
.
.
কবিতা লিখবো বললেই হলো ,সোজা কথা নাকি এখনো তীব্র দহন জ্বালায় জ্বলে পুড়ে মরি| দিনকয়েক চুপ করে বসে আছি,মনের ভেতর নানারকম প্রশ্নের উঁকিঝুঁকি,জীবনের শেষ অঙ্কে কেনই বা এভাবে ফিরে এলাম ?
.
.
নাই বা ফিরে আসতাম, সকলকে জানানোর কি কোন প্রয়োজন ছিলো আমি দু এক ছত্র লেখালেখি করতে ভালোবাসি তবে সেগুলো কবিতা নয় শুধু শব্দজাল……আসল কবিতা আমার বুকের মধ্যে জমে থাকে |এগুলো তো কোনদিনই জানাতে পারবো না তাহলে ফিরে আসার কি দরকার ছিলো.আমার..?
.
.
বেশ তো ভেসে ভেসে সময়ের ভেলায় ভেসে যাচ্ছিলাম,আর কিছুদিন এভাবেই নদী পার করে দিলে বুঝি ভালোই হতো,অদম্য গোপন ইচ্ছাটা নাই বা প্রকাশ করতাম, কি এমন ক্ষতি হতো ?
আমি লিখি বা না লিখি জগতের কোন ক্ষতি হবে না, আত্মক্ষরণগুলো নিজস্ব |
কবিতাকে ভালোবাসার শুরু কৈশরে,
কবিতাকে প্রথম খাতায় আঁকার চেষ্টা |সত্তর থেকে পঁচাত্তর যেগুলি এঁকেছি সেগুলিকে আধুনিক কবিতা বলতে দ্বিধা বোধ করি,শুধু শব্দজাল….
কবিতাতো অতি আধুনিকা মেয়ে….,কবিতাকে হয়তো ঠিক মতো ছন্দ ফুলে সাজিয়ে তুলতে পারি নাই
কবিতা অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে,কি যে করি….
কৈশরবেলায় পড়াশুনার ক্ষতি করে অদম্য মানসিক ইচ্ছায় কোঠাঘরে লুকিয়ে লুকিয়ে
হিজিবিজি অনেক লিখেছিলাম ,কবিতাকে প্রেমিকা ভেবে অনেক মালা গেঁথেছিলাম পরাতে পারিনি
সুরে বেসুরে অনেক প্রেম পত্র দিয়ে ব্যর্থ প্রেমিক ,তবুও অভিমান ভাঙ্গেনি ,.
.
তাইতো কবিতার পিছনে পিছনে প্রেমিকের মতো শুধু অনুসরণ ,পড়াশুনা শিকেয় তুলে কবিতাকে ফুল পাঠানোর এতো আয়োজন |পাতার পর পাতা প্রেম বিরহ নিয়ে কৈশরের কবিতাগুলি আজ নিজেই সেগুলিকে আধুনিক কবিতা রূপে মেনে নিতে পারছি কই,?প্রেম কি বৃথা হলো তবে..শব্দজালে জড়িয়ে পড়লাম নাকি..
