৪৩
বুঝি না আর, তোর মন কেমনের সকাল বিকেল রাত!
একা একা জ্বলে মরিস
চাস না মনে হাত বোলাক এ মরমী হাত!
সেই মেয়েটি কই
সেই মেয়েটি?
মন কেমনের সেই মেয়েটি কই!
সেই মেয়েটি বড় হচ্ছে
সেই মেয়েটি
হচ্ছে মানী সেই মেয়েটি মানী হচ্ছে।
একটু কাছেই এলে
ও মেয়ে তুই জানিস কি
ভূত্বক যেতাম ভুলে, তোকেই কাছে পেলে।
ও মেয়ে তোর মনের মধ্যে কবে গড়লি দুঃখ দুঃখ ঘর!
কেমন করে বুঝব বল
ও মেয়ে তুই আমায় ক্ষমা কর।
৪৪
ও পাখির বাবা, একরোখে কেন
কেন কেন কেন সাজালি সংসার!
সব উৎপাতে বন্ধ রাখলি ডানা?
গুমরে গুমরে থেকেছে ও মাংস কিংবা ডাল ভাতে
আরো আরো নত মুখ হও ও পাখির বাবা
যাক সব রোখ ভেসে যাক বিদ্যাধরীর জলে।
শিশু পাখি পায়নি কেন বল
ব্যাঘাতহীন সময় তোর?
কোন হিসাবে সে পেলনা তুলতুলে কোন ভাই বোন?
ও পাখির বাবা নত হও আরো–আরো!!
ও পাখির বাবা নত হও আরো–আরো!!
পাখির ঠোঁটে সময় বাণী বসায়,
পাখি তাই বলে–
হিসেবে ভুল করেছো করেছোই তো ভুল
ও পাখির বাবা নত হও আরো–আরো!!
ও পাখির বাবা নত হও আরো–আরো!!
৪৫
এ শরীর সবুজ চায়
খাওয়ায় শোওয়ায়
অথচ শুনছি দেখছি
এখানে ওখানে ঘন ঘন
করাতের লাফালাফি।
তুমিও আপাদমস্তক মুড়িসুড়ি
একটা বোলতা পেয়ারা ফুলকে
কি আশ্চর্য আজও মন্ত্র শোনাল!
তাল বোঝে কেউ কেউ
বাদুড়েরা অপেক্ষার গান ধরে।
৪৬
না কুড়ুল কাঁধও বিশ্বাস হারালো
নোনা বাতাস চকমকি জ্বেলে আজও ডাকে
বিদ্যাধরীর চর আর জলও চেনে অপরাধী।
নেশামাখা মাঝি আর গেরাপীও বোঝে সব
চারদিক চুপচাপ তবুও
শুধু হাহাকারে ওলঢাল মন ও স্রোত
চোলাই না খেলে হরি ডাক মুখে আসে না যে!!
চোরা স্রোতে খাবি খায় বোধ আর বুদ্ধি।
৪৭
হারার কান্না আর জেতারও
পাশাপাশি একে অন্যকে জড়িয়ে।
শিশুরা কদাচিৎ বড় হতে চায়
হেঁতালের বনে বাঘ শুধু বড় হয়
শিকার ও শিকারী একসাথে বাড়ে।
হায় বাস্তবতা, হায় বাস্তবতা!!
এভাবেই ভেতরের মুঠো মুঠো অন্ধকার
তীর ছেড়ে জলে নামে বেড়ালের পায়
আর সাদাটে মাছের আঁশ গায়ে ঘসে
ঘোসে ঘোসে জল রঙ মাখে
কোনো মেঘ, কোনো মেধা হদিস পায়নি এর।
নিজেকে নিজের কাছে প্রতিদিন অবিশ্বাস্য হই।
৪৮
কারা কারা কেনই বা সবুজ খায়?
কোনো কোনো শিশু কাঁদে ভোরবেলা।
পরগামী বউ এর কারনে প্রায় রাতে কাঁদে রাধাদা
তারপর নিজেই একটা কচিমত বিয়ে করে বসে
যায় দুঃখ ভেসে যায়, বিদ্যাধরী কাঁদে
আর আমাকে ক্যাওড়া ফুল ভাবে
বুকের ভেতরে বসায়, স্মিত হাসে।
এত মায়া, এত মায়া!!
