এক পেয়ালা কফি // মৌ সাহা
উষ্ণ কফির মগে চুমুক দিতেই,
চোখে পড়ল আলোর ঝলকানি।
ল্যাম্পপোস্টের আবছা আলো,
আর বাঁকা চাঁদের কিরণ,
দুই এ মিলে এক আলোকিত নগরী।
কোটি নক্ষত্রের মাঝে ধ্রুবতারাটাও
জ্বলজ্বল করছে নিজ মহীমায়।
দেওয়াল ভেদ করে মাথাউঁচু করে দাড়িয়ে থাকা,
বৃক্ষটাও আজ প্রাণবন্ত।
আষ্টে-পিষ্ঠে শিকড় দিয়ে আঁকড়ে ধরেছে,
পুরোনো সেই ক্ষয়ে যাওয়া দেওয়ালকে।
ঠাঁই দাড়ানো রাজপ্রাসাদের বক্ষে,
বাসা বেঁধেছে অসংখ্য কীট আর নীল প্রজাপতি।
তারা বাঁচার অবলম্বন খুঁজে পেয়েছে।
আঁধারে ঘিরে থাকা প্রাসাদও আজ,
জোনাকির আলোয় আলোকিত।
যেন মনে হয় ঝাড়বাতিটা জ্বলে উঠেছে।
.
আড্ডার খেয়া ঘাটে // রণেশ রায়
বসি এসে আড্ডার খেয়া ঘাটে,
বার্ধক্যের কাননে
আবার ফুটেছে কলি,
মিলি আমরা বন্ধু বান্ধবী সজনে,
স্মৃতির উজানে দাঁড় বেয়ে চলি,
পেরিয়ে এসেছি পঞ্চাশটা বছর
তুলে আনি ফেলে আসা দিনগুলি,
পঞ্চাশ বছর বাদে
কত কথা মনে পড়ে,
বিনিময় করে নিই সবার সাথে,
মিলি এসে জীবনের কাননে,
স্মৃতির কলি ফুল হয়ে ফোটে,
প্রস্ফুটিত ফুলের সমাহারে
মালা গাঁথি আমাদের মননে,
এই গোধূলি বেলায়
মিলি এসে যৌবনের আলিঙ্গনে,
বার্ধক্যের এ মধু লগনে
সবে মিলি মিলন বন্ধনে।
.
.
কবি নীরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী স্মরণে // বটু কৃষ্ণ হালদার
বঙ্গ তনয়ার আশিস ধন্য, বীণlবাদন রত শুভ্র কোমলের বর পুত্র
অমলিন রোদ্দুর হয়ে ফিরে গেছে না ফেরার দেশে,
কালজয়ী স্রষ্টা, বাংলার মহিরুহর ছন্দ পতন
সাহিত্য সম্রাট, তুমি রেখে গেছো একরাশ নীরবতা ও শূন্যতা
সাহিত্য সিংহাসন শূন্য আজি এ মহা সমারোহ,
জনকুলায়ের সহায়, সম্বল শেষ আশ্রয় স্থল
25 শে ডিসেম্বর, মহাআড়ম্ব সত্যই ফিকে হয়ে গেলো সোনালী রেখার লুকোচুরির খেলা
কলকাতার উলঙ্গ শিশু রা হারিয়ে যেতে যেতে গায়ে মেখে নেয় সোনালীর উষ্ণ পরশ টুকু,
কনকনে ঠান্ডায় কঠিন বাস্তব টাকে ঢেকে দিলে মখমলের রঙিন চাদর দিয়ে
তরবারির খোঁচায় জাগিয়ে দিলে সুপ্ত সমাজের ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি র চিত্র
কঠিন, নির্মম, বাস্তব বোধ দাবানল হয়ে ফুটে উঠে ছিল ঘূণধরা সমাজের চরিত্র
তাই তো শুধু অবোধ শিশুটি অবলীলায় বলে ওঠে, “রাজা তোর কাপড় কোথায়?”
সত্যই, আজি এই সময় অমল কান্তির মলিন রোদ্দুর, আলো আঁধারের মেঘ হয়ে, পূবের ঈশান কোন হতে বৃষ্টি হয়ে অঝরে ঝরে পড়েছে জনতার সরবরে
এ বিচিত্র সেলুকাসের দেশে তোমার স্বপ্নের ইচ্ছে উড়ান হয়ে ভেসে গিয়েছে নীল দিগন্ত কে ছাড়িয়ে, দূর হতে বহু দূরে……
তুমি ই তো রোদ্দুর হয়ে ভেসে যেতে চেয়ে ছিলে ওই সমুদ্দুর, তেপ্রান্তর ছাড়িয়ে জীবনের উচ্চ শিখরে অভিলাসা হয়ে.
.
.
কোথা পাবে // রণেশ রায়
কোথা পাবে তাকে
পেতে চাও যাকে
পাবে না তাকে তার বলনে
যদি পেতে চাও, খুঁজে ফের মননে
নাও পেতে পার তাকে তার চলনে
যদি না পাও তাকে তার করনে
তবে নিশ্চিত জেনো তাকে পাবে করণে।
.
হারিয়ে গেছে //রণেশ রায়
দুজনে দেখা, নেই কারও মুখে কথা
মুখে কুলুপ, জঙ্গলের স্তব্ধতা,
নেই পাখির কলরব ঝর্ণার কলকল,
কি বলবে? খুঁজে পায় না কথা
মুখে ফোটে না বোল,
ভাষা পায় না কবিতা আর
ছন্দ হারিয়েছে মনের সে ব্যথা,
মাঘে ঠান্ডা, হিমাঙ্কের নেই কোন তল,
আলো আঁধারের অন্ধকার ঘেরে
গভীর রাতের নিশুতি ডেকে ফেরে।
কিন্তু সেদিন দেখা হলে
আলিঙ্গনে জড়াতো পরস্পরে
কত কথা দুজনে একান্তে।
সময় বয়ে গেছে তর তর করে
দূরত্ব বেড়েছে জানা নেই কি কারনে
আজ দুজনে সংকোচে
কথা আসে না মুখে,
চিনেও চেনে না কেউ কাউকে,
হৃদয়ে নেই সেদিনের উষ্মতা
মজে গেছে নদী যে ছিল খরস্রোতা
কেঁদে ফেরে নীরবতা নি:সঙ্গতা,
কোথায় যে হারিয়ে গেছে
বাতাসের হিল্লোল, সেদিনের সরবতা।