আমি ছিলাম তোমার আশে তোমার প্রতীক্ষায়,
শালের তলে মাদল যেথায় ধিতাং ধিতাং গায়
রুক্ষ মাটি গ্রীষ্মে তাপে’ শ্রাবণ জলে নায়।
সুপ্তিভরা আঁধার ঘেরা কাজল নদীর কূলে
ঘুমিয়ে ছিলাম নরম ঘাসের কোলে ;
তন্দ্রাহরা তোমার কথা ভূলে।
ঘুমের মাঝে হঠাৎ এলো ডাক, –
“শুনছো ! হোথায় চক্রবাক
উড়ছে দেখো ; – – হোথায় চক্রবাক !
ওদের ডানা রোদে ঝলমলিয়ে ওঠে;
শান্ত নদীর নরম সবুজ তটে
সোনার রবি চলছে অস্তপাটে।”
আমি বললাম – ‘ কোথায় নিহারীকা ?
কোথায় তুমি বসে একা একা ?
কোথায় তুমি? কোথায় নিহারীকা ?”
নিরব হেঁসে বাড়িয়ে দিলে তোমার নরম হাত,
মেহেন্দীতে ভর করে তার নামল জ্যোৎস্নারাত ;
জ্যোৎস্না এসে চুমল চিকন হাত।
উঠল জোয়ার নদীর বুকে দীগন্তহীন জল
ফেনায় ফেনায় ডুবল ঘাসের দল,
মরানদী হঠাৎ হল যেন যেন উচ্ছ্বল চঞ্চল।
গলা আমার উঠল কেঁপে দারুণ আশঙ্কায়
– ‘ও মেয়ে ! এ আমি কোথাই ?
ছিলাম বসে তোমার প্রতীক্ষায়।’
ভেঁসে এলো ললিত কণ্ঠে সুরের কলতাণ
– ‘আমি তোমার নিহারীকা, – – জোয়ার ভাঁটার গান।
আমার সুরে জাগবে আজি লক্ষ কোটি প্রান।