জুনেই কলেজের থার্ড ইয়ারের পরীক্ষা।ফাস্ট ও সেকেন্ড ইয়ারে নুরের রেজাল্টের যা অবস্থা ফাইনালে ভালো নাম্বার তুলতে না পারলে অনার্সটা ঠিকবে না!কিন্তু নুরের এ নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই।রুহির আর দেখা হবে না এটা ভেবেই তার বুকের দুপাশ দুমরে মুচরে যায়!নুরের প্রেম নিবেদনের এক বছর হতে চলল।আগে দুজনের সম্পর্ক ভালো ছিল।কিন্তু প্রেম নিবেদনের পর থেকেই সম্পর্কের অবনমন শুরু যা ধীরে ধীরে একেবারে তলানিতে ঠেকেছে।বুকে জমা অফুরন্ত ভালোবাস নিয়ে বারবার ছুটে গেছে রুহির কাছে।প্রতিবারেই পেয়েছে হৃদয় ভাঙার যন্ত্রণা।
নুর মনে মনে ভাবে যদি রাম ভক্ত হনুমান হত পারতো তাহলে ভালোই হতো।বুক চিঁড়ে রুহির ছবি দেখিয়ে দিত।
কলেজের মাঠে বরুণ আর নুর বসে আছে।দুজনেই খুব ভালো বন্ধু।নুর হেসে হেসে বরুণকে বলে
-‘স্বপ্নে প্রতিদিন রুহিকে দেখি।’
-‘ফালতু কথা শোনার আমার সময় নেই।’
-‘শুননা।’
-‘বললাম না শুনবো না!……….
নুরের মন খারাপ দেখে বরুণ বলে
-‘ঠিক আছে বল।’
-‘না না থাক অন্য দিন বলবো।’
রুহির প্রেম ভালোবাসার প্রতি তেমন একটা বিশ্বাস নেই।বাবা মায়ের বিচ্ছেদ এর জন্য দায়ী।প্রেম করে বিয়ে করেও পরবর্তীতে আলাদা হয়ে যায়।তাদের মধ্যে কোন আফসোস নেই।বিচ্ছেদ যন্ত্রণা শুধু রুহিই অনূভব করে।
ফাইনাল পরীক্ষা শেষের দিন।নুর শেষ বারের জন্য রুহির দেখা করতে গেল।অপরিচিত মানুষ ও ক্ষনিক পরিচয়ের পর বিদায় কালে মায়া ধরায় কিন্তু রুহি সঙ্গে নুরের এতদিনের পরিচয় থাকা সত্তেও রুহির কোন আবেগ চোখে মুখে ধরা পরলো না।
এই সময় নুর যদি হৃদয়টা রুহির হাতে তুলে দিতে পারতো।আর রুহি যদি পরিমাপ করে দেখতে কতটা ভালোবাসে!না হয় অবহেলা বশত ছুরে টুকরো টুকরো করে দিত।বিষ্মিত হয়ে রুহিই দেখতো প্রতিটি টুকরোতে নিজের ছবি।
-‘একদিন খুঁজতে হবে।সেদিন হয়তো আর খুঁজে পাবে না।’
-‘আমি কাউকে খুঁজবো না।’
রুহি দ্রুত কলেজের গেটের বাইরে চলে যায়।
**
কলেজ শেষ হওয়ার এক বছর পর রুহির মা চাকরি থেকে অবসর নেয়।স্থায়ী ভাবে বসবাসের জন্য কোচবিহার চলে যায়।
তৃতীয় বছরে রুহির বিয়ে হয়।
**
বরুণ কোচবিহার আসে কোন এক কাজে।হঠাৎ দেখা হয় রুহি,সঙ্গে এক সুদর্শন যুবক।পরিচয় করিয়ে দেয় রুহি।এই সুদর্শন যুবকটিই তার স্বামি।শ্বশুর -শ্বাশুড়ি,স্বামীর খুব প্রসংশা করে।
রুহি সুখেই আছে।
অনেক কথা পর জানতে চায় নুর কেমন আছে?বিয়ে করেছে না কি?এখনো কি কোন মেয়ের জন্য পাগলামি করে?
বরুণ কি বলবে ভেবে পায় না।শুধু বলে ভালো আছে।নিজের একটা কল্পনার জগৎ বানিয়েছে।সেখানে সব সময় ছবি আঁকে।
রুহি আর কিছু জানতে না চাওয়ায় বরুণও বলার প্রয়োজন বোধ করলো না।
নুর কলেজ শেষ করার পরেও রুহিকে দেখার জন্য ছুটাছুটি করতো।অনেক চেষ্টা করেও ভুলতে পারেনি!তাই আজ বেদনার অঙ্গার দিয়ে রুহির ছবি আঁকে দেওয়ালে।সঙ্গী নিঃসঙ্গ ঘর,খোঁচা খোঁচা দাড়ি,ঝাকড়া চুল,পাগল একটা মন!
বরুণ আর নুরকে সময় দিতে পারেনা।
নুর-রুহির পড়তে না পারা একটা ছোটগল্প!