হায়, অনিবার্য বিদ্যাধরী
তাই ফিরে ফিরে ফিরি তোর কোলে।
৪৯
রাতটাকে বাঁকিয়ে দিন করি
আর রাতের মধ্যভাগকে ঝরেঝরে সকাল
এবং পাঁজরে পুষ্টি গুঁজি এক তিন দশ।
হে ঋষি, হে কামধেনু পালক
হে পূর্ব পুরুষ, হে গোছানো মেধাবী
দেখ এসে একালেও ফুল ফোটে,
অমৃত-গান ধরে পাখি।
শিরায় শিরায় জালিকায় জালিকায়।
সেদিনও যখন কেউ কাঁদেনি
হে শনির পূজারি, ব্যবসায়ী
মেসের কোন ফোতো কার্তিক যৌন টানে
তোর বউকে দু’দিনে বউ করে
শেষে কিনা সিলিং ভালবাসে।
সেদিনও কেউ কাঁদেনি, কি আশ্চর্য্য!!
৫০
এইতো আমি ফুলের পরাগে
নদীর ঢেউয়ে
ঝড়ের বাঁকে।
পতঙ্গের ডানার সুরে গানে
এই তো আমি!
ও গান আমাকে পোড়াও আরো
ও বেদবাক্য আমাকে দেখ
লক্ষ্য ছুঁয়ে রাখ আর
আমাকে ফসল দাও
লুকিয়ে যাই বীজের পাতায়।
৫১
এক বুক রক্ত দেব
লালন পালনে দেব অবাধ বাতাস
রামধনু পেড়ে দেব হাতের মুঠোয়
পাতে দেব মাছের রাজা ফলের রাজা
আর হাতে দেব কাঁটা ছাড়া গোলাপ
বলো…
কেউ কি শুনছো?
শুনতে কি চাও?
বলো কে কে আছো
কৃত্রিম আচার ছেড়ে
আকৃতি ছুঁড়ে
খাঁটির খাঁটি মাটি হতে চাও?
বলো বলো বলো।
বলো কে কে আছো
এ ভূত্বক রোগহীন হল
আমি আমি ভাব সব পাতালে সেঁধাল
সবার মাথার উপর ছাউনি নেমে এল
আর আমার বুকের রক্ত থেকে জন্ম নিল ক্ষমা
ক্ষমা আর ভালবাসা
ছুঁড়ে ফেল সব ঘৃণা
আর বিভেদের তরবারি
পাশাপাশি বাঁচি
সবচেয়ে এটাই দরকারি
শুনতে পেয়েছো তো?
এস এবার পা চালাই।
৫৩
সব হাল ছেড়ে হাত তুলে বসে আছি
বিকল্প ভাষারা আরও খেলুক
সুরে বাঁধা পড়ুক জং পড়া তার
মিথ্যে মিষ্টি কথা উড়ে যাক জাহান্নমে।
কতটা আবেগ কোন সময়ে মেশালে
আমি অতিমানব হব সেটা ভালই জানো ন্যাও ন্যাও সব আখের গোছাও পরিপাটি
একটা আবেগ ছিঁড়ে গেলে আরেকটা নাহয়..
ন্যাও ন্যাও ন্যাও ঝোলে ঝালে অম্বলে ন্যাও
আমার এই যথেষ্ট
আকাশ,পাহাড়, বন,সমুদ্র
এমনকি বিদ্যাধরী নদী
এসব একান্ত আমার
একাধিক নষ্ট আকাশ করেছি ফালাফালা।
৫৫
ভিক্ষার নাকাঁড়া চালও দু’হাত পেতে নাও
আহা ও যে অমৃত!
সব পরাজয়ে নীচু মুখে কিছু দাও
বাঁচো বাঁচো আরো বাঁচো
চার মুখে তাকাও।
পাঁকে ঠোঁট ডোবানো
হে প্রাণ ও প্রাণ
ক্লান্ত হয়ো না
দিন শেষে কিছু তো পাবে
বিলানো জীবনে হঠাৎ রোদ?
হয় না হয় না
ও প্রাণ হে প্রাণ!
ওরাও মন তুলে হাত ধুয়ে নিতে চায়
যথার্থ ভিখিরি তুমি
গুহ্যনলে জলাকার রক্ত!
নিজে মুছে নাও
জল ভর্তি চোখ তো মোছ নিজেই
ও চার মুখ ব্যস্ত..
খুবই ব্যস্ত!
তোমার সময় অঢেল
সব ছাড়
হাতও পেত না আর
একটা ঘাসকেও কাছে নিও না
ধীরে ধীরে অন্ধ হও
কান হারাও
স্পর্শও
এ শরীর মিশে যাক
তবুও বাঁচো বাঁচো শুধু বাঁচো।
৫৬
কিছুটা ঘেন্না
অনেকটা তার বিপরীত
দিনরাত পাশাপাশি হাঁটে
ক’ফোঁটা জল অনেকটা রোদ ঘাসে ঘাসে
মন কি জেনেছে তোমার
চৈত্র আর শ্রাবণ একই বছরের?
