অভিলাষ // মৌ সাহা
কখনোকি ভেবেছো আনমনে,
পড়ন্ত বিকেলে একঝাঁক পাখির ডানায় চড়ে।
দিনের অবসান পশ্চিমে হেলে যাওয়া রবির সাথে।
নিরলস প্রচেষ্টা বারবার তোমায় খোঁজার।
ঐ আকাশের নক্ষত্ররাজের মাঝে;
কিংবা বাঁকা চাঁদের কিরণে তোমার মুখটি দেখেছি।
অদৃশ্য এক টান আমায় ভাসিয়ে নিয়েছে অজানায়,
মায়াবী চোখের অতলে হারিয়ে যায় বারবার।
যেমন করে নদী ফিরে যায় সাগরে,
তেমনি করে মিশে যেতে চাই তোমাতে।
.
ঠিকানা // হুড়কা
আমার ঠিকানা
বাউলের আখড়া
একতারার সুর৷
আমার ঠিকানা
ফাঁকা ধূ ধূ মাঠ
রাখালের সুখদুখ৷
আমার ঠিকানা
ধানের ক্ষেত
চাষি বউয়ের আঁচল৷
ঠিকানা আমার
ঐ দূর গাঁয়ে
মহুয়ার নেশায় মাদলের তালে৷
.
.
আমি বাংলাদেশের মেয়ে //রণেশ রায়,
নিজের কথা
নিজেই বলি আমি
কে আর আছে !
বলবে আমায় দামী,
হলেও রূপবতী
আমি নই গুণবতী,
আমি বাংলা দেশের মেয়ে
পৃথক নই
আর দশটা মেয়ের চেয়ে।
সবাই বলে রূপবতী
আমি নই গুণবতী,
ওরা বলে বেহায়া হতচ্ছাড়া
কোথাও নেই এমন ছন্নছাড়া,
পরের ঘরের আপদ
বাবার ঘরে বিপদ
কোথাও নই নিরাপদ।
কাজে কাজে হন্যে
সকাল থেকে সন্ধ্যে,
বয়ে বেড়াই বোঝা
রান্না কাপড় কাঁচা
আর ঘর মোছা;
তাও আমি আপদ
বাবার ঘরে বিপদ
কোথাও নই নিরাপদ,
আমি বাংলা দেশের মেয়ে
পৃথক কই !
আর দশটা মেয়ের চেয়ে।
জন্ম আমার ওপারে
এখন আমি এপারে;
সেই কবে ছোটবেলা
সেটা আমার শিশুবেলা,
একটু যখন বড়
মূল উচ্ছেদ আমার
আমার সংগে সবার,
বস্তির ঘরে আশ্রয়
সেই কবে কোন্ অসময়।
আমি ছিলাম না মন্দ
বাতাসে ফুলের গন্ধ
আকাশটা নেমে আসত ঘরে
সে কত সোহাগে আদরে,
সবুজ গাছের পাতা
আমি ছিলাম সাদা খাতা,
মেঘ আমায় ভাসিয়ে নিত
ভোরের আকাশ রাঙিয়ে দিত
ঘুমের মধ্যে চুম খেত,
সূর্যের নরম স্পর্শে ঘুম ভাঙত,
আমি বাংলা দেশের মেয়ে
পৃথক নই আর দশটা মেয়ের চেয়ে
বাবার ঘরে বিপদ
অন্যের ঘরের আপদ
কোথাও নই নিরাপদ।
ছিলাম রুপবতী
আমি নই গুণবতী,
নেই কারও মায়া
বলত সবাই বেহায়া,
কেউ বলত আপদ
বাবার ঘরে বিপদ।
রোজ বিকেল বেলা
গুলি ডাংগুলী খেলা,
বন্ধু আমার গাড্ডু
তার সংগে লাট্টু,
গাছে উঠতাম লজ্জার মাথা খেয়ে
কে আছে বেহায়া আমার চেয়ে,
অন্যের ঘরের আপদ
বাবার ঘরে বিপদ
কোথাও নই নিরাপদ।
সবাই বলে রুপবতী,
আমি নই গুণবতী,
সব দিলাম তাকে
ভালোবেসেছিলাম যাকে,
হলাম আমি মন্দ
সবাই করে সন্দ।
ভাবতাম, না হলাম শাখা
বাঁচব হয়ে প্রশাখা,
কাটবে বাবার বিপদ
বিদায় হবে আপদ,
আমি বাংলা দেশের মেয়ে
পৃথক নই
অন্য দশটার চেয়ে।
রস সিঞ্চণ করতে পারিনি
তেমন পুণ্য করিনি,
আবার উচ্ছেদ বয়সকালে
এবার রূপসহ সমূলে,
উচ্ছেদের কারণ আছে কোন?
আমি উচ্চবংশ নই শোন
আমি নই গুণবতী
কেউ আর বলে না রূপবতী;
আমি বাংলা দেশের মেয়ে
পৃথক নই অন্যের চেয়ে,
বাবার ঘরের বিপদ
সবাই বলে আপদ
কোথাও নই আমি নিরাপদ।
আমি বাংলাদেশের মেয়ে
পৃথক নই আর দশটার চেয়ে,
নই আর রূপবতী
আমি নই গুণবতি।
কয়েক বছর কেটে গেছে
বাবা গত হয়েছে,
পাঁচ পাঁচটা পেট ভরাতে
পড়তে হয় বাবুদের পাতে,
উচ্ছেদ আবার আমার
পেটের টানে এবার;
পরিচয়টা বদল হয়েছে
দিনগুলো ভালই চলছে,
আজ আমি বলির পাঁঠা
ঠিকানা আমার হারকাটা
কেউ বলে না আপদ
নই আর,
বাবার ঘরের বিপদ।
বাবুরা ডেকে নেয় সঙ্গে
বোজই পূজো দিই শিবলিঙ্গে,
নই আর আপদ
এখন আমি নিরাপদ।
আবার আমি রূপবতী
হয়েছি এখন গুণবতী,
রঙের বাহার আমার
যে আসে আমি তার
বাবুরা আমায় চায়
খরচ করলে পায়;
আজ আমি বলির পাঁঠা
ঠিকানা আমার হারকাটা
আর নই বাবার বিপদ
এখন আমি নিরাপদ,
আমি বাঙ্গলা দেশের মেয়ে
পৃথক আমি আর দশটার চেয়ে।