এখন খুব কষ্ট হয়,কবিতাকে না বুঝে,কবিতার স্বভাব চরিত্র না জেনে পিছন পিছন বৃথায় অনুসরন ! কবিতাকে ছুঁতেও না পারা সে সময়ের লেখা গুলোর জন্য মনটা ভার| যদিও কালের প্রবাহে অবহেলায় অধিকাংশ লেখা নষ্ট হওয়ার কষ্টটা কিছুটা লাঘব হলেও হয়েছে,
আসলে পৃথিবীর সকল মানুষের মতো আমিও তো একটা পৃথক মন নিয়ে পৃথিবীতে কিছুটা সময় কাটাবো বলেই এসেছি |কৈশরে কবিতা লেখার গভীর বাসনা জেগেছিলো , কবিতা লিখলে কি কোন ক্ষতি হয় এ কথাটা ভাবতেও পারিনি,কবিতাকে ফুল ভেবেছি ,প্রেমিকা ভেবেছি,কবিতাকে প্রেম নিবেদন করেছি
আমার কবিতা চর্চায় আমার বাড়ির কোন সায় ছিলো না সায় না দেওয়াটাই স্বাভাবিক| আমার উপর অনেক উচ্চাশা ছিলো , উচ্চাশাটা আমি সেভাবে পূরন করতে পারিনি,কবিতা লেখার চেষ্টায় সময় কাটিয়েছি,বাড়ির বড়দের মুখে শুনেছি,কবিতা লিখে লিখে আমি নাকি পড়াশোনাটা নষ্ট করেছি |
কবিতা লিখবো বললেই হলো,কবিতা লিখা সহজ নয় , চরাচরের ভালো মন্দ দুঃখ কষ্টের অনুভবগুলো মনের আয়নায় প্রতিবিম্ব হয়ে স্বতঃস্ফূর্ত বর্ণমালা নিয়ে ছন্দজালে ধরা দিবে তবেই না আমি লিখবো,তবেই না কবিতার হাতে প্রেমের ফুল তুলে দিতে পারবো…..
আর
কবিতাকে ভালোবাসবোই বা কি করে
ভালোবাসাটা সোজা নাকি,বিশাল একটা জালের ভেতর জড়িয়ে যাচ্ছি ক্রমশঃ,আর তাকে ঢাকা দিচ্ছে একটার পর একটা জাল |
এর নাম সমাজ ,কাদার মতো কুসংস্কার ….
তাই কবিতা ধরা দেয় কম, লেখাগুলো স্লোগান,কথপোকথন হয়ে যায়
তবুও
ঊনিশশো ছিয়াত্তরে কলেজ জীবনের শুরু, সেই প্রথম আধুনিক কবিতাকে দেখলাম,সেই প্রথম কবিতার শরীর ছুঁয়ে ফেললাম,তারপর কবিতার প্রেমে ভেসে গেছি,পড়াশোনাটা গৌন, কবিতার সাথে জীবন,এম্নিভাবে চলতে চলতে শেষমেষ
ঊনিশশো আশির শেষাশেষি একটা অঘটন,আমি চুরমার হয়ে গেলাম,নিজেকে জোড়া লাগাতে পারলাম না |মনটার কোন ঠিক ঠিকানা ছিলোনা
হতাশায় ভেবেছি কি হবে আর কবিতা লিখে অথচ শেষমেষ কবিতায় আশ্রয় খুঁজে নিয়েছি ,কবিতা পড়ে শান্তি খুঁজে পেয়েছি ,কবিতা লেখার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছি,আজ ও …..সেভাবেই লিখে চলি…..,মনের কষ্ট গুলো লাঘব করার জন্য কবিতাকে খুঁজি,কবিতা হৃদয়ে ধরা দেয়…..ছন্দ সুরে ধরা যায় না যদিও…লিখতে বসলেই শব্দজালে জড়িয়ে পড়ি..
,আমার বাউন্ডুলে স্বভাব ,প্রেম ,এবং সেই সময়ের কবিতা লেখালেখি ,লিটল ম্যাগাজিনে লেখাপাঠানো, সাময়িক পত্রিকা সম্পাদনা , ঐসময়ে
রোজগারের কোন ঠিক ঠিকানাই ছিলো না,বলতে গেলে ঐ সময় আমি কবিতা পাগল ছিলাম,পড়াশোনাটাকেউ ভুলে গেছলাম কবিতা কবিতা করে,
কি করিনি সেসময়, আজ জীবন সায়াহ্নে বসে ভাবি
আমি কি সত্যি পাগল ছিলাম,তাই আমার বাড়ি একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো,যার ফলে সারাজীবন
তিল তিল করে ক্ষয়ে গিয়েছি……,টুকরো টুকরো করে ভেঙ্গে গিয়েছি..নিজেকে নিজেই খুঁজে পাইনা..আর
তারপরেও
কবিতার প্রতি প্রেম ধিকি ধিকি জ্বলেছে তুষের আগুনের মতো …
আর এখনতো দীর্ঘ সময়টাকে লুকিয়ে রেখে কবিতাকে খুঁজতে বেরিয়েছি , তার একমাত্র কারণ কৈশর যৌবণ যে কবিতার পিছন পিছন ছুটতে ছুটতে আমি আমাকে নিঃস্ব করেছিলাম এতো বছর পর আধুনিকা কবিতা কেমন আছে তার সন্ধান করবো না !,এখনো এমনএকটিও রাত আসেনি যে কবিতা আমাকে নিশিডাকের মতো মাঝরাতে ডাকেনি…মাঝরাতে উঠে বসেছি..
কবিতা মননে এসেছে কাগজে বসাতে পারিনি ,
সংসারের বাধা এসেছে লিখতেই পারিনি
হাজার বার ভেবেছি ঘর সংসার কাজটা একটু খানি হাল্কা হলেই কবিতার খোঁজে বেরিয়ে পড়বো,আবার কবিতায় ফিরে আসবো,এভাবে বছরের পর বছর গড়িয়েছে ,
সাংসারিক টানাপোড়নে জর্জরিত হয়েছি শুধু,মনের বাসনা বাসনাই থেকে গেছে, কবিতার কাছাকাছি পৌঁছতে চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি,কবিতা লিখার ইচ্ছা প্রকাশে
বাড়িতে অশান্তি কম হয় নি …আগে রোজগার না আগে কবিতা , শ্রীমতি সুন্দরীকেউ বোঝাতে অক্ষম হয়েছি, তিলে তিলে দগ্ধ হয়েছে মন ,মনটাকে শেষ পর্যন্ত রোজগারের পেছনে ছুটিয়েছি ,এমন অনেক কাজ করেছি মন সায় দেয়নি,স্ব উপার্জন কত কষ্টদায়ক সারা জীবনটা ধরে বুঝেছি |টানাপোড়ন..শুধু টানাপোড়ন..
কবিতা লেখার জন্যপরিবার থেকে সময় বের করতে পারিনি
,ঊনিশশো উনআশি মাঝামাঝি থেকে দুহাজার ঊনিশের ৮ই এপ্রিল পর্যন্ত একটা চাপা কষ্ট বুকে বাসা বেঁধে ছিলো,অবশেষে কষ্টটাকে মুক্ত করার জন্য শেষমেষ সাহিত্য স্মৃতি, ই -পত্রিকাতে হাতেখড়ি নেওয়া ঘসাফোনে লুকিয়ে একটা লেখা পাঠিয়েছিলাম,সম্পাদক ওপত্রিকার পরিচালকমন্ডলীকে অজস্র ধন্যবাদ উনাদের সহযোগিতায় ধিকিধিকি তুষের আগুনটা এই একষট্টির মাঝামাঝি সামান্য খানি হলেও জ্বলে উঠলো জানিনা কতদিন স্থায়িত্ব …. ..তবুও
আজ আমার ফিরে আসার পথটুকুদেখিয়ে দেওয়ার জন্য,ওনাদের ঋণ স্বীকার করতে দ্বিধা নেই এখনতো বর্তমান সময়ের প্রতিফলণ প্রতিসরণ দেখছি ,কাজের ফাঁকে ফাঁকে ফেসবুক থেকে কবিতার খোঁজ করছি ,কবিতার প্রেমে মজে আছি,সময় খুব কম,লিখছি কম,পড়ছি বেশী বেশী,
অনেক কিছু শেখার বাকি,ফেসবুক
ধীরে ধীরে শিখে নিচ্ছি |
শিখতে বসে নানা বিপত্তির কথা বুঝতে পারছি,
একষট্টিটা বছরের খোলস ছেড়ে সরিসৃপের মতো উঁকি মারছি আকাশে আকাশে ,ডাইনোসেরাসরা যেভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে জানি কবিতার খোঁজ করতে করতে আমিও বিলুপ্ত হবো|হয়তো এ জীবনের শেষ অধ্যায়ে এসে কবিতার ছায়া টুকু গায়ে মেখে নেবো,কেননা কবিতা কবিতা করে সারাজীবনটায় হা-পিত্যেস করে যাচ্ছি | কবিতা মায়ামৃগ |চোখের নিমেষে হারিয়ে ফেলছি…হারিয়ে যাচ্ছে…
মনের ভেতর,স্বপনে জাগরণে কবিতার অস্তিত্ব উপলব্ধি করতে পারছি অথচ ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না| কেন না আমি
অতোবড়ো ভাষাবিদ নই ,তাই কবিতাকে ধরাতো দূরের কথা
|কবিতা আমার জীবনে অধরা হয়েই থাকলো
মানসিক শান্তির জন্য কবিতা পড়ি,পড়ে যাবো ,
মনের আবেগে দু-চারটে শব্দজাল বুনেছি ..বুনবো,বুনে যাবো
নিচের শব্দজালটি বুনলাম…
কবিতা // অপূর্ব শীট. /১৪,৬,২০১৯,
১ |
চাঁদেরা ডুবে ,সূর্যেরাও ডুবে,শুকতারারা ডুবে কিনা জানা নেই ,জানিও না..
আসলে ভেবেও দেখিনি শুকতারারা কোনদিন ডুবে যেতে পারে কিনা,
ডুবে গ্যাছে কি না !
ভোররাতে মুখপুড়িয়ে বাগানে বসে দেখলাম তুমি ধ্রুবতারা হয়ে জ্বলজ্বল করছো আকাশে বাতাসে , তোমার মৃত্যু নেই….
তোমাকে দেখে আমি মহাসমুদ্রে ডলফিনের মতো নেচে উঠি আবার
তোমাকে দেখে সঠিক দিশায় ফিরে আসি …
ফিরে আসি শিউলির তলে ভোরবেলায়
কান্নায় কান্নায় ঝরাফুলের সাথে ঝরে পড়ি….
.
২ | প্রিয়তমা. // অপূর্ব শীট/১৪,৬,২০১৯,
.
.
পাথর ঘসে ঘসে আগুন প্রথম জ্বলেছিলো জানি,এখনো জ্বলে যেতে পারে
কত ঘাস পাথর গুহার ভেতর আকাঙ্খাকে পোড়াবে বলে জড়ো হয়েছিলো…
শুয়েছিলো রাগ অনুরাগ সারারাত শরীরে শরীরে
ব্যথাগুলো স্পর্শ করে নীল ভালোবাসায়…
ভালোবাসা চুরি করে চাঁদ,হেসে চলে গেলো
পরিযায়ী পাখির দেহ থেকে খসে গেলো পালক ,যাপন বেলার ভুল,
আমি ভুলিনি…তোমায়..
ভালোবাসা তাই ভাসতে ভাসতে ভাসমান মেঘ হলো ,জল হলো ..
বৃষ্টির পর মাটিতে শোষণ হয়ে গেলো
বতরে বীজতলা হলো ,বপন হলো জমিতে জমিতে…..
একুশের বয়সটাকে ছায়ায় স্মৃতিতে জড়িয়ে ধরি
তাই বলে অসময়ে
পাহাড়ে নদীর স্রোত,স্রোতস্বিনী তুমি …..
বলো কোন স্রোতে ফিরে যাবো,কোন গভীরে বাঁধা আছে তোমার নৌকা,চিহ্ন, প্রেম পারাপার রত্নহার…কোথায় নিয়ে যেতে চাও…এই অবেলায়..
কিছুই বুঝি না…
যাপন যন্ত্রনা নিয়ে বুনো হাঁস,আকাশে আকাশে ঘুরি
শরাঘাত কেন করো…..