জলপরির জাদু
.
.
সেদিন একটি লিটিল ম্যাগাজিনে সদ্য লিখতে আসা এক কবিকে নিয়ে এক বরেণ্য কবি দীর্ঘ প্রশস্তি লিখেছেন নিজের নাম দিয়েই। লেখাটি পড়ে চমকে উঠলাম। মূলত “কৃত্তিবাস” ও “কবিসম্মেলন” পত্রিকায় উক্ত কবির দুটি মাত্র লেখা প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যেই কবিকে নিয়ে এত বিশেষণ প্রয়োগ কেন? কবিকে তো আমি চিনি। আমার কাছাকাছি তার বসতও।
.
.
কিছুদিন আগে কবিতা প্রকাশের জন্য বেশ কয়েকবার কলকাতায় এসেছে। বরেণ্য কবির গৃহেও পদার্পণ করেছে। এর মধ্যেই বরেণ্য কবিকে কোন্ জাদু বলে এরকম বশীভূত করে লিখিয়ে নিয়েছে বিষয়টি ভেবে পাইনি। একদিন বরেণ্য কবি কী করে শুনেছেন আমারই কাছাকাছি সে থাকে। তখন কথায় কথায় বললেন, আমাকে ফোন্ না করে কোনও প্রকাশককে যেন ফোন্ করে। তাতে ওর উপকার হবে।
.
.
প্রকাশককে শুধু ফোন্ করলে যে উপকার হবে না, অন্য কিছুও করতে হয় সেকথা অল্পবিস্তর সবারই জানা। বরেণ্য কবি হয়তো তার প্রকৃত উপকার করতে পারেননি, শুধু তার সম্পর্কে লিখে সর্বনামে চন্দ্রবিন্দু যোগ করতে চেয়েছিলেন। সেই কবি কি এখন কোনও প্রকাশককে ফোন্ করে? আমার জানা নেই। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো করবেও।
.
.
সে ও যে শ্রীমতী রূপসাগরের জলপরি তা বলাই বাহুল্য। আকাশে আমরা মেঘ দেখলেই ভয় পাই। বজ্র-বিদ্যুৎ তো আছেই। তাই অভিমানে ফাঁকা মাঠে ভিজতে যাওয়া তো আত্মহত্যারই সামিল। জলপরিদের অনেক ক্রিয়া, অনেক কর্ম। আকাশে হাসতে হাসতে চাঁদ ওঠে। কেশবতী কন্যার চুলে ফুলও গুঁজে দেয়। জ্যোৎস্নারা হাততালি দিতে থাকে। ভারি সুন্দর সেইসব হাততালি।
.
.
কৌশলী কবি
.
——এ লেখা কি তোমার ?
——কেন বিশ্বাস হচ্ছে না?
——তা ঠিক নয়, অবাক হচ্ছি। হঠাৎ করে কবিতায় এরকম যৌনতা এবং শব্দ ব্যবহারের প্রাচীনত্ব…. ভাবতে পারছি না।
——না ভাববার কিছু নেই। আরও কত লেখা দেখতে পাবে!.
.
হ্যাঁ সত্যিই দেখতে পাই। অনেক অনেক লেখা প্রকাশিত হয়ে চলেছে আমাদেরই সঙ্গের এক কবির। কবি শ্রীমতী নয়, শ্রীমান। ইংরেজি সাহিত্যে এম এ। রিসার্চার। শিক্ষকও । বহু বড়ো বড়ো পুস্তক ব্যবসায়ী তাঁর বই প্রকাশ করে চলেছেন। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কী তাঁর কবিতায় কোনও নতুনত্ব নেই।.
.
সেই গতানুগতিক ধারা। তথ্য তত্ত্ব বিবৃতি গল্প। তবে হ্যাঁ ভালো প্রকাশনা থেকে বইও বের হয় বলে নাকি এক শ্রেণির পাঠকও লুফে নেয়। এক সময় এই কবি হন্যে হয়ে ঘুরেছে। বাণিজ্যিক পত্রিকার দফতরে গিয়ে হন্যে হয়ে পড়ে থেকেছে। সম্পাদকের বাড়িতে গিয়েও উপস্থিত হয়েছে। কখনও মদ মাংস, কখনও অন্যান্য উপঢৌকনও নিয়ে গেছে।.
.
সেসব কিছু নিয়ে যাবার কোনও ছবি আমরা তুলে রাখিনি। তাই প্রমাণ পেশ করাও যায় না। তারপর প্রকাশনার ব্যাপারেও যে অর্থ কড়ির লেনদেন নেই তাও বলা কঠিন। দীর্ঘদিন ধরে শুধু তৈল মর্দন ও নগ্ন তোষামোদের দ্বারাও যে কাজ হয় ——সে দৃষ্টান্তও হয়তো তৈরি করেছে। একদিন তাঁকে রসিকতার ছলে জানতে চাইলাম, এসব কি তুমি টাকা দিয়ে করো ?.
.
উত্তরে আমাকে বললে, প্রমাণ দিতে পারবে ? তোমরা কারও ভালো দেখতে পারো না!.
.
আসলে ভালোমন্দের বোধই আমাদের হারিয়ে গেছে। কোন্-টা সৎ সাহিত্য, কোন্-টা অসৎ তা ঘুলিয়ে যায়। কবিকে দেখেও চিনতে পারি না। সবাইকেই এক একটা কৌশলী মনে হয়।
.
.
.
.