পাশাপাশি থেকে মরমী চোখকে ঢাক!
শরীরে আর মনে এত মেঘ!
আমি তো বৃষ্টি কারীগর
শেষ যেন কবে —
খটখটে চৈত্রদিনে শ্রাবণ নেমেছিল শরীরে আর মনে?
মনে পড়ে?
এত কি অসুখ কুরে কুরে খায়?
ক্ষুব্ধ মাতামাতি,
কাল থেকে গোলাপ রেখে যাঁতি নিও হাতে
উড়ে যাবে সব দিবাস্বপ্নেরা
তৃপ্তির জল খেও চিরশুদ্ধ এ হাতে।
৫৭
তোমার ওপচানো ঘেন্নায়
আমি ফুল হয়ে ফুটি
অপেক্ষার অন্ধকার দু’চোয়ালে ঘসি
সকাল সন্ধ্যে তোমার ছোঁড়া কাদা,জুতো একনাগাড়ে গুছিয়ে রাখি…..
গোছাতে গোছাতে দেখ
কি সুন্দর দু’টো পাহাড়
দু’পাহাড়েই আমি
হালকা পলকা হাওয়া জিভ ভ্যাঙচায়
মধুর লোভে বৃত্তাকারে ঘুরছে বোলতার দল
কতদিন..
কতদিন নিঃসঙ্গতা খাইনি
ভালবাসা জমাটি হয় আরো
ঘর ভরে যায়
আমি ফুল হয়ে ফুটি
পাপড়িতে পাপড়িতে —
দলা দলা রক্ত
আমি তবু ফুল হয়ে ফুটি…
বেহুলা গো আমি জানি
লাস্য বেচে তুমি প্রাণ এনেছিলে
আমি জানি এ কাহিনিও
অবিশ্বাস পুড়িয়ে সীতা ছেড়েছিল সব
অকাট্য প্রতিরোধ ছিল বাংলা সদাগরের
আমি তাই বারবার ফুল হয়ে ফুটি…..
৫৮
কত কথা, কথার চেয়েও চুপচুপ চেয়ে থাকা, হাসি ঠোঁট, খাড়া লোম, নিঃশব্দের রস, কত অবিশ্বাস্য গল্পকথা, কোলে মাথা, চারপাশ ভুলে মারা, ভাল লাগা, মন কেমন, সময়কে তুড়ি মারা, আহাঃ, আজ শুধু স্মৃতির দড়িদড়া!!
ভালবেসে অবশ হয়েছি, ঘেন্না কুড়িয়েছি কত, তিতিবিরক্তও করেছি, আজও তুমি চারপাশে, শুধু সঙ্গী না থাকা কোকিল আমি।
তার মানে এই নয়, প্রেম নেই, তার মানে এই নয় স্বপ্নেরা পালিয়েছে, তুমি আছো, আমিও আছি, শুধু সময় ছুটে যায় অকাট্য গতিতে।
৫৯
আমি শূন্য শূন্য শূন্য, ভালবাসা শূন্য শূন্য শূন্য, শরীর শূন্য শূন্য শূন্য, শুধু বেঁচে থাকা শুধু বেঁচে থাকা।
বাল্মিকী বেঁচে আছে, কালিদাস বেঁচে আছে, তুমি আমি বেঁচে আছি, খাই দাই এদিক ওদিক ঘুরি ফিরি, এই হল আরকি!!
পাপোষে মুছতে চাই মুখ, গামছায় পা, দেয়ালে টিকটিকি, নেংটি ইঁদুরের ঘোরা ফেরা, লাথি খায় স্বপ্নেরা।
ভাঙা হাড়গোড় নিয়ে আদিখ্যেতা, সেন্টু সেন্টু খেল্, কান খুলে বসে থাকি নিপাট বন্ধ ঘরে, ভূত্বকে আলো আলো অন্ধকার নামে।
আমি শূন্য শূন্য শূন্য!!!
