সাধারণের চোখ যেভাবে তাকে সুন্দর জ্ঞান করত না ঠিক তেমনি আমার চোখও। কিন্তু তার চুল! চুল দেখে আমার মতো অনেক পুরুষ তার পিছু হাটত। এই চুল দেখেই আমি তাকে ভালো বাসতাম।
জিতুর মাথার চুল কালো, মসৃণ, লম্বা এবং ঘন। এমন চুলের আবেদন চিরকালের। লম্বা চুলের সৌন্দর্য নজর কেড়ে নেয় সব সময়। ঠিক আমারও। তার চুলের ঢেউ শুধু কাছ থেকে নয়, দূর থেকেও নজর কেড়ে নেয় আমার। প্রিয় মানুষের চুলের সৌন্দর্যে মন হারিয়ে ফেলেছে কত মানুষ!
জিতু জানে না আমি যে তার চুলের প্রেমে পড়েছি। এজন্য তাকে খুব ভালোবাসি। আসলে জিতুর চেহারা যতটা অসুন্দর ঠিক ততটা সুন্দর তার চুল। মুগ্ধ করার মতো চুল। খুব যনত করে মনে হয়। কতটা যতন করে চুলগুলো আমার জানতে ইচ্ছে করে মাঝে মাঝে। কিন্তু জানবার সাহস করতে করতে আমার একযুগ লেগে গেল।
তখন আমি শিক্ষক। আর জিতু মাস্টার্স পরীক্ষা দিচ্ছে। একদিন জিতু পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরছে আর আমি স্কুল ছুটি দিয়ে বাড়ি ফিরছি। CNG থেকে নেমে দেখি অন্য একটা CNG থেকে নেমে যাচ্ছে জিতু। পিছু ধরলাম। কাঁপনা ব্রিজ পাড়ি দিয়েই ডাক দিলাম জিতু একটু অাস্তে হাট। আমাকে সঙ্গে নাও। এক ডাকেই কাজ হয়ে গেল। জিতু আমাকে সঙ্গে নেওয়ার জন্য একেবারে স্থীর গতিতে হাটছে। কিন্তু হঠাৎ করে আমার ভেতরটা কেঁপে গেল। কেঁপে গেল এজন্য যে যদি লোকে দেখে আর কোনো কিছু ভাবে। ভাবুক। লোকের ভাবাভাবিতে আসে যায় না। একযুগের লালন করা মানুষটাকে যখন একা পেয়েছি তাহলে দু’বাক্য বলেই ফেলি। ভাবতে ভাবতে আর কাঁপতে কাঁপতে একেবারে কাছাকাছি হয়ে গেলাম। জিতু আগে জিজ্ঞেস করে বসল কেমন আছি। “জ্বী ভালোই আছি আল্লাহর রহমতে” বললাম আমি।
আমি: জিতু তুমি কেমন আছ বোন? লেখা-পড়া কেমন চলছে?
জিতু: জ্বী আমিও ভালো আছি। লেখা-পড়াও ভালো চলছে। এই তো মাস্টার্স এর পরীক্ষা চলছে। আজ বাংলা প্রথমের পরীক্ষা ছিল।
আমি: ও আচ্ছা। পরীক্ষা চলছে? তো বাড়ির সবাই ভালো আছে? নাজু এখন কী করে?
জিতু: জ্বী, পরীক্ষা চলছে। আপু এখন বাড়িতেই আছে। মায়ের কাজে সহযোগিতা করে। মাঝে মাঝে কাপড় টাপড় সেলাই করে ঘরে
বসে। বিয়ের কথা কাজ চলছে আমাদের প্রাইমারির হেড মাস্টার তাজুলের সঙ্গে।
আমি: নাজু কাপড় সেলাই জানে। জানি না তো? বিয়েও ঠিক হয়ে যাচ্ছে। হোক। এর পরে আমাদের…. ..!
নাজু জিতুর বড় বোন। নাজু আর আমি একসঙ্গে লেখা-পড়া করেছি এম সি কালেজে। লেখা-পড়া শেষ করে আমার চাকরি হয়েছে। নাজুর হয় নি। নাজু মেধাবী তবু চাকরি হল না সে আরেক গল্প।
এরপর আমাদের…. ..। একথায় জিতুর স্বর একটু বদলে গেল। মনে হচ্ছে রেগে গেছে সে। না জিজ্ঞেস করেই বসল__এরপর আমাদের…। আমাদের কী?
সরাসরি বলেই দিলাম “আমাদের বিয়ে হবে”। জিতু জোরে জোরে বলতে লাগল চুপ কর, এসব কথা আর বলবে না এবং ‘বিয়ে হবে না’। চুলের কথা আর জিজ্ঞেস করা হল না। চোখ তোলে চেয়ে দেখি সামনে জিতুর ছোট ভাই রিফাত। জোর পায়ে এগিয়ে গেলাম।
অনেক দিন চলে গেল জিতুর সঙ্গে আর দেখা হল না। আজকে আবার দেখা। তার সঙ্গে লিকলিকে বাঁশের কঞ্চির মতো এক যুবক। পিঁপঁড়ের মতো পিলপিল করে হাটছে। জিতু সঙ্গে তার হাটা একদম বে-মানান লাগছে। জানি না সে জিতুর কী হয়। চোখ গেল জিতুর চুলের ওপর। চুল! কীসের চুল? নেই বললে চলে। আর লম্বা!
কোনো একটা গুণের কারণে মানুষ মানুষের ওপর মুগ্ধ হতে পারে আবার কোনো এক দোষের কারণে ঘৃণা করতে পারে। দশ দোষে বা দশ গুণে আসে যায় না।