বীরভূম জেলার আহমদপুর স্টেশনে নেমে জুঁইতা গ্রামে আমার মামার বাড়ি ।গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে বক্রেশ্বর নদী ।গাছে গাছে সাজানো গ্রাম ।
আমি মামার বাড়িতে এলে একমাস থাকি । আসার দুই দিনের মধ্যেই জানতে পারলাম বুড়ো বটগাছতলায় একটি লোক একমুখ দাড়ি নিয়ে নানা রকমের বিস্ময়কর কাজ করে দেখাচ্ছে। হাত থেকে আগুন বের করে দেখাচ্ছে। প্রচুর লোক তাকে দেখতে আসছে ।
আমি একটা লোককে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি আশায় ওখানে যাচ্ছেন।
____ আরে দাদা, উনি মহাপুরুষ , উনি যা বলেন তাই হয় ।
——কি রকম, একটু ভেঙ্গে বলুন ।
——–একটো ঘটি আছে । ঘটিটো থেকে জল ছিটিং দিছে আর তারপর যা বঁলছে তাঁই হচে ।
বীরভূম জেলার ভাষা এইরকমই । শুনতে বেশ ভালো লাগে ।
আমি পিছনে পিছনে কথা বলতে বলতে মহাপুরুষের কাছে গেলাম । দেখলাম অনেক লোক লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন ।
একজন এগিয়ে গিয়ে বললেন, আমার ভবিষ্যৎ একটু বঁলে দেন কেনে ।
মহাপুরুষ তার সঙ্গীকে বললেন, এর সঙ্গে কথা বলে ওর অসুবিধা আমাকে লিখে পাঠা ।
মহাপুরুষের প্রায় দশজন সঙ্গী । গ্রামের আদিবাসী পাড়ার কয়েকজনকে বশ মানিয়ে নিয়েছে ।বেশ ভালো রকম আয় হচ্ছে তার ।
একটি তরুন এগিয়ে এসে বললো, এই ফোর জি র যুগে চিটিং বাজি ।বেটা দেবো তোমার ব্যবসা গুটিয়ে ।
মহাপুরুষ রেগে বলে উঠলেন ,তোর ফোর জি তে ঝুল জমবে । আমার অভিশাপ বারো ঘন্টার মধ্যে তোর বিপদ হবে ।
তরুণ টি বলে উঠলো, শোনো নি ফাইভ জি চালু হয়েছে অনেক দেশে । তোমার চিটিং বাজি চলবে না ।
পাঁচ ঘন্টার মধ্যে শোনা গেলো তরুণটি মোটর সাইকেলের ধাক্কায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ।
মন টা খুবই খারাপ হয়ে গেলো । সরল মানুষ গুলিকে এরা ঠকিয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন । ক্লান্ত হয়ে বিছানায় ঘুমিয়ে পড়লাম ।
তখনও ঘুম থেকে উঠিনি ।সাত সকালে উঠেই ঢোলের আওয়াজ । গ্রামের দিকে খুব ভালো খবর ঢোল বাজিয়ে প্রচার করা হয় ।
শুঁনুন শুঁনুন মন দিয়ে শুনুন আগামী কাল বুড়ো বটতলায় শিব উঠবে ।আঁপনারা সবাই যাবেন , সবার সাঁ মনে এই ঘটনা হবে,মহাপুরুষ বলেছেন ।
আমি চমকে উঠলাম । তার সব চালাকি আমি বুঝতে পেরেছি । কিন্তু সবার সামনে শিব উঠবে কেমন করে?
বুঝতে পারছি না । মনে পড়লো জয়ন্ত দা র কথা । ফাইভ জি যুগের বুদ্ধিমান তরুণ তরুণী ।হৈমন্তী দি কে আনতে পারলে আর ভয় নেই । ফোন নাম্বার কাছেই ছিলো । আগামী কাল সকালে আসবেন দুজনে ।
বেশ আরামে ঘুম হলো আজকে ।আনন্দ হচ্ছে আজকেই ভন্ড , ঠগটির শেষ দিন ।
ঠিক বারোটার মধ্যে ওনারা চলে এলেন । খাওয়ার পরে একটু বিশ্রাম নিলেন। ঠিক পাঁচটার সময় মহাপুরুষের ভানুমতীর খেল শুরু হবে ।
বুড়ো বটতলায় প্রচুর ভীড় । লোকে লোকারণ্য । মেলা বসার পরিবেশ । কিন্তু তিনি জানেন না ফাইভ জি রা এসে গেছেন তার অজান্তে ।
শুরু হলো ভানুমতীর খেল । হ্যাঁ সত্য কথা শিব উঠছেন মাটি ফুঁড়ে ।সবাই জয়ধ্বনী দিচ্ছেন ।টাকার পরিমাণ প্রচুর ।কুবেরের ধন ।
জয়ন্ত দা কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞানের সহ সম্পাদক ও হৈমন্তী দি সহ সম্পাদনা সচিব । তারা বন্দুক ধারী দুজন পুলিশ কে বললেন কিছুটা জায়গা ফাঁকা করার জন্য। পুলিশ দেখে সবাই সাবধান হয়ে গেলো ।
জয়ন্ত দা বললেন আপনাদের বিশ্বাস কে আমরা সম্মান করি । কিন্তু একজন ফ্রড চালাকি করে মানুষের অসম্মান করবে এটা কি আপনারা চাইছেন ।
সকলে সমস্বরে বললেন, না না আমরা সত্যি ঘটনা জানতে চাই । আপনারা বলুন ।
জয়ন্ত দা বললেন, বেশ কয়েকমাস ধরে এই লোকটি আপনাদের ঠকিয়ে যাচ্ছে ।
ভন্ডের দালালগুলো একে হেল্প করতো ।
একজন বললো, কি করে মাটি ফুঁড়ে জিনিস টা বেরিয়ে এলো ।আমাদের বলুন তারপর আমরা দেখে নেবো ।
জয়ন্ত দা বললেন, না না আইন আপনারা কখনও নিজের হাতে তুলে নেবেন না ।এরজন্য পুলিশ আছেন।
হৈমন্তী দি বলতে শুরু করলেন, এটা একটা হাল্কা প্লাস্টিকের তৈরী শিবলিঙ্গ ।
এবার মাটি দেখুন ঝুরঝরে করা হয়েছে ।
মাটির তলায় দেখুন দশ কেজির বেশি অঙ্কুরিত ছোলা । সবাই মার মার চিৎকার. করছে ।
দিদি বলছেন, আপনারা মন দিয়ে শুনুন । ছোলাগুলি প্রথমে ভিজিয়ে রাখা হয়েছে । তারপর কিছু দিনের মধ্যে ছোলার অঙ্কুরোদ্গম হয় ।
একসঙ্গে এত গুলো ছোলা অঙ্কুর বের হওয়ার সময় মাটির তলায় উর্ধ্ব চাপের সৃষ্টি করে ।ফলে হাল্কা প্লাস্টিকের তৈরী শিবলিঙ্গ ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে ।
এরপর সবাই বুঝতে পারে জলের মত ব্যাপারটি ।পুলিশের নির্দেশ মেনে সবাই চলে যায় । প্রতারক লোকটিকে সদল
বলে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় ।
গ্রামের লোক মহানন্দে জয়ধ্বনি দেয় , ফাইভ জি জিন্দাবাদ ।
পাখিরা ফিরে গেছে আলয়ে