.
=
বিক্রম বুঝতে পারছে না যে তার সঙ্গে হচ্ছেটা কি। সে মারিয়ার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। মারিয়া জলের বোতলটা বিক্রমের দিকে এগিয়ে দিল। বিক্রম বোতলের জলে গলাটা ভিজিয়ে নিল।
=
তারপর মারিয়াকে বলল, ” কিছু একটা হচ্ছে মারিয়া। কোনো একটা অজানা গেমপ্ল্যানের অংশ হয়ে যাচ্ছি আমরা। প্রথমে তোমার সাথে, তারপর আমার সাথে….. একটা সাইকো-গেম চলছে। আমরা এই গেমের একটা ক্যারেক্টার মাত্র, নিয়ন্ত্রণ অন্য কারো হাতে।”
=
মারিয়া বলল, “গোয়েন্দামশাই, আমি ঠিক এই কারণেই তোমাকে আগে হতে কিচ্ছু বলিনি। কারণ এই অভিজ্ঞতা যার হয়েছে একমাত্র সেই বুঝতে পারবে, অন্যেরা হ্যালুসিনেশন অথবা মস্তিষ্কবিকৃতি ভাববে। আমি ভাবতাম তোমার ব্রেণপাওয়ার সাধারণ মানুষের তুলনায় অনেক বেশি কিন্তু তুমিও ঘোল খেয়ে গেলে ! “
=
বিক্রম বলল,” আচ্ছা মারিয়া ওই ছায়ামূর্তিকে তুমি কোন কোন সময় দেখতে পাও ? “
মারিয়া গালে হাত দিয়ে কয়েক সেকেন্ড ভেবে নিয়ে বলল,” মেইনলি রাতের দিকে। তাছাড়াও একা থাকলে । “
=
বিক্রম চিন্তার অতলে ডুবে গেল। এই ঘটনাটা সাধারণ মানুষের বিচারে প্যারানর্ম্যাল বলে মনে হলেও বিক্রমের মতো ক্ষুরধার বুদ্ধিসম্পন্ন সত্যসন্ধানির পক্ষে মেনে নেওয়া শক্ত। কি ঘটছে আর কি ঘটছে না তা বুঝে ওঠার মতো শক্তি হারিয়ে ফেলেছে বিক্রম। এখন কি করবে সে ?
=
একটা গুহা আবিষ্কৃত হয়েছে। সেই গুহার দেওয়ালে বিভিন্ন রঙিন চিত্র। এদের বেশিরভাগই সূর্য্যেদেবতা ‘ইনতি’ আর তার উদ্দেশ্যে বলির বিভিন্ন পদ্ধতির ছবি। ইনকারা ছিল সূর্য্য উপাসক। তারা মনে করত সূর্য্যেদেবতার কাছে চাইলে পাওয়া যায় না এমন কিছুই নেই। কিন্তু সেই প্রবল প্রতাপান্বিত দেবতাকে তুষ্ট তো করতে হবে। আর সেই কাজটা সহজ করলেন পুরোহিতরা। তারা বললেন বলির কথা।
=
পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ক্রূরতম প্রথা সম্ভবত ইনকাদের হিউম্যান স্যাক্রিফাইস বা নরবলি । গুহার দেওয়ালে দেওয়ালে সেই নরবলির ছবি থরে থরে সাজানো।
=
পূর্বদিকের দেওয়ালে একটা চেম্বারের দিকে আঙুল তুলে মারিয়া বলল, ” এইখান থেকেই মমিটা উদ্ধার করা হয়। মমিটা কাত করে শোয়নো ছিল। বডি একদম অবিকৃত। ও, তোমাকে তো মমিটা দেখানই হয়নি। মমিটা মিউজিয়ামেই আছে।”
=
বিক্রম চেম্বারটা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করল। চেম্বারটা সাত বাই তিন মাপের। বিক্রম একটু ঝুঁকে ভেতরটা দেখার চেষ্টা করল। টর্চের আলোয় চেম্বারের ভেতরে কি একটা চকচক করছে। বিক্রম হাত দিয়ে স্পর্শ করে দেখল এটা একটা চিপচিপে তরল, প্রকৃতিতে অনেকটা পারদের মতো ।
=
বিক্রম আঙুলটা নাকের কাছে ধরল। অবিশ্বাস্য ! এ তো সেই কাল রাতের গন্ধটা। তার মানে….. বিক্রম আর ভাবতে পারছে না। বিক্রম হঠাৎ যেন শুনতে পেল একটা নারীকণ্ঠের ডাক, ” কি ছেলেরে তুই, খাবি কখন ! সারাদিন শুধু কাজ কাজ আর কাজ।”
=
এ কণ্ঠস্বর বিক্রমের চেনা। ঘাড় ঘোরাতেই দেখতে পেল মা দাঁড়িয়ে। বিক্রম বলল, “মা তুমি এখানে ?”
