সমান্তরাল // রঘুনাথ সাহা
.
সমান্তরাল পথে হেঁটে চলা
দুদিক অসীম প্রসারিত,
মিলবে না হয়তো কোনোদিন
কিন্তু হেঁটে চলা অবিরত…
.
.
জানা অজানার পথ, বাঁক নেয় হঠাৎ মোড়ে-
সাময়িক নিস্তব্ধতা কিংবা নতুন আঙ্গিকে।
বদলায় আশেপাশের বাড়িঘরগুলো,
ফেলে আসা পিছুটান।
তবু এগিয়ে চলা সমান্তরালে,
হেঁটে চলা পাশাপাশি…
যদি কোনোদিন সে পথ মেশে অজানা গভীরে,
পাশাপাশি থাকা হাত দুটো
জড়িয়ে নেয় একে অপরকে,
মেশে যদি বা অসীম সে দুরান্তে,
ভেঙে ফেলে সব বেড়াজাল…
বৃষ্টি ভেজা পায়রারা,
ডানা ঝাঁপটায় নতুন শুরুর নেশায়
রঙিন বিজ্ঞাপন ঢেকে দেয় সাদা কালো বাড়ির মাথাগুলো,
না বলা কথারা জেগে ওঠে ছন্দ হয়ে…
নাহ্ !! সমান্তরাল পথ মেশে না কখনো…
.
.
.
উল্লাস // সীমা চক্রবর্তী
নিম্ন চাপে, মেঘের জপে
বৃষ্টি এলো ধেয়ে
আপন ভুলায়, পথের ধূলায়
দিলো শান্তিবারি ছেয়ে।
প্রেমিক চিত্তে, পুলক নিত্যে
দোলায় খুশির গান
বাজলো বেণু, আলোক রেণু
ভরে গেলো মন প্রাণ।
বিষাদ ভাসে, বৃষ্টির প্রয়াসে
ছন্দ মেলিলো পাখা
কবি সত্ত্বার মন, হলো উন্মন
ভাবাবেগ দিলো দেখা।
উঠিলো জাগি, সোহাগ সোহাগি
হৃদ-মাঝারে আজ
কল্পনার রাগে, ছন্দরা জাগে
ভুলিনু সমস্ত কাজ।
জাগে প্রকৃতি, স্মৃতি বিস্মৃতি
কলমে কাব্যের লহর
সাদা কিছু মেঘ, ঝরিয়ে আবেগ
মুগ্ধ রূপের বহর।
র’চে যায় কবি,অনুমিত ছবি
একা একা বিলাসে
সৃষ্টির সুখে, স্বপ্নিল চোখে
লেখে অনীপ্সিত উল্লাসে।
.
.
.
.
ঝর্না-নদী-সাগর // ডঃ সুহাস রায়
আমার কলম আঁকে প্রকৃতির ছবি, নিখুঁত
পাহাড় বেয়ে নেমে আসা তন্বী ঝরণা অদ্ভুত।
.
.
যেন কান পাতলেই শোনা যাবে তার গান
নাক ভরে প্রশ্বাস নিলেই পাওয়া যাবে ঘ্রাণ।
.
.
কোথাও তিরতির, কোথাও ঝমঝম প্রপাত
যেন ছুঁতে পারলেই ভিজে যাবে আমার হাত।
.
.
পাহাড় ছেড়ে সমতলে নদী হয়ে সে নামে
দুইদিকে ধরা পড়ে থাকে শহরে ও গ্রামে।
.
.
ভোরের বেলায় সূর্য এলে ঝিকমিকিয়ে হাসি
বিকেল বেলায় গলন্ত সোনা রাশি রাশি।
.
.
ছোট ছোট মাছগুলি এঁকে বেঁকে চলে
যেন হাত বাড়ালেই ধরা দেবে বলে।
.
.
দুই পাশে বন জঙ্গল ঘাস শ্যাওলার ভিড়
রাখাল ছেলে বাজায় বাঁশি, স্তব্ধ নদীতীর।
.
.
কোথাও আবার হাট বসেছে, ব্যস্ত জনগণ
কোলাহলে কান পাতা দায়, ক্রেতা অগণন।
.
.
কোথাও মাঝি গান ধরে ভাটিয়ালি সুরে
গানের সুরে মাতাল হয় রসিক দূরে দূরে।
.
.
তন্বী ঝরণা পৃথুলা হয় সাগরপানে ধেয়ে
অভিজ্ঞতায় বয়স বাড়ে মা হয়ে যায় মেয়ে।
.
.
পাথর ভেঙ্গে পলিমাটি সারাটি গায়ে মেখে
সাগরজলে ডুব দেয় সে জীবন খানি দেখে।
.
.
সদাসদ্ বিচার // ড: সুহাস রায়
.
সবাই ছোটে কিসের পানে
সকাল বিকাল রাত্রি না মানে।
আপন পর, সবাই তৎপর
সুযোগ পেলেই গোছাই ঘর।
ভুলেই থাকি, এসবই ফাঁকি
যাওয়ার সময় নেই বেশি বাকি।
এখনও হয়নি বোধ, কোনটি নিত্য
কামিনী কাঞ্চনে এখনও মত্ত।
মন ভ্রমে দিগভ্রমে হয়ে উন্মাদ
বিক্ষিপ্ত চিত্ত হয়ে ক্ষিপ্ত ঘটায় প্রমাদ।
.
.
.
স্কটিশ কবি রবার্ট বার্নসের JohnAnderson, My Jo অবলম্বনে
প্রিয়তমা সুকন্যা আমার // রণেশ রায়
.
.
প্রিয়তমা, সুকন্যা আমার
মনে পড়ে? প্রথম পরিচয় দুজনায়
আলাপ হয়েছিল অজানা ঠিকানায়
হৃদয়ের অন্তরালে কোন এক গুহায়।
চড়াই উৎরাই ধরে পেরিয়েছি পর্বতমালা
ঝর্ণার স্রোত বেয়ে মিলেছি নদীর ধারায়
সমুদ্র মোহনায় বয়ে গেছি কল কল,
তোমার সে বাহু বন্ধন আমার প্রেমের শৃঙ্খল,
তোমার মিশকালো কুঞ্চিত ভুরু রোমাঞ্চ আমার,
কিন্তু আজ! সাড়া দেয় না ভুরু তোমার
ইশারায় ডাকে না সে আমায়,
বরফের শীতলতা তোমার বাহু বন্ধনে,
তবু আশীর্বাদ ঝরে তোমার হিমালো চোখে,
সুকন্যা, তুমি যে আনন্দনিকেতন আমার
তুমি দেখা দাও আমাকে আবার।
সুকন্যা আমার আনন্দধারা,
চড়াই উৎরাই ধরে পেরিয়েছি পর্বত চূড়া
মুক্তির গান গেয়ে
মিলেছি নদীতে
ঝর্ণার স্রোত বেয়ে
কল কল রবে পৌঁছেছি সমুদ্র মোহনায়
কত না আনন্দ মুখর দিন কেটেছে দুজনায়,
একের সুখে বেঁচেছি অপরে।
কিন্তু আজ! দুজনে ছিন্নভিন্ন দুদিকে,
তাও হাতে হাত ধরে চলি দুজনে
চলি মোরা একান্তে বিজন বিহনে
পাহাড়ের পাদদেশে আমাদের বাসর শয্যায়
প্রিয়তমা সুকন্যা, আমরা বাঁচি আমাদের ভাবনায়।
সুখমুখর আমাদের সে প্রাচীন পরিচয়
সে কি ভোলা যায়!
ফিরে আসে সুখস্বপ্ন বার বার
আমাদের জীবনের আঙিনায়
বিশ্বাসে বিদগ্ধ চেতনা আমার
এসো হাতে হাত রাখি দুজনায়।
.
.
.
.