”কীরে, কোথায় তুই?”
”আরে আসছি। বাসে আছি।”
”জলদি আয়!আর কতক্ষণ দাঁড়াব? তোর জন্য ওয়েট করতে করতে তো চুল পেকে যাচ্ছে! ”
ফোনের ওইপারে একটা হাসির শব্দ শোনা গেল।প্রাণখোলা হাসি। রঞ্জনাও আপন মনে হেসে ফেলল।সত্যি…. আজব ছেলে! ওকে তাড়াতাড়ি পৌঁছতে বলে নিজে এখনও বাস থেকে নামতে পারল না। ঘড়ি দেখল রঞ্জনা। হঠাৎ কাশির শব্দ শুনে পাশে তাকায় সে। সুনন্দা ঠাকুমা। ”কীরে, কখন আসবে অরিন্দম?” ঠাকুমাকে বেশ নার্ভাস দেখাচ্ছে। রঞ্জনা হেসে ফেলে বলল, ”আর একটু ঠাম্মা, আর একটু। তারপরেই তোমার সব প্রতীক্ষার অবসান হবে। ”
কুঁচকানো গালটা একটু লাল হয়ে গেল যেন। ”যাঃ! কী যে বলিস!”
রঞ্জনা আবার হাসল।আর কেউ না জানলেও ও জানে, কতদিন ধরে, বলা ভাল, কত বছর ধরে এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করছে ঠাম্মা।শুধু এই দিনটার জন্যই ঠাম্মা সারাজীবন একাই কাটিয়ে দিয়েছে। তাই, রঞ্জনা জানে, ঠাম্মা একটু নার্ভাস হয়েই আছে।
এইসব ভাবতে ভাবতেই অরিন্দমের গলা শুনতে পেল ও। ওই যে! দৌড়ে রাস্তা পেরোচ্ছে দস্যিটা!পেছনের বয়স্ক মানুষটা তাল দিতে না পেরে একটু থমকে গেলেন, তারপর আবার এগোতে লাগলেন। হ্যাঁ, এই মানুষটাই ঠাম্মার সব অপেক্ষার শেষ করে দিতে এসেছেন। এই মানুষটাও সারা জীবন একাই কাটিয়ে দিয়েছেন। এই মানুষটাই দেবপ্রিয় আঙ্কল।
দুজনে কাছে এসে দাঁড়াতেই রঞ্জনা খেয়াল করল,ঠাম্মা উঠে দাঁড়িয়েছে। চোখে অবাক বিস্ময়। উল্টোদিকের মানুষটাও স্মিতদৃষ্টিতে দেখছেন তার প্রিয়তমাকে।
অরিন্দম রঞ্জনার দিকে এগিয়ে এসে ওর হাতটা ধরে চাপা গলায় বলল,”দেখছিস?”
”হুঁ। ”
ওদিকে ততক্ষণে আবেগ বিনিময়ের পালা শুরু হয়ে গেছে। এতদিন পর মনের মানুষকে কাছে পেয়ে ঠাম্মা নিজেকে সামলাতে পারেননি। একেবারে ভেঙে পড়েছেন আবেগে। দেবপ্রিয় আঙ্কলও তাকে পাশে বসিয়ে শান্ত গলায় বোঝাচ্ছেন।
রঞ্জনা অরিন্দমের দিকে তাকাল। বিকেলের হলদে আলো তখন সবার মুখে, চোখে এক অপূর্ব রঙের সৃষ্টি করেছে। ”আমাদের কী এখন এখানে থাকা উচিত?”রঞ্জনা জিজ্ঞেস করল।
”পাগল নাকি?” অরিন্দম বলে উঠল, ”আমাদের দায়িত্ব ছিল দুজনকে দুজনের কাছে পৌঁছে দেওয়ার। ভাগ্যিস তুই ঠাম্মার আলমারি থেকে পুরোনো চিঠি আর ছবিগুলো খুঁজে পেয়েছিলি! নাহলে তো আঙ্কলকে খুঁজেই পেতাম না! যাক, আমাদের কাজ শেষ, এবার আমরা কাটি চল। গঙ্গার ধারে যাবি?”
”মমম, যেতে পারি, যদি আলুকাবলি খাওয়াস। ”
”ওকে। ডান। ”
যাওয়ার আগে ওরা আর একবার তাকাল ঠাম্মাদের দিকে। সত্যিই, প্রিয় মানুষ সঙ্গে থাকলে মানুষের মুখের চেহারাই পাল্টে যায়!বিকেলের রাঙা আলোয় কী সুন্দর দেখাচ্ছে ওদের!রঞ্জনার মাথায় তখন একটা লাইন ঘুরছে, ”শহরতলি জুড়ে, গলির মোড়ে মোড়ে, তোমায় নিয়েই গল্প হোক।