.
.
এসময় তুমি কার গান গাও, দিগন্তে কার ছবি আঁকো ,কোন চিত্রকর তুমি ? ভালোবাসা বুঝি নষ্ট হয়ে ঝরে !ক্ষতগুলো ঢেকে রেখে বিক্ষত করো কার আঙিনা ?
.
.
পথ হাঁটি,হাঁটি পথ. শৈশবের ম্লান স্মৃতি
ততোধিক ম্লান হয়ে যায়…
খেলাশালে ভাত খেতে খেতে ঠোঁটের আগায় শব্দ করি, … চক্…চক্ ..চক্..
.
.
” তোকে আর দুটি দি ই..? “দে আর দুটি দে..” ছোটো ছোটো সাদা কুচিপাথরের ভাত, পাথরের মাছ ,লাল মাটির ঝোল,পুটুস পাতার শাক,আরো কত সব সব্জি তরি তরকারি…
কাঁঠাল পাতায় সাজানো……কচি .কচি আঙ্গুলের ছোঁয়ায় শোয়ানো আছে পুতুল গুলো |
পিসীমার হাতের তৈরী, মাটির পুতুল |
.
.
পুতুলগুলোর জামা কাপড় পরানোর তোড়জোড় ,শাঁখ বাজাও,
পুতুলের বিয়ে |
দিদিদের সাথে উলুধ্বনি দিচ্ছি…
শৈশব তুমি স্থির বসে আছো, বসেই থাকো
মগজের ভেতর……
.
.
এখন তো
অবেলার আকাশ…
বিষন্নতাগুলো ঢাকা দিয়ে রাখি ,স্বপ্নগুলি ঝুলিয়ে দিই আকাঙ্খার দেওয়ালে,হাত ফস্কে হারিয়ে না যায় |হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব ,
বিস্মৃত স্মৃতি,
.ফতনাটুকু ভেসে উঠছে জলে, ছেঁড়া সুতোয় ,
অসীম অতলে পিচ্ছল মাছের মতো শৈশব..
ভাঙা ছিপ নিয়ে বসে আছি |
.
.
.
.
মন ভালো নেই |আসলে মনে মেঘ জমছে ,
একটা মেঘ, ঘন কালো হয়ে সব কিছু ঢেকে দিতে চাইছে,কি আর করা যায়,উত্তরাধিকার সূত্রে স্থাবর সম্পত্তির জট,
অফিসে অফিসে ঘুরতে হবে…
মরার আগে নাম পত্তন করতে হবে,
এই এক জ্বালা….
তিন চার বছর ওফিসগুলোতে গিয়ে গিয়ে
জুতোর শুকতলা ক্ষয়ে গ্যাছে..
সি.এস ,আর.এস, এল.আর,..হাল,সাবেক ,মৌজা ,দাগ ,খতিয়ান,পরিমাণ, কাঠা,ছটাক,গন্ডা,ডেসিমেল,একর নিয়ে হারিয়ে যাচ্ছি |
এভাবেই তো ফুরিয়ে আসছি..
.
.
সময়ে অসময়ে. শ্রীমতির নীতিবাক্যগুলি ভেসে ভেসে আসছে…..
“কবিতা গল্প লেখার অনেক সময় পাবে,আগে যেটুকু জমি জায়গা আছে শরিকদের সাথে ভাগ করো ,কাগজ পত্র ঠিক করো,বিক্রি করো ,বাড়ি করো,খাও দাও,….শান্তিতে ঘুমাও.কয়েকটা বছর বাঁচো..ফালতু কবিতা গল্প করে করে এখন এই বয়সে সময় নষ্ট করো না |
আর শোনো শুধু অফিসের আঁকাআঁকির কাজটা যতদিন থাকে কোরবে |
.
.
মাঠে ঘাটে,লোকের বাড়িতে,উঠোনে,একতলায়,দোতলায় ,খালে ,বিলে,খোঁন্দরে, ফিতা, খাতা, পেনসিল, কাগজ ,কম্পাস নিয়ে কোনোরকম ঘোরাঘুরি নয় | অন্য লোকের ভাগ বাঁটোয়ারার নