আগুন শুধু গোলঘরে লাগেনি, লাগল আমাদের মনেও, যারা মহা আনন্দে আধপোড়া ঘুঁটের ছাই নিয়ে একটু আগেই লোফালুফি খেলেছি। সবাই গিয়ে হাজির বনবিবিতলায়। তখন তড়িৎ গতিতে ম্যানুয়াল দমকল চলছে। বড়রা হাঁড়ি, কলসি, বালতি যা হাতের কাছে পেয়েছে তাই নিয়ে খালপুকুর থেকে জল সাপ্লাই দিচ্ছে। আরেকদল গরুমোষগুলোকে বাইরে বার করছে। তারস্বরে তারাও ডাকছে। চারদিকে ছুটোছুটি, চিৎকার চেঁচামেচি।
.
এদিকে মেয়েদের ভিড়, বলাবলি চলছে আমাদের কথা। একদল বলছে ওরা বাচ্চা ওদের কী দোষ, ওরা তো খেলবেই, ছাইফেলার পর দেখতে হয়, আগুন থাকলে একটু জল দিতে হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। কিছুক্ষণের মধ্যে আগুন নিভিয়ে ফেললো বড়রা। ভয়ে ভয়ে ঘরে এলাম। খুব বড় ক্ষতি না হওয়ায় সে যাত্রা রেয়াই!
.
বড় ক্ষতিটা হয়েছিল দাদার ঘটনায়। সেটাও খোরোর সময়। সেদিন সন্ধ্যেয় রোজকার মতোই সবাই পড়তে বসেছি। সানোদা হ্যারকেন নিয়ে বাইরে গেল। পাঁচ সাত মিনিট পর আগুন আগুন চিৎকার। বাইরে বেরিয়ে দেখি আমাদের ঘরের পাশেই আমাদের পল গাদায় আগুন জ্বলছে। সেই একই কায়দায় আগুন নেভানোর চেষ্টা, দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। আমরা সব ঢেঁকিঘরে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে ভয়ে ভয়ে দেখছি।
.
খবর পেয়ে কাছারি থেকে বাবাও ফিরে এসেছে। বড় পুকুর থেকে হাতে হাতে জল বয়েও আগুন নেভানো যাচ্ছে না। এবার এল জল ছেঁচা মেসিন। মেসিন চালিয়ে পাইপে করেও জল ঢালা শুরু হল। ততক্ষণে পলের গাদা শেষ। পাশের সদ্য ঝাড়া বিচুলির গাদা, যেটি ক’দিন বাদে দামন মেড়ে পল তৈরি হবে, সেই গাদার একাংশও ছাই। তবে খামারের ধানের গাদাগুলির ক্ষতি এড়ানো গেছে। বাড়ি ভর্তি পাড়া বেপাড়ার লোকজন।
.
তো কী করে হলো এই অগ্নিকাণ্ড? পলের গাদার পাশে আমাদের দু’টো খেজুর গাছ ছিল। প্রতি বছরের মতো এ বছরও সেটা কাটা হয়েছে। প্রথম কাটের রস খেতে গিয়ে কিভাবে যেন হ্যারকেন উল্টে যায়। তার থেকেই এ কাণ্ড।
.