কবি তৈমুর খান আলোচনা করলেন বিকাশ চন্দ এর কাব্যগ্রন্থ “বিষণ্ণ দ্রোহকাল” ।

কবি তৈমুর খান আলোচনা করলেন বিকাশ চন্দ এর কাব্যগ্রন্থ “বিষণ্ণ দ্রোহকাল” ।

sahityakaal.com
সময়ের কবি, দ্রোহের কবি 
“পদযাত্রার পেছনের সারিতে হাত তুলেছি আমি 
  আমার পেছনে সহযাত্রী সেই প্রলয়—”
যে কবি এমনই লিখতে পারেন তিনি তো যুগেরই যাত্রী, সময়ের স্রোতে ভেসে যান বিষণ্ণ দ্রোহকালের পথিক। হ্যাঁ কাব্যের নামও “বিষণ্ণ দ্রোহকাল” (২০১৮) । 
“চতুর্দিকে জমাটি মৃত্যু মহড়া মোমবাতি উৎসব —
নৈঃশব্দ্য চতুর্দিক মহাশূন্য কাল”
মিছিল বা পদযাত্রা হোক তা যে জমাটি মৃত্যুর তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই দমবন্ধ “শয্যানিশির বাসরে শীৎকার” কবি শোনেন —তা তো অমোঘ প্রলয়েরই। তবুও যুদ্ধ করতে হবে। সমস্ত দ্রোহকালের বিপন্নতায় সাহস নিয়ে দাঁড়াতে হবে। দার্শনিক ও লেখক বহু আগেই সে-কথা বলে গেছেন “The two most powerful warriors are patience and time.” – (Leo Tolstoy, War and Peace) অর্থাৎ     দুটি সবচেয়ে শক্তিশালী যোদ্ধা হল ধৈর্য ও সময়। কবিও এই দুটিরই অপেক্ষায় রয়েছেন বলেই কবিতায় উল্লেখ করেছেন :
“সন্তর্পণে সেঁধিয়ে থাকি আজকাল শূন্যতায় —
শিরার স্রোত বোঝে না ৠতুকাল 
মতিচ্ছন্ন আত্মদহন কাল জানে সূর্য দাঁড়িয়ে অস্তে 
আরও নিচু হলে তো মাটি ছোঁবে বিসর্জনের আকাল।”
এই সময়ের কাছে দায়বদ্ধ থেকেই কবি বিকাশ চন্দ (জন্ম ১৯৫৫) কবিতায় অবগাহন করেন। একদিকে নিজস্ব অভিমুখ, অন্যদিকে সময়ের বিষণ্ণতা ক্রমাগত যে তির ছুঁড়েছে তাকে প্রতিহত করাই শব্দের পিপাসায় জাগ্রত হয়ে উঠেছে। স্বাভাবিকভাবেই তিনি উল্লেখ করেছেন :
“রক্তে বোনা প্রজ্ঞা চেনে অভীষ্ট প্রত্যাশার কথা*। 
এই প্রত্যাশা বা স্বপ্ন মন্থনের বহুমুখী দরজায় উপনীত হওয়ার পথ তিনি খুঁজেছেন আর আত্মজাগরণের নির্নীত অভীক্ষাটিকে সদর্থক প্রত্যয়ের ভেতর চালনা করে দিয়েছেন :
“পীড়িত সময় কাল বহুরূপী মন জাগানিয়া —”
এই কবিকে তো সেই হাত তুলে পেছনের সারিতে দাঁড়াতে দেখে সংগ্রামী প্রস্তুতিরই অভিযান বলা চলে। 
  কাব্যের প্রচ্ছদও উপযোগী। ধন্যবাদ শিল্পী রাজদীপ পুরীকে । 
*বিষণ্ণ দ্রোহকাল : বিকাশ চন্দ, পাঠক, ৩৬ এ কলেজ রো, কলকাতা ৭০০০০৯, মূল্য ১০০ টাকা ।

Leave a Reply