পুরুলিয়া জেলার রঘুনাথপুর যখন ছোট্ট মহকুমা শহর বলেই পরিগণিত ছিল অর্থাৎ যখন ছিল না কোন শপিং মল, রেস্টুরেন্ট, বড় লজ, স্টেডিয়াম। পর্যটন কেন্দ্রের তকমা তখনো পায়নি, আধুনিকতার ছোঁয়া ততটা ছিল না সকলের বিনোদনের একটা কেন্দ্র খুব পরিচিত ছিল ” বিধান টকিজ ” সিনেমা হল। তখন আসানসোল – বরাকর রাস্তার ডিভাইডার ছিল না, না ছিল ট্রাফিক মোড় না ছিল নূতন বাসস্ট্যান্ডের ভিড় ।
গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেছি হাটতলার দিকে সিনেমা হল মোড় হয়ে। তাই ঐ পাশের রাস্তাটির নাম ” সিনেমা হল রোড ” হয়েছে। হাটতলা এখন হয়েছে পুরাতন হাটতলা আর বিধান টকিজ ২০১৬ সাল থেকে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। ঐ পথে দুপাশে ভিড় জমেছে। অনেক নূতন নূতন দোকান বসেছে।
সিনেমা হলের পাশের চা – চপের দোকানটিও আর দেখা পাওয়া যাবে না। কত মানুষ এভাবে রুজি রোজগার হারিয়েছে।
আগের দিনে মা – মাসি মারা কালি পূজোতে ভাই ফোঁটা দিতে নন্দুয়াড়া মামা বাড়িতে এলে একদিন সকলে মিলে মজা করে টকি দেখতে যেতই যেত। সেই মা মাসিদের হাত ধরেই প্রথম টকি বা ‘ বিধান টকিজ ‘ সিনেমা হলে সিনেমা দেখা। অনুসন্ধান, পাহাড়ি ফুল, রাজা হরিশ চন্দ্র কত ভালো ভালো বাংলা সিনেমা তখন দেখতে এসেছি।
কলিং বেলের মন কাড়া শব্দে যেমন সিনেমা শেষ হলে ‘ EXIT ‘ লেখা দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেছি দ্রুত তেমনি আবার ” বিশ্রাম, ইন্টারভেল দেখে বাদাম ভাজা বা মিক্সচার খেতে ছুটেছি ঠেলা গাড়ির পাশে।
পরে পরে দিদি – জামাই বাবুর সঙ্গেও সিনেমা দেখতে গিয়ে রাস্তার পাশের মিষ্টি দোকানে মিষ্টি ও ঠান্ডা কোকাকোলা পাইপে খেয়ে আনন্দ পেয়ছি।
আরো যখন বড় হোলাম, জিডি ল্যাং ইন্সটিউশানে পড়ার সময় বিদ্যালয় ফাঁকি দিয়ে সিনেমা দেখতে এসেছি। পরের দিন স্বর্গীয় তরুণ সাধু স্যারের নিকট বন্ধুদের পরোচনায় বকা ঝকাও খেয়েছি ।
কিছু দিন পরে পাশেই দত্ত বা বরাট ভিডিও হল গড়ে উঠলে সিনেমার নাম ভালো লাগলে হিরো – হিরোইনগনের নাম জানা দেখে তবে পছন্দ করেছি বিধান না বরাট না দত্ত যাব।
নামকরা সিনেমা হলে টিকিট কাটা ঘরের সামনে লাইন দাঁড়াতে হয়তো সাহস পাইনি। অনেক সময় মারামারি দেখেছি যে। বাধ্য হয়ে ভয়ে ভয়ে ব্ল্যাকেই টিকিট কেটেছি। সেই সব স্মৃতি বন্ধ হয়ে যাওয়া মলীন হলটি আমাদের পুরোনো কথা মনে করিয়ে দেয়। এখন হয়তো গুদাম ঘরের কাজে ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছে।
Talkies – সবাক, চলচ্চিত্র থেকে টকিজ বয়স্কদের মুখে মুখে টকি বলতে শুনেছি। পরিবর্তনশীল জগৎ, চরৈবেতি – –
টিকিট ঘরের টিকিট জানালা ও সিনেমা হলের পোস্টার সাটানোর জায়গা গুলো তাকিয়ে মন উদাস হয়ে গেল।
যদি কোলকাতার পথে যেতে দেখতেপাই শিয়ালদহ ও ধর্ম তলার ঝাঁচকচকে ছবিঘর, Inox এখনও অস্তিস্ত্ব টিকিয়ে রেখেছে স্ব মহিমায় ।
বিকাশ চন্দ্র মণ্ডল