৬০
নিপাট ভাঁজেও ভাঁজ থাকে, কথারা হারালে কথা হয়, এক দুই করে অভিমানগুলো পরপর ফুড়ুৎ হলে, তোকে ফুল ভাবি আর এপার ওপার গন্ধ চাটি, তুই কৃত্রিম বিরক্ত ঠোঁট নাড়াস, কি করে বোঝাব বল, কত কত দিন চুপচাপ থাকলে, ঢেউ খাওয়া য়ায় এক থেকে একশ, তখন কুত্তার জাত হই, তুমি তো তখন লোহা কন্যা।
ছিটকে পড়ে গরম কথারা, রাক্ষস রক্তরা রক্তের মধ্যে উঁকি মারে, আমি নিরুপায় কন্যারে, আমি মুক্তির উল্লাস খুঁজি, অজগরের প্যাঁচ খুলি, খুলতে খুলতে দিন যায়, আর তুই কি সুন্দর চোখটা আমার উপড়ে ফেলিস!
এক ইন্দ্রিয় গ্যাছে যাক, আমি আমার মতো তোর স্মৃতিতে আর বাস্তবে, তুই চল্লি হিল্লি দিল্লি , আমার পাঁচ ফুট বাই আট ফুটটা থাক, তোর গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে আমি উল্টোভাবে এক থেকে একশ গুণি, প্রলেপের পর প্রলেপ লাগা, বাঘরোল কর চোখের পাতা, আর কথার বিরুদ্ধতা, শান্ত নদী যাক হয়ে যাক অশেষ সমুদ্র।
চিটচিটে রোদ খাক খাক না আমাকে, বুনো সব ইঁদুর এসে কেটে যাক বিছানা বালিশ, রাতগুলো শব্দে কাশুক, কষ ঠেলে আসুক রক্ত, সরকারি ওষুধ না হয় আবার খাব, মরা মরা গন্ধ উড়ুক, শকুন নামুক বা ঈগল, তোমার চোখ বন্ধ থাক, কোনো ফাঁকে ফুঁপিয়ে না হয় বোলো, না হয় পিচ্ছিলভাবে বোলো, ভালবাসি আয়, ঘর সাজাই আয়…..
৬১
চাবুক মারতে মারতে মৃতদেহটা মরে
নিজের শরীরে ছড়ায় কেরোসিনের ছিটে।
গাছের পাতার হলুদ রঙ হয়ে নাচছে
বর্ষার কাঁকড়া ধরে নাকের পাটাটায়।
মরা গরু মরলে হাসে মগডালে শকুন
ওখানে মঞ্চ জুড়েছে মাতাল মাতাল পা।
নাকের ওপর নাচছে এক তিন সাতটা
শহীদ হলেই মাতাল ডোল যাচ্ছে বাড়ি।
নীল সাদা সাইকেলের ক্রিং ক্রিং ধ্বনি
অবাধ্য বোলচালের টিপ্পনী কাটো নি?
৬২
কোন একটা ধরে নিই না
কোন ধারালো পাতা
লোকে না হোক ফুট কাটবে
রঙ মাখাবে যা তা।
রাতেরা হোক শেয়াল রাজা
খেলে মাংস খাবে
মন না হয় শরীর কেঁদে
আলো আঁধারি পাবে।
সমাজ তোর বুকের আলো
হারায় কেরামতি
পাই নি তোকে থাকি দলিত
পাই কি সেরা জ্যোতি?
দখলদার দখলদার
সবখানেতে তুই
এসব বীজ রাখি কোথায়
সবখানেতে গু-ই!
৬৩
এখানে মন খেলে
মেঘেরাও গান গায়
নষ্ট হাওয়ায়
কষ্টগুলো পষ্ট
গরাণে মাটি লেপা
হারিয়েছি বারান্দা।
এক উঠোন কথা
অকারণ দৌড়াদৌড়ি
ঘাটে বাসন মাজা
পুঁটিমাছ ছিপে ধরা
আনন্দ হাঁকছে
জাপ্টাজাপ্টি বাঁচা।
মায়ের ব্যস্ততা
কই গেলি জোতের মা
ছেলেরা ইসকুলে
খাবারে বাবার বসা
বিড়াল মিঁউ মিঁউ
হাতে লাঠি ধরা মার
দুপুরে আর রাতে
এটুকু মা করবে-ই।
একদিন হঠাৎ
ভাঙনের গান শুনি
ঈশ্বর মরল
সবখানে তছনছ
রঙীনেরা সাদাটে
দুধে আলতা মা কই!!
সাদা হয় সবটা
সাদাটে টালির চাল
বাবার বাগানটা
কচুক্ষেতের ঢেঁড়স
আর কাঁচা কুমড়ো
ষাট পয়সার কেজি
বাবা নেই কোথাও
মা কাঁদে শূন্য গোয়ালে।
এসব মনে হয়
আর জন্মের কথা
কাগজ