.
.
বীরভূম জেলার প্রান্তিক গ্রামে বসবাস করে যখন তখন কলকাতা ছুটে আসতে পারি না । ঘাম শুকিয়ে শরীরে নুন ঝরে । রাতজাগা ক্লান্তিও উসখুস করে । এসে বাড়ি ফেরারও তাড়াহুড়ো থাকে । সংসারের ঘানি আছে । পেশার পাষণ্ড আইন আছে । কর্তব্যের ক্রিয়া চারিপাশে ছড়ানো । যেদিন কলকাতা আসি সেদিন বেশিরভাগই রবিবার থাকে । ফলে ধ্যানবিন্দু, পাতিরাম, পাঠক কারোরই দেখা পাই না । যদিবা দেখা পাই, একসঙ্গে অনেক বইপত্র কিনতেও পারি না ।
.
.
ভালো ম্যাগাজিনগুলো না কিনতে পারার যন্ত্রণা নিয়েই ফিরতে হয় । মফস্বলে এইরকম কোনো দোকান পেলে ইচ্ছেমতো কিনতাম ।ধারও চাইতাম । কিন্তু হায় সেসব ইচ্ছে কখনো পূরণ হবে না । আবার কলকাতায় বসবাস না করলে যেমন নাকি কবি লেখক হওয়া যায় না, তেমনি ভালো পাঠকও হওয়া যায় না —তাই সবাই বলছে । সম্প্রতি এক বন্ধু আমাকে জানালে, ” সুন্দরী বউয়ের অন্তঃপুরে গোপনে কান্নাকাটি করা আর প্রচারবিহীন প্রতিভার এরকমই যন্ত্রণাদায়ক অবস্থা ।” কথাটা উড়িয়ে দেওয়া যায় না । কলকাতা আর কলতলা যা হবে হোক, প্রকৃত নিষ্ঠার মূল্য থাকবেই একথা বিশ্বাস করেই চলি । দৌড় পত্রিকার দফতরে আমার কলেজ জীবন থেকেই আসি । সেখানে অনেক অনেক আপনজনদের পাই । মন ভরে যায় ।
.
.
তেমনি দেখি, কলেজ জীবনেই দেশ পত্রিকার কবিতা পড়ে চিঠিপত্র বিভাগে বহু চিঠি লিখে পাঠাতাম । নিজস্ব অনুভূতির কথা, অভিজ্ঞতার কথা লিখতাম । আজ দেখতে পাচ্ছি, আমার সেই কিশোরবেলার ভাবনা আজ বড়ো বড়ো লোকেরাও লিখেছেন । সম্প্রতি “ওঃ! স্বপ্ন !” জয় গোস্বামীর কবিতাটি অনেকেরই প্রিয়, কিন্তু সেই কবিতাগুচ্ছটির উপর একটা দীর্ঘ আলোচনা আমার কৈশোরেরই কীর্তি ছিল । অনেকেই ব্যাপারটি জানবেন । আজ সম্পাদক বন্ধুরা আমাকে লেখক কপিও দিতে চান না ।
.
.
পত্রিকা বের হলে একটা ম্যাসেজ করে বলে দেন, পাঠক ও ধ্যানবিন্দুর ঠিকানা ।আমার অন্তরায় কাকে বোঝাব ? প্রাণ ব্যাকুল হয়ে ওঠে । ব্রাত্য ও অচ্ছ্যুত হয়ে যাই । কোনও সহৃদয় সম্পাদক পত্রিকা পাঠিয়ে যে সম্মানটুকু প্রদর্শন করেন, তাতেই আমি কৃতজ্ঞ, ধন্য মনে করছি নিজেকে । আর বিকেলে বটতলার চায়ের দোকানে বসে নিজেকে তাচ্ছিল্যের বদলে দুকাপ বেশি চা খাওয়াচ্ছি আর মনে মনে বলছি, সম্পাদক বন্ধু, তোমাকে স্যালুট জানাই । আমার মনের খোরাক, ভালোবাসার ধন পত্রিকাটি পাঠিয়ে আমার আয়ুও বাড়িয়ে দিয়েছ !
.
.