সবার প্রথমে বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন উপাদানের বিশ্লেষণ করা হল । এমা বলল, ” বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশিই আছে। আর আছে একটা অজানা গ্যাস। তবে আমাদের ‘লাইফোমিটার’ জানাচ্ছে, গ্যাসটা মানব শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর নয়। বাতাসে তেমন অজানা ক্ষতিকর ভাইরাস বা জীবাণু নেই।”
এমা জানাল, “স্বাচ্ছন্দে। কোনো গ্যাস মাস্কের প্রয়োজন নেই। এমনকি স্পেসস্যুটও অপ্রয়োজনীয়। “
রোভার থেকে সবাই নামল। প্রত্যেকের হাতেই অত্যাধুনিক অস্ত্র। শঙ্করদের সঙ্গে চলেছে খানচারেক অত্যাধুনিক রোবট। এরাই মূলত স্যাম্পল সংগ্রহ, প্রাথমিক প্রতিঘাত, ডিফেন্স আর ফার্স্ট-অ্যাডের কাজ করবে।
অস্ত্র উঁচিয়ে সবাই গুহাতে প্রবেশ করলো। গুহাটা প্রাকৃতিক। পাহাড়ের কোনো অংশ হতে জলের ধারা বেরিয়ে আসার ফলে এই গুহার সৃষ্টি হয়েছে। জলের ধারণাটি পাথর কাটতে কাটতে একপাশে সরে গেছে, অন্য দিকটায় মার্বেলের মতো মসৃণ মেঝে। হেনরি গুহার তাপমাত্রা পরীক্ষা করে বলল,” গুহাটার ভেতরের তাপমাত্রা ২৫° সেলসিয়াস, একদম স্ট্যাটিক। কিন্তু তা কি করে হয় ক্যাপ্টেন ? খোলামুখ গুহার টেম্পারেচার স্ট্যাটিক হয় কিভাবে ?”
এবার শঙ্করের মাথাতে বিদ্যুৎ খেলে গেল। জলস্রোতে তৈরি প্রাকৃতিক গুহার মেঝে ও দেওয়াল তো কখনোই এত মসৃণ হতে পারে না। ঠিক তখনই রিওর চিৎকার শোনা গেল। সবাই রিওর কাছে গিয়ে দেখল রিও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁপছে। একটা ঝাঁঝালো তরল ছাদ হতে টপ টপ করে রিওর সারা শরীর ঝরে পড়ছে, আর সেই তরলের প্রভাবে শীতল হয়ে যাচ্ছে রিওর শরীর।
বিন্দুমাত্র দেরি না করে রিওকে ওই জায়গা হতে সরিয়ে আনল যোগিন্দর। এরপর রোবোটেরা লেগে গেল শুশ্রূষায়। তরলটা মুছিয়ে কৃত্রিম তাপকারক যন্ত্রের সাহায্যে রিওর শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক করা হল।
রিও এমার দিকে এগিয়ে যায়। এমার কাঁধে হাত রেখে বলে, “কি হয়েছে এমা ?”
এমা বলে, ” অ্যামাইনো অ্যাসিড। এক ধরনের জটিল অ্যামাইনো অ্যাসিড। এই ধরনের যৌগ পৃথিবীর বুকে পাওয়া যায় না। এই তরলটা হল প্রাণের আদি রুপ। আবার এই যৌগ উত্তম শীতলকও।”
শঙ্কর বলল,” এই গুহার মাথার উপরে এই অ্যামাইনো অ্যাসিডের রিজার্ভার আছে। সেখান থেকেই তরলটি ঝরে পড়ছে। কোনো কারনে গুহার ছাদে ফুটো হয়েছে বা করা হয়েছে। “
শঙ্কর গুহার মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে, “হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছ, – ফুটো করা হয়েছে। এই গুহাটা কোনো উন্নত প্রাণীর পরিশ্রমের ফসল”
শঙ্কর তার লেজার লাইটটা গুহার দেওয়ালে একটা বিশেষ জায়গার উপর ফেলল। সেদিকে তাকাতেই সবার চোখ-মুখ বিস্ময়ে ভরে উঠল। দেওয়ালের গায়ে আবছা কিছু লিপি খোদাই করা আছে। লিপিগুলো অজানা কোনো দুর্বোধ্য ভাষার লিপি।
হেনরি বলল,” আমাদের চাপ বেড়ে গেল ক্যাপ্টেন। এখন হতে খুব সাবধানে পা ফেলতে হবে আমাদের।”
এমা বলল, “ঠিক আমাদের গঙ্গাজলের মতো। বহুদিন রেখে দিলেও নষ্ট হবার সম্ভাবনা নেই।”