.
আমি খনা, গঙ্গা মহাকাশযানের নিয়ন্ত্রক সুপার কম্পিউটার। আমাকে নির্মাণ করা হয়েছে এই মহাকাশযানের যাবতীয় কার্যকলাপের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য । এই মহাকাশযানটিকে একটি ছোটোখাটো কৃত্রিম গ্রহ বলতে পারেন। কি নেই এই মহাকাশযানে, – বাগান, লন, নিউক্লিয়ার পাওয়ার জেনারেটর, ফুড প্রসেসিং ইউনিট, লাইব্রেরি, অর্টিলারি ইউনিট আরো কত কি। মোটকথা একজন মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যা কিছু দরকার সবই আছে এই মহাকাশযানে।
.
.
গত সপ্তাহে ‘আন্তর্জাতিক মহাকাশ সর্বেক্ষণ সংস্থা’ বা ‘আই.এস.ও’ এর আধিকারিকরা বৃহস্পতিগ্রহে কিছু সন্দেহজনক গতিবিধি লক্ষ্য করেন। তড়িঘড়ি ডেকে পাঠানো হয় ক্যাপ্টেন শঙ্করকে, শঙ্কর আসতেই তাকে সবকিছু বুঝিয়ে বলা হয়। ঠিক হয় ক্যাপ্টেন শঙ্করের নেতৃত্বে মহাকাশযান গঙ্গাকে পাঠানো হবে বৃহস্পতিতে। প্ল্যানমতো ক্যাপ্টেন শঙ্কর গঙ্গাকে নিয়ে রওনা হয় বৃহস্পতির উদ্দেশ্যে। কিন্তু মঙ্গল পেরোনোর পর ঘটল বিপত্তি। মঙ্গল আর বৃহস্পতির মাঝখানে আছে সুদীর্ঘ অ্যাস্টরয়েড বেল্ট। সেই অ্যাস্টরয়েড বেল্টের মাঝে পড়ে গঙ্গা কন্ট্রোল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ল।
.
..
মহাকাশযানের চিফ ইঞ্জিনিয়ার হেনরি বলল, “ক্যাপ্টেন, আমারা পথ হারিয়েছি। অ্যাস্টরয়েড বেল্টের মধ্যে কোনো একটা অ্যাস্টরয়েড ছিল যেটা নেগেটিভ পার্টিক্যাল দিয়ে তৈরি। সেটাই সংস্পর্শে এসে আমাদের মহাকাশযানের আভ্যন্তরীণ সিস্টেম বিগড়ে গেছে।”
শঙ্কর বলল, ” সিস্টেম সম্পূর্ণ ঠিকঠাক করতে কত সময় লাগবে ?”
.
হেনরি বলল,” সময় লাগবে বস্ । “
শঙ্কর জয়েন্ট স্ক্রিনে চোখ রেখে বলল,” ততক্ষণে আমারা কোথায় পৌঁছাব জানি না। পৃথিবীর সঙ্গেও সম্পর্ক করা যাচ্ছে না। “
অরেঞ্জ জুসে চুমুক দিতে দিতে গঙ্গার একমাত্র বায়োলজিস্ট এমা ব্লাভাটস্কি ককপিটে এসে হাজির। এমা বলল,” অনেকদিন পর একটা ছুটির সূযোগ পেয়েছি, এরকম হারিয়ে যাওয়ায় মজা আছে বৈকি।”
.
.
হেনরি সিস্টেম চেক করতে করতে বলল,” এমা, তুমি একটা বিয়ে করে ফেল । এই মহাকাশে মহাকাশে না বেরিয়ে হেঁসেল সামলাও। তাতে আমাদের সবারই মঙ্গল।”
.
হেনরির কথায় এমার গালদুটো লাল হয়ে উঠল, হাতের অরেঞ্জ জুসটা ছুড়ে মারল হেনরির দিকে। আর তখনই মাঝখানে এসে পড়ল রিও। রিও তাকাহাসি, – গঙ্গা মহাকাশযানের একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। রিওর সামনের দিকের চুল বেয়ে মুখময় গড়িয়ে পড়তে লাগল অরেঞ্জ জুস। রিও জিভ দিয়ে খানিকটা অরেঞ্জ জুস চেটে দেখল, – বেশ সুস্বাদু ! হেনরি হো হো করে হেঁসে উঠল।
.
..
পরিস্থিতি সামাল দিতে এমা বলল, ” আই অ্যাম স্যরি রিও, তোমার মতো মিষ্টি মেয়েকে অরেঞ্জ জুস ছুঁড়ে মারাটা আমার অভিপ্রায় ছিল না। হেনরির জন্য তোমার এই হাল। ও কর্মে কুঁড়ে আর ভোজনে দেড়ে।”
.
রিও বলল, ” আমি জানি ডিয়ার, তবে হেনরি যথেষ্টই ভালোমানুষ। ও কাজে কর্মেও খুব দক্ষ।”
এতক্ষণ ধরে শঙ্কর সবকিছুই লক্ষ্য করছিল, সে বলল,” তোমাদের হয়েছে ? তাহলে আমি কিছু বলি..? “
শঙ্করের কথায় সবাই চুপ করে গেল। শঙ্কর বলল,” একটা খারাপ খবর আছে.. “
হেনরি তৎক্ষণাৎ ছুটে এল শঙ্করের কাছে, বলল,” কি হয়েছে ক্যাপ্টেন ! “
.
.
শঙ্কর বলল,” একটা ওয়ার্মহোল মারফত এখন আমরা অন্য কোনো সৌরজগতে। এই সৌরজগতের কোনো ডাটা আমাদের ডাটাবেসে নেই। “
রিও আর হেনরি তড়িঘড়ি কম্পিউটারের সামনে বসে পড়ল। ডাটাবেসটায় চিরুনিতল্লাসি চালাতে লাগল। আর শঙ্করও পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা শুরু করে দিয়েছে।
বেজার মুখে হেনরি বলল,” সিস্টেম মোটামুটি কন্ট্রোলে চলে এসেছে, আমাদের মেইন সিস্টেমে ডাটা আসতে শুরু করেছে।”
.
.
শঙ্কর বলল, “পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ কার্যত অসম্ভব। এই সোলার সিস্টেম সন্মন্ধে কোনো তথ্য পেলে হেনরি ?”
হেনরি মনিটরে চোখ রেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল, তারপর শঙ্করের দিকে তাকিয়ে বলল,” এই সোলার সিস্টেমে মোট বারোটা গ্রহ। সূর্যের আকার আমাদের সূর্যের দেড়গুন, আর বয়সও অনেক নবীন। বারোটা গ্রহের মধ্যে তিনটে গ্রহে প্রাণের সম্ভাবনা আছে। তবে আমরা যে গ্রহের কাছাকাছি আছি সেই গ্রহের বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের প্রাচুর্য্য আছে।”
.
.
শঙ্কর বলল, “আমরা তাহলে এই গ্রহেই নামব। তবে গঙ্গাকে মহাকাশেই রাখা হবে। আমরা নামব স্পেসবোট নিয়ে। “
প্রসঙ্গত বলে রাখি এই মহাকাশযান আকারে বিশাল। মহাকাশযানের চারপাশে চারটে স্পেসবোট আছে। স্পেসবোটগুলো আগেকার দিনের মহাকাশযানের থেকেও আকারে অনেক বড়। স্পেসবোটগুলো সবসময় পরিচালিত হয় মহাকাশযানের নিয়ন্ত্রক সুপার কম্পিউটার দ্বারা।
.
.
.
… চলবে