“কিরকম হয়েছে বললে না তো।” মারিয়া বিক্রমের দিকে হাসিমুখে তাকাল।
বিক্রম প্লেট হতে চোখ তুলল না। এক চামচ বিরিয়ানি মুখে তুলে বলল, “লা জবাব। সত্যিই তোমার রান্নার হাত খুব ভালো।”
মারিয়া বলল, “কাল খিঁচুড়ি আর সব্জি বানাবো। ক্লারিফায়েড বাটার দিয়ে।”
-“মানে ঘি..”
–
-” হ্যাঁ । ঘি আমার খুব ভালো লাগে। তোমাদের ইন্ডিয়ান কুজিনের বিশ্বজোড়া খ্যাতি ।”
বিক্রম বলল, “তুমি ভারতে চল, সমস্ত রকমের পদ খাওয়াবো। আমি তো তেমন রাঁধতে জানি না, তবে আমার কুক কাম হেল্পার মাধবদার হাতের রান্না অতুলনীয়। “
–
খাওয়া শেষ হয়ে গেলে বিক্রম নিজের ঘরে চলে গেল। আজ ঘুমোলে চলবে না, অনেক কাজ বাকি আছে। বিক্রম দরজাটা হাল্কা করে ভেজিয়ে রেখে শুয়ে পড়ল। ঘরের লাইট অফ করে চোখ বুজে পড়ে রইল বিছানায়। ঘন্টার পর ঘন্টা পেরিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কিছুই ঘটছে না। বিক্রম হাল ছেড়ে দিল।
–
–
রাত তিনটে নাগাদ বিক্রমের চোখ জুড়ে ঘুম এল। বিক্রম সবেমাত্র চোখ বুজেছে এমন সময় হাল্কা একটা আওয়াজ উঠল, দরজা খোলার। বিক্রম চোখ খুলল। মরার মতো পড়ে রইল সে ।
–
–
ছায়ামূর্তি ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে। নাইট বাল্বটা নিভে গেল, এসির আলোও নিভে গেল। একটা তীব্র গন্ধে ঘরটা ভরে গেল। বিক্রমের নার্ভও এবার জবাব দেবার পরিস্থিতিতে, ইন্দ্রিয়গুলো কাজ করছে না। তবুও অসাধারণ মনের জোর বিক্রমের। সেই মনোবলকেই সম্বল করে বিক্রম পিস্তল হাতে উঠে বসল।
–
–
“হ্যাণ্ডস আপ ! এক পা নড়লেই গুলি করব।” পিস্তল উঁচিয়ে হুমকি দিল বিক্রম।
ছায়ামূর্তি মাথার উপরে হাত তুলে গৌরনিতাই হয়ে দাঁড়াল। বিক্রম সামনে এগিয়ে যেতে উদ্যত হতেই ঘর কাঁপিয়ে একটা গুলির আওয়াজ হল। একটা আর্তনাদ করে ছায়ামূর্তি উল্টে পড়ে গেল। ঘটনার আকস্মিকতায় বিক্রম হকচকিয়ে গেল। সাহসে ভর করে সুইচ বোর্ডের কাছে এগিয়ে গেল বিক্রম।
–
–
আলো জ্বালাতেই দেখা গেল মেঝেতে পড়ে রয়েছে একটা ডামি। নকল মানুষ। আর সেই ডামির পাশেই পড়ে আছে একচাপ তাজা রক্ত। মিনিট খানিকের মধ্যে মারিয়াও চলে এসেছে। মারিয়া ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে।
–
–
“এ সব কি বিক্রম ?” মারিয়া বিক্রমের হাত চেপে ধরল।
“আমিও ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। একটা ডামি কিভাবে হেঁটে আসতে পারে ! আর এই রক্তই বা কার ! গুলিই বা কে চালালো !” বিক্রমের কথায় প্রচণ্ড অসহায়তা ফুটে উঠল।
–
–
“গুলি তুমি চালাওনি তো ! মানে কোন হ্যালুসিনেশনের বশে… ” মারিয়া বিক্রমের দিকে তাকাল।
বিক্রম তার পিস্তলটার গুলিগুলো পরীক্ষা করে দেখল। ” নাহ্ ! ঠিকই আছে। আমার পিস্তল হতে গুলি চলেনি। পুলিশকে জানানোই শ্রেয়। “
–
অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিক্রমের কথায় মারিয়া পুলিশে ফোন করল। পুলিশ আসতে আরো মিনিট কুড়ি লাগলো।
–
–