মা ছলছল চোখে বললেন, “তুই তো খবর রাখিস না আমাদের, আমরা কি কষ্টে আছি তুই কেমন করে জানবি ! তোর বাবার শরীর খুবই খারাপ…। ” মা কাঁদতে লাগলেন।
=
হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চমকের মতো মনে পড়ে গেল বিক্রমের তার মা বাবা কেউই তো আর বেঁচে নেই। তাহলে এসব কি হচ্ছে ? ঠিক তখনই একটা পুরুষালো কণ্ঠে সম্বিত ফিরল বিক্রমের।
=
” একটু সরে যান প্লীজ। চেম্বারটা আরেকবার খুঁটিয়ে দেখতে হবে। ” একজন আর্কিওলজিস্ট ইনফ্রা-রেড লাইট নিয়ে বিক্রমের কাছে এসে দাঁড়াল।
=
–দুই–
=
সাইট থেকে ফিরে আসতে বিকেল হয়ে গেল। মারিয়ার আতিথ্যে কোনো ত্রুটি নেই। দুপুরে বেশ ভালোমতোই খাওয়া দাওয়া হয়েছে। তাছাড়া কফির কমতি নেই। মারিয়াও কফি খায় খুব। বিকেলে কফির টেবিলে মারিয়াকে বেশ হাঁসিখুশি ও প্রাণোচ্ছল লাগছিল।
=
কফির পেয়ালায় চুমুক দিয়ে নাচোসটা সালসাতে ডিপ করছিল বিক্রম, হঠাৎ মারিয়া বলল, ” তোমার সঙ্গে আমার এতদিনের আলাপ, কিন্তু তোমার পার্সোনাল লাইফ নিয়ে আমি কোনোদিন কৌতুহল দেখিনি। আজ একটা পার্সোনাল প্রশ্ন করব, কিছু মনে করবে না তো ?”
=
বিক্রম নাচোসে কামড় বসাতে বসাতে বলল, “অবশ্যই পারো। বন্ধু তুমি, তোমার কাছে আমার লুকোনোর কিছুই নেই।”
মারিয়া টেবিলের দিকে চোখ নামিয়ে বলল,” তোমার জীবনে স্পেশাল কেউ আছে কি ? “
-” মানে ? “
-” প্রেম মশাই প্রেম। প্রেম করেছেন কখনো ? “
=
বিক্রম মারিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, ” আছে। একটা পাগলী আছে। খুব ভালোবাসে আমাকে, কিন্তু তার ভালোবাসার যোগ্য আমি নই। চাকরি বাকরি নেই, চালচুলো নেই এমন ছেলের হাতে মেয়েকে তুলে দেওয়ার মতো মা-বাবা এই দুনিয়ায় বিরল। “
=
মারিয়া বিক্রমের ডান হাতটা চেপে ধরল। ” আমিও খুব একা বিক্রম ! জীবনে যাকে বিশ্বাস করেছি সেই আমাকে ঠকিয়েছে। আমি যেদিন তোমাকে প্রথম দেখি সেদিনই তোমার মধ্যে একটা স্পার্ক দেখেছিলাম। তুমি যেকোনো মেয়ের মনে কামনার আগুন ধরিয়ে দিতে পারো। “
=
বিক্রম কি বলবে বুঝতে পারলো না। মারিয়া বলেই চলল, “তোমরা ইন্ডিয়ানরা খুব সহজ সরল, তোমাদের ভালোবাসতে চাইবে যে কোনো মেয়েই। আমি আর পারছি না ডিয়ার ! তুমি তোমার ফিঁয়াসেকে ভুলে যাও। আমরা একটা ছোট্ট ঘর বাঁধব, সেখানে তুমি আর আমি। “
=
বিক্রম বলল,” এসব আলোচনা করতে আমি হুয়াকোপায় আসিনি। যে কারনে আমার এখানে আসা সেটা আগে। আশাকরি তোমাকে আর বোঝাতে হবে না। “
=
মারিয়া লজ্জ্বিত হয়ে বলল,” আমার কথায় রাগ কোরো না প্লিজ। আসলে আবেগের বশে ওসব বলে ফেললাম। সো স্যরি। “
–
-” ইটস্ ওকে। “
… চলবে