আত্মা অমর। জন্ম নেই, মৃত্যু নেই। আত্মা অবিনশ্বর।
না জায়তে ম্রিয়তে বা কদাচিৎ
নায়ং ভূত্বাহভবিতা বা না ভূয়ঃ।
অজো নিত্যঃ শ্বাশ্বতোয়ং পুরানো
না হন্যতে হন্যমানে শরীরে ( গীতা২/২০)
শরীর বিনষ্ট হলেও আত্মার বিনাশ হয় না। আত্মা জন্ম- মৃত্যু রহিত,অপক্ষয়হীন এবং বৃদ্ধি হীন। জীবের শরীরে শৈশব, যৌবন ও বার্ধক্য কালের নিয়মেই হাজির হয়। আবার কালের গতিতেই তার মৃত্যু বা দেহান্তর ঘটে। কিন্তু আত্মা অবিচল। জ্ঞানী ব্যক্তি তাই কলের গতিকে সহজেই স্বীকার করে নীরব থাকেন।
দেহিনোহ স্মিন যথা দেহে কৌমারং যৌবনং জরা
তথা ও দেহান্তরপ্রাপ্তির্ধীরস্তত্র না মুহ্যতি। ( গীতা- ২/১৩)
সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে উপলব্ধি করতে আত্মার বিকাশ চাই; নিজের অনুভূতি, উপলব্ধি চাই।
অনুভূতির আসরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে নীরব নিবিড় তপস্যা চাই। এই তপস্যায় দুর্বা বেলপাতার প্রয়োজন না হলেও চৈতন্য অবশ্যই প্রয়োজন। চাই অকপট ভক্তি ও নিষ্ঠার জ্ঞান।
এসব জেনেও আমরা ভীষণ ফাঁকিবাজ, ধূর্ত। ভাবি কেউ কিছু জানতে বুঝতে পারছে না। বিদ্যুতের’ সুইচ অন’ করলেই আলো জ্বলে, পাখা ঘোরে, পাম্পের গর্জন শোনা যায়- কিছুই বোঝা যায় না। মুহুর্তেই সব রূপান্তরিত হয়। আমরাও সেই রূপ জ্ঞানের সুইচ অন্ না করে অপক্ষয়ে হাত বাড়াই।
আত্মার উন্নতি হয় না। বুঝিনা বিদ্যুতের মত অন্তরালে ভীষণ এক শক্তি রয়েছে। মিছে মায়ায় বদ্ধ হয়ে বুদ্ধি হারাই। আমি কে জড়িয়ে ঈশ্বরের নির্দিষ্ট কর্ম করতে ভুল করি। আলোর সন্ধানে মানবজীবন পেয়েও হেলায় নষ্ট করি। আত্মজ্ঞান বিনষ্ট হয়। অথচ চৈতন্য জাগরিত করতে চাই আত্মজ্ঞান। আত্মজ্ঞান না থাকলে আভিধানিক জ্ঞানে ” কিচ্ছুটি হবে নে”!
অনেক দুঃখ, অনেক লাঞ্ছনা অনেক ছলনা আসবে।গোলাপ তুলতে কাঁটার আঁচড়ে রক্তপাত হতে পারে– ক্ষতি কী? গোলাপকে ভালোবাসে গোপনন্দনকে ভালবাসা হবে।
জ্ঞান, ভক্তি আর নিষ্ঠা থাকলে ঈশ্বর দর্শন সম্ভব হবে।নীরব, নিবিড় ধ্যানের দ্বারা আত্মার অনুভুতির জগতে প্রবেশ করতে প্রমোদ নয় সকল প্রাণীর মধ্যে অভিন্নতা দেখতে হবে— তাহলেই আত্মোপলব্ধি ঘটবে।
” আত্মৌপম্যেন সর্বত্র সমং প্রতি যোহর্জুন
সুখং বা যদি বা দুঃখং স যোগী পরমো মাতঃ”!!
( গীতা- ৬/৩২)
আত্মাকে বিনষ্ট না করে আত্মার অলিন্দে প্রবেশ করাই যোগীর শ্রেষ্ঠত্ব। সেই আত্মাই পরমাত্মাস্বরূপ ভেবে আত্মভোলা হয়ে আত্মারূপ দর্শনে নিজেকে প্রস্তুত করা তাই অত্যন্ত জরুরি।