আমায় চিনতে পারছ? আমি তোমার ঠাকুরদাদার সেই শখের গড়গড়া। ও শোন শোন আত্মকথা শুরুতেই বলি, ধূমপান করা স্বাস্থের পক্ষে ক্ষতিকারক । যতই হোক বিধি সম্মত সতর্কীকরণ তো দিতেই হবে। তোমার ঠাকুরদাদা মানে সোম ডাক্তার আমাকে অনেক শখ করে নিয়ে এসেছিলেন। তারপর তো হয়েগিয়েছিলাম তার দুঃখ সুখের সাথী। আমার সামনে তিনি প্রথম বাবা হলেন।
কী আনন্দ সেই দিনে। সেই দিনটা ও উনি আমার সঙ্গে কাটালেন বেশ কিছুক্ষণ। আর তোমার ঠাকুমা যখন প্রথম মাইনের টাকা ডাক্তার বাবুর হাতে তুলেদিলেন,সেই দিন সেই উজ্জ্বল মুহূর্তের সাক্ষী ও আমি। তোমার বাবা যখন টলমল পায়ে হাঁটতো ডাক্তারবাবু আমাকে মুখে নিয়ে একমনে দেখতেন। তারপর তোমার কাকু পিসিরা এলেন একে একে। সকল মুহূর্ত আমার সামনে আজ ও ভেসে আসে। আর তুমি যখন এলে বংশের প্রথম নাতনির জন্ম উপলক্ষে কত মানুষ মিষ্টি খেল আমার সামনে বসে।
তোমার মনে পড়ে ,তোমার দাদু যেখানে বসতেন তাঁর সামনেই আমি থাকতাম , যেন তাঁর ছায়াসঙ্গী। আমা হতে উৎপন্ন ছাই নিয়ে পাড়ার আরেক ঠাকুমা দাঁত মাজতেন মনে পড়ে? আর তুমি মজা পেতে আমার গড়গড় শব্দ শুনে। পুজোর সময় তোমরা নাতি নাতনীরা এসে বাড়ি মাতিয়ে দিতে। কী ভালো লাগতো। তারপর এল সেই ভীষণ দিন, ডাক্তারবাবু বাজার থেকে ফিরে ,হঠাৎ এক অ্যাটাকে চলে গেলেন।
একা হলাম আমি। তাকিয়ে দেখো কী বিবর্ণ আমার দশা আজ। অঙ্গহানি ও ঘটেছে। কোলকের কোনো খোঁজ নেই । নেই আমার পাইপ টাও|তবু রয়ে গেছি। তোমরা রেখে দিয়েছ,তোমাদের দাদুর স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে । জানিনা আর কত কাল আর কত ঘটনার সক্ষী থাকবো এই অর্ধভগ্ন রঙচটা দৈন দশা নিয়ে। তবু রয়ে যাব,তবু বহন করে যাব অতীত ইতিহাসকে।