অন্ধকারে যে দেব দেবী নিরন্তর সন্তানদের সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করে মনে মনে গর্বিত হতে পারেন মহান সন্তানের প্রতি সাধকের শান্তি মন্ত্র উচ্চারণে সেই পিতা-মাতার প্রতি এত উদাসীনতা কেন ?
এই অবস্থা চলতে থাকলে পিতৃমাতৃহীন সন্তান একদিন মহানিলীমায় কক্ষচ্যুত তারার মত সমাজের দোরে দোরে
ভিক্ষার ঝুলি কাঁধে নিরন্তর মানবিকতার পুঞ্জিত বেদনার অসংলগ্ন বিপর্যয়ের সাক্ষ্য বহন করবে।
আর স্বপ্নাবিষ্ট সভ্যতার শিয়রে অত্যাধুনিকতার মাত্রা- হীন লাঞ্ছনা পিতা-মাতার স্মরণীয় তাচ্ছিল্যের তেজস্ক্রিয় শোকে লীন হয়ে যাবে অসীম শূন্যে।
যে ধ্বংস- উৎসবে পৃথিবী হবে চূর্ণ বিচূর্ণ ঐ জন্মদাতা পিতা আর গর্ভধারিনী মাতার অগ্নিবর্ষী নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে– সেই উন্মত্ত কল্লোল দুর্বার প্রবিহে ধাবমান এই নিখিল বিশ্বে।
হায় মানব শিশু, হায়!!!!