পুলিশ অফিসার সবকিছু শুনলেন। তারপর রক্তের নমুনা আর ডামিটা ফরেন্সিকে পাঠানো হল। বুলেটটি পাওয়া গেল দরজার উপরের দেওয়ালে। অফিসার বললেন,” বুলেটের পজিশন দেখে মনে হচ্ছে গুলি ঘরের ভেতর থেকেই চলেছে। আই অ্যাম স্যরি মিঃ মুখার্জি, আপনার পিস্তলটা আমাদের হেফাজতে নিতে হবে।”
–
–
” ইটস ওকে স্যার।” বিক্রম তার পিস্তলটা অফিসারের হাতে দিল। কিছু আইনি কাজ সারার পর অফিসার চলে গেলেন। ঘরটা সিল করলেন না। তবে মারিয়া বিক্রমের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবেন বলে জানালেন।
–
–
সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেল বিক্রমের। মারিয়া এখনো ঘুমোচ্ছে। মারিয়াকে আর ডাকল না বিক্রম। হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেল সে।
–
ঘুম থেকে উঠেই মারিয়া দেখল বিক্রম নেই। কাজের লোকটি বলল, ” স্যার সক্কাল সক্কাল বেরিয়ে গিয়েছেন। কিছু বলে যাননি।”
বিক্রমের এহেন ব্যবহারে মারিয়া খুব চিন্তিত হয়ে পড়ল ।
–
–
মুখে কিছু না বললেও তার ব্যবহারে প্রকাশ পেতে লাগল । ঘন ঘন ব্ল্যাক কফি খেতে লাগল মারিয়া। মারিয়া এমনিতে দুধ ছাড়া কফি খেতে পারে না। কিন্তু প্রবল মানসিক চাপ থাকলে ব্ল্যাক কফিই একমাত্র পছন্দ।
–
বিক্রম যখন ফিরল তখন দুপুর বারোটার কাছাকাছি। মারিয়া ভ্রু বাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কোথায় ছিলে শুনি ? তোমার জন্য আমার খুব চিন্তা হচ্ছিল। আর কখনো এভাবে না বলে যাবে না। “
–
–
শেষের কথাগুলো বলার সময় মারিয়ার চোখ ছলছল করে উঠল। এ কান্না নকল নয়, বত্রিশটা নাড়ি আহত হলে তবেই এ কান্না বের হয়।
–
–
বিক্রম মারিয়ার হাত দুটো ধরে বলল, ” পাগলি কোথাকার ! আমার কিচ্ছু হবে না। তুমি নিশ্চিন্ত হতে পারো। “
মারিয়া বলল,” কিন্তু গিয়েছিলে কোথায় ?”
–
–
-” সদরে। একটু কাজ ছিল। তবে আসার সময় হুয়াকোপা ঢোকার মুখে যা দেখলাম….”
বিক্রমের কথা শেষ হবার আগেই মারিয়া প্রশ্ন করল, ” কি দেখলে ?”
বিক্রম বলল, ” তোমার জিগনেশ দেশাইকে মনে আছে ? “
-” কোন জিগনেশ ? দিল্লি সামিটের কনভেনর ?”
–
–
-“হ্যাঁ। সেবার সুইডিশ আর্কিওলজিস্ট হত্যার কেসটাতে উনার বাড়াবাড়ি আমার ভালো লাগেনি। প্রথম থেকেই উনার উপর আমার সন্দেহ ছিল। কিন্তু কোনো প্রমাণ ছিল না। ধরা পড়ার পর আসামীরাও যেভাবে মারা গেল,…. কিংপিনকে আর ধরা গেল না।”
–
–
-” মানুষের উপর অহেতুক সন্দেহ করাটা তোমার অভ্যাস। মিঃ দেশাই অত্যন্ত ভালোমানুষ। “
বিক্রম বলল,” মারিয়া, তোমাকে একটা ভালো খবর দিই। কাল সকালেই আমি এই রহস্যের পর্দাফাঁস করব। “
–
মারিয়া বলল,” লেটস সি। গোয়েন্দা হিসাবে তোমার উপর আমার আর ভরসা নেই। খাও, দাও, থাক, এনজয় করো। এখানে অনেক ট্যুরিস্ট স্পট আছে। “
–
–
বিক্রম আর কথা বাড়ালো না। সারা জীবনে অনেক অপমান সহ্য করেছে বিক্রম, এ অপমান তার কাছে নতুন কিছু নয়। কিন্তু মারিয়ার এইসব কথাবার্তা বিক্রমের মনে একটা অন্যরকম সমীকরণের জন্ম দিচ্ছে।
–
–
–
…. চলবে