মেয়েদের অসহিষ্ণুতা নিয়ে তাঁর কটাক্ষ বড়ই প্রাসঙ্গিক।দেড় হাজারের বেশি ছোটোগল্প লিখেছেন তিনি। উপন্যাসও দেড়শো ছাড়িয়ে গেছে।তিনি বলতেন,ছোটোগল্প আমার প্রথম প্রেম।
আশাপূর্ণা দেবী তার গল্পে নিত্যনৈমিত্তিক জীবনের ছবি এঁকেছেন নিরলসভাবে। অতি সাধারণ সংসারের ঘটনা তার কলমের ছোঁয়ায় হয়ে উঠেছে এক অসাধারণ অক্ষর চিত্রের সম্ভার।
.
তাঁর গল্প পড়ে পাঠকহৃদয় আলোর বাগিচায় ঘোরে।বিশ্বজনীন জননী তাঁর লেখায় গ্রাম্য ঘটনাকে বিশ্বজনীন ভাবনার স্তরে উন্নীত করেছেন।” সব দিক বজায় রেখে,” এই গল্পে সাড়ে চার বছরের মেয়ের সাথে তার মায়ের সম্পর্কের উত্তরণ ঘটিয়েছেন।
.
তনিমা স্বাধীনচেতা রমণী। নিজেকে গন্ডি ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছেন বিশ্বদরবারের আধুনিকতার ছোঁয়ায়।শিশু বুতান সংসার ও চারপাশের পরিবেশ সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল।চরিত্র অনুযায়ী ঘটনা বিন্যাসে তাঁর জুড়ি মেলা ভার।
.
.
ছিন্নমস্তা, গল্পে ছেলের মরণে জয়াবতীর হৃদয়ে একদিকে সন্তানহারা মায়ের ব্যথা।আর একদিকে ছেলের বৌ প্রতিভার প্রতি প্রতিশোধের আনন্দ প্রকট। জয়াবতীর মতই সে এখন বিধবার অন্তর ব্যথার প্রত্যক্ষ ভাগীদার।
.
তাকে অস্বীকার করার উপায় নেই।পাঠক এখানে ব্যতিক্রমি আস্বাদ পায়। এখানই গল্পের সার্থকতা। একঘেয়ে আস্বাদের অপেক্ষা বিচিত্র অভিজ্ঞতার নিরিখে এই গল্প কালোত্তীর্ণ।
.
কিছু কিছু জায়গায় স্ববিরোধিতা থাকলেও গল্প পড়তে ভালোই লাগে।
.
জয়াবতী তার পুত্রবধুর তিক্ত বচনে জ্ঞানহীন হয়ে ঠাকুরের কাছে মাথাকুটে অভিশাপ দিয়েছেন। ট্রামচাপা পড়ে মরণ হয় পুত্রের। পুত্রহারা মায়ের শোক একদিকে আর অন্যদিকে পুত্রবধুর প্রতি প্রতিশোধের আনন্দ এই চরিত্রের কঠিন স্ববিরোধী মন,পাঠক মনকে নাড়া দেয়। নিয়ে যায় এক কঠিন জটিল মানসিকতার বিশ্লেষণের পর্বে।
.
আশাপূর্ণা দেবীর গল্পে এক ব্যতিক্রমি কাহিনী পাঠককে আনন্দ বিষাদের জগতে বিচরণ করিয়ে ছাড়ে। তার লেখনীর শৈল্পিক ছোঁয়ায় সহজ সরলভাবে প্রস্ফুটিত হয় গল্প।
.
অমরত্ব পেতে অমৃতের প্রয়োজন নেই। লেখনীর মাধুর্য তাঁকে অমরত্ব দান করেছে সন্দেহাতীতভাবে।
.
.
.