বুদ্ধের ঐ কথাটা আজও কানে বাজে –
‘নিজেকে ভালোবাসা স্বার্থপরতা নয় যে ।’
তাহলে কিসের স্বার্থপরতা? কে স্বার্থপর ?
পশুরা তো লড়াই করে বাঁচার জন্য ।
ওটা লড়াই না খাদ্য শৃঙ্খল ?
যোগ্যতমই যে টিকে থাকবে ধরাতে,
ডারউইনের মতবাদে সত্যতা আছে যে তাতে ।
জগতের সবই তো ঈশ্বরের ঐশ্বর্যের প্রকাশ,
তাহলে আমার আমার করাই তো অজ্ঞতারই প্রকাশ ।
জগতটাকে তো ভাগ বাটোয়ারা করল সমাজবদ্ধ মানুষে ।
‘স্বার্থপর , নিঃস্বার্থ ‘ – সব মতবাদেই তো পুঁজিবাদীদের আধ্যিপত্য ।
সভ্যতার একদম শুরুর দিকে, বাহুবলীরা রইল টিকে ।
দখল নিয়ে সব সম্পদের, চোর সাধু আজ হল বটে।
কেড়ে নিয়ে প্রলেতারিয়েতের অধিকার –
বাঁচা হয়ে গেল গরীবের দুষ্কর ।
নিজের ভালো বুঝতে গেলে ,
তাড়িয়ে দিলে স্বার্থপর বলে।
গর্জে ওঠো যদি শোষণের বিরুদ্ধে ,
রে রে করে আসবে তেড়ে।
স্বার্থপরতা আছে যে রক্তে –
আদি অনাদি কাল হতে আজ পরিনত হয়েছে পাকাপোক্ত অভ্যেসে।
স্বার্থপরতার কারণ ও ফলের মৌলিকত্ব আছে,
সময়ের সাথে সাথে শুধু খোলসটাই যা বদলেছে ।
বৃহত্তর জগতের স্বার্থপরতার ছাপ ,
প্রকট হয়েছে সমাজে – সংসারে ।
আমিত্বের নেশাতে যে মত্ত সবাই,
আত্মসুখেতেই নজর যে তাই।
কিন্তু, কোনোদিন কি ঘটবে না? –
পশুত্বের মনুষ্যত্বে আর মনুষ্যত্বের দেবত্বে উত্তরণ !
শুনবে না কি মানুষ নিবেদিতার সেই কথা –
‘ মানুষ হও, মানুষের মত আচরণ করো।’
বাড়িয়ে দেবে না কি সাহায্যের হাত
আর্ত , নিপীড়িতের দিকে ?
স্বামীজির কথা কবে সত্যি হবে ?
শিব জ্ঞানে জীব সেবায় মানুষ ব্রতী হবে !
ঘর থেকেই শুরু হোক স্বার্থপরতার নাশ,
গড়ে উঠুক সহনশীলতার অদ্ভুত অভ্যাস ।
হিংসা, রেষারেষি যাক কমে ,
পরার্থপরতার হোক বিকাশ।
ঠাকুরের অভয় বাণী শুনেছো কি তুমি?
‘ আমি মলে ঘুচিবে জঞ্জাল । ‘
ক্ষুদ্র স্বার্থ হোক বিপন্ন,
বৃহত্তর স্বার্থ যেন না হয় পণ্য ।
হোক তবে স্বামীজির বাণীর প্রতিধ্বনি –
‘ অন্যের উপকার করা মানে তো ঘুর পথে নিজেরই উপকার করা ।’
ঘোর লেগে রয়েছে দু চোখেতে,
নতুন ভোরের অপেক্ষাতে ।
স্বার্থপরতার হোক নাশ ।
সভ্যতার হোক বিকাশ,
গুহা মানবের হানাহানি আর দুষ্মনী,
ফ্ল্যাট মানবের একা একা থাকার অভ্যেসখানি ,
সুস্থতার পরিচয় নয় কো মোটে ।
‘সকলের তরে সকলে আমরা’
বাঁচতে শিখব যেদিন আমরা,
স্বার্থপরতা যাবে চলে,
মিলেমিশে থাকব সকলে।