.
.
রিও তার ল্যাপটপের সাথে কিকির ডাটাবেস কানেক্ট করে। এক্ষেত্রে ইউএসবির দরকার নেই, কারন কিকি নিজস্ব ওয়াইফাই সিস্টেম চালু করে রেখেছে।
রিওর ডাকে শঙ্কর আর এমাও রিওর কাছে এসে দাঁড়াল। ল্যাপটপের মনিটারে ফুটে উঠল কিকির চোখে ধরাপড়া দৃশ্য। একটা বরফের গুহা হতে বেরিয়ে আসছে কিছু মানুষের মতো প্রাণী, স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না।
রিও কিকির দেখা দৃশ্যের জায়গাটিকে মার্ক করে খনার সিস্টেমে ইনপুট দিল। মহাকাশযানের টেলিস্কোপিক ক্যামেরার মাধ্যমে নিখুঁত ছবি এল এবার।
প্রাণীগুলোকে এবার স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। রিও আরো জুম করল। প্রাণীগুলো দু’পায়ে হাঁটছে, শরীরে পোষাক রয়েছে। দেখতে মানুষের মতো হলেও মানুষ বলে মনে হচ্ছে না। লম্বায় অন্ততঃ বারো হতে চৌদ্দ ফুট হবে। কোমরের বেল্টে বন্দুক জাতীয় কিছু একটা ঝুলছে।
এমা মুখ চেপে অস্পষ্ট উচ্চারণে বলল, ” সর্বনাশ !”
শঙ্কর রিওকে বলল, “রিও, রোভারটা অদৃশ্য করো। বিপদ যেকোনো মুহূর্তে আমাদের উপর আছড়ে পড়তে পারে।”
.
সবাই তাড়াহুড়ো করে রোভারে উঠে গেল। পেছন পেছন হেনরিও দৌড়ে উঠে এল রোভারে। রোভারকে অদৃশ্য করা হল। অদৃশ্য হয়েই রোভার চলতে লাগল। গুহাগুলোর কাছে আসামাত্রই রোভারটি দৃশ্যমান হয়ে গেল।
.
রিও বলল,” আমাদের শিল্ড কাজ করছে না ক্যাপ্টেন। এখানে কাছাকাছি কোথাও জ্যামার লাগানো আছে, যেটার টেকনোলজি আমাদের চেয়ে অনেক উন্নত।”
শঙ্কর রোভারটিকে একটা বিশাল বরফের পাহাড়ের আড়ালে নিয়ে গেল। তারপর ইঞ্জিন বন্ধ করে রোভারের দরজা খুলে দিল। রোভার থেকে নামতে যেতেই সবার চক্ষু চড়কগাছ। গোটা রোভারটি ঘিরে আছে বরাহ গ্রহের মানুষেরা।.
শঙ্করের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে গেল। সে আরো অবাক হল যখন দেখল কিকি বন্দুক হাতে শঙ্করের পেছনে দাঁড়িয়েছে। যান্ত্রিক গলায় কিক বলে উঠল, ” নড়বার চেষ্টা করবেন না ক্যাপ্টেন, আপনি এখন আমাদের হাতে বন্দি।”
শঙ্কর কিছু বলার চেষ্টা করতেই একটা ঘুমপাড়ানিয়া মিষ্টি গানের সুর বাজতে লাগল। শঙ্করের চোখ ভারি হয়ে এল। শশাঙ্ক তলিয়ে যেতে লাগলো একটা নিকষ কালো কুয়োর মধ্যে। কোনো শেষ নেই এই কুয়োর, কি অসহ্য কষ্ট ! উহ ! মাথা ফেটে চৌচির হয়ে যাবে…
একটা গোলাকার হলঘর, হলঘরটির গোটাটাই ফাঁকা। স্বচ্ছ দেওয়াল ছাড়া আর কিছুই নেই ঘরের ভেতর, – শুধু শূন্যতার অনুরণন। এখনো সেই ঘুমপাড়ানিয়া সুরটি বাজছে, তবে খুব হাল্কা স্বরে ও ধীর লয়ে। চেতনা ফিরে আসতেই শঙ্কর অন্যদের ঠেলাঠেলি করে জাগানোর চেষ্টা করে। কয়েকবার ঠেলাঠেলির পর আস্তে আস্তে সবাই জেগে উঠল।.
রিও আতঙ্কিত হয়ে বলল, “আমরা কোথায় ক্যাপ্টেন ! এই ঘরের না আছে দরজা না আছে জানালা, আমরা কোথায় এখন ! “
.
এমা কপালে হাত রেখে কাতরাতে কাতরাতে বলল, “মাথায় খুব যন্ত্রণা করছে। সম্ভবত হিপনোটাইজ করা হয়েছিল আমাদের।”
হেনরির অবস্থাও একইরকম। সে চোখ বন্ধ করে বুড়ো আঙুল আর তর্জনি দিয়ে ভ্রুমধ্যটা টিপে ধরে বলল,” আমারো। কিন্তু কিকি কিভাবে হিপনোটাইজ হল ? – – সে তো যন্ত্র..”
.
শঙ্কর বলল, “আমি যন্ত্রণাটা সামলে নিয়েছি, কিন্তু হেনরির মতোই আমার মনেও অনেক প্রশ্ন দানা বেঁধে আছে। এ প্রশ্নের উত্তর কোথায় পাবো ?”
.
রিওর চোখ গেল ঘরের একটা প্রান্তের দিকে, সে আঙুল উঁচিয়ে চিৎকার করে উঠলো, “ক্যাপ্টেন, ওদিকে দেখুন !! “
সবার চোখ রিওর আঙুল নির্দেশিত জায়গাটির দিকে গেল, দেখল কিকি পড়ে আছে মেঝের উপর আর তার সারা শরীর নীলাভ সাদা বরফে ঢেকে গিয়েছে। যোগিন্দর ছুটে গিয়ে পাঁজাকোলা করে তুলে আনল কিকিকে। তারপর হাত দিয়ে ঘষে ঘষে কিকির শরীরের বরফ গলাতে লাগল। দেখাদেখি হেনরি আর শঙ্করও সাথ দিল যোগিন্দরের । কিছুক্ষণের মধ্যেই কিকি সম্পূর্ণ বরফমুক্ত হল।
রিও কিকির দেহ সরেজমিন তদন্ত করতে লাগল। চুলের কাঁটাটা খুলে সোজা করে নিল রিও। সোজা করা মাত্র চুলের কাঁটার মাথায় লাগানো পাথরটা ব্লিঙ্ক করতে শুরু করে দিল। আসলে এটা একটা মাল্টিপারপাশ টুল।
.
এই টুল বাগ ডিটেক্ট, ডিবাগিং, সার্কিট অ্যানালাইজ হতে শুরু করে মাইক্রো শোল্ডারিং এর কাজও করে। এর সাহায্যে কিকির সার্কিট পরীক্ষা করে দেখে বলল, ” সার্কিটে কোনো গড়বড় নেই। সম্ভবত যে বাগটা ওর শরীরে ছিল সেটা কোনো নেটওয়ার্ক বেসড। নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে যেতেই বাগটা আর নেই।”
এবার রিও তার জুতোর সোলটা হেয়ারপিনটা দিয়ে আড়াআড়ি চিরে দিল। সোলের ভেতর থেকে বেরিয়ে এল একটা মিনি ল্যাপটপ। রিও ল্যাপটপের সাহায্যে কিকির মেইন চিপে কিছু প্রোগ্রামিং করল।
.
তারপর কিকিকে অন করে দিয়ে বলল,” কিকি রেডি ক্যাপ্টেন। আর হেনরি, তোমার ডিভাইসটা আমি অ্যাক্টিভেট করে দিয়েছি। এখন কিকি যেখানে যেখানে যাবে তার আশেপাশের এলাকা শত্রুপক্ষের নজরদারির বাইরে থাকবে।”
.
শঙ্কর বলল, “এখন আমাদের প্রধান কাজ হচ্ছে এই বন্দিশালা হতে বেরিয়ে আসা। চলো সবাই মিলে লেগে পড়ি। তবে তাড়াতাড়ি। বরাহ গ্রহের লোকেরা যখন এই জায়গার কোনো অ্যাকসেস পাবে না তখন সরাসরি আক্রমণ করবে। “
.. চলবে
.
.