জলটা আজলা করে হাতে নিয়ে মাথার ওপর দিয়ে ছড়িয়ে দিলে, তারপর ভীষণ যত্ন করে মুখের ওপর লেগে থাকা জলবিন্দুগুলো দুপাশে ফেলে দিয়ে আচম্বিতে একখান ডুব দিয়ে সূর্যপ্রণাম সেরে আস্তে আস্তে সন্তর্পণে ঘাটের ওপর উঠে এলে, কাপড়ের তলাটা দুহাতে গায়ের সর্বস্ব জোর দিয়ে দুমড়িয়ে-মুচড়িয়ে চিপে নিয়ে কিছু জলরাশিকে মুক্তি দিলে,
ওরাও কেমন বাধ্য ছেলের মতো ধাপে ধাপে সিঁড়িগুলো পার করে পুকুরে গিয়ে মিশে গেল, খুঁজে বের করা দায়! আর কিছু জলবিন্দু তোমার চলার পথে কাদাগুলোর সাথে ভীড়ে গেল, মধ্যে মধ্যে তোমার পায়ের ছাপ!
ঠাকুরঘরে লক্ষীর ঘট পাল্টানোর দিন আজ! আমপল্লবখানা ভালো করে জলে ধুয়ে নিয়ে সিঁদুরের ফোঁটা দিলে তাতে, ধান, দুব্বো, ফুল একে একে সব সজ্জিত হল ঘটে, নিপুণ শিল্পীর মত দোরে দোরে আলপনা এঁকে দিলে, তাতে সবথেকে দৃষ্টি কাড়ে লক্ষীর পদচিহ্ন, সকালের পায়ের ছাপের সাথে বড্ড মিল আছে, জানো!
এতটুকু তাড়াহুড়ো না করে ঘরে ঘরে ধুনোর ধোঁয়া ছড়িয়ে দিলে, ওরা যে আলোর উৎসমুখে দৌড়ে জানালা দিয়ে বেরিয়ে গেল! এবার তুমি সুর করে পাঁচালি পড়বে, এক্কেবারে না দেখে, মনোযোগে এতটুকু ছেদ নেই তোমার!
ডান হাতে খুন্তিটা দিয়ে আলুভাজাটা নাড়তে নাড়তেই বাঁহাতে খানিকটা খড় টেনে নিয়ে উনুনে আগুনের জোগান দিলে, সাথে সাথে তা কেমন পরিপুষ্ট হয়ে উঠল, কয়েকটা শুকনো লঙ্কাও ভেজে নিলে,
স্বামী ভালোবাসে পান্তা ভাতের সাথে চটকে খেতে! ঝিমিয়ে পড়া ভাতগুলোকে খুব যত্ন করে থালাতে বেড়ে দিলে আর সাথে শুকনো লঙ্কা ভাজা আর আলুভাজা, বাতাস করতে লাগলে আস্তে আস্তে আলতো হাতে, স্বামীকে সামনে বসিয়ে খাওয়ানোর মধ্যে যে তুমি সুখ খুঁজে পাও তা তোমার চোখে স্পষ্ট প্রতিফলিত!
এবার তোমার আমার কাছে আসার পালা, এবার তুমি গন্ধরাজে মাতবে, পাতাশুদ্ধ ডালগুলোকে একদম কাছে টেনে নিয়ে সবটুকু ঘ্রাণ নিজের মধ্যে জমা করবে, ওরা ধুনোর ধোঁয়ার মত আলোর উৎস খোঁজে না, ওরা তোমার অন্তর খোঁজে,
যার গভীরে উইয়ের মত অবাধ্য বাসা বাঁধা যায়, সেই স্যাঁতস্যাঁতে গভীর কোণের খোঁজ করবে, আর তুমি শান্ত হয়ে দুচোখ বুজে আস্কারা দেবে তাকে, আশ্রয় গড়ে তুলবে সে, যাকে আঁকড়ে বাকি জীবনটা কোনোরকমে ঘরোয়া বৌদের মত কাটিয়ে দিতে পারবে, আসলে তুমি বাধ্য হবে একপ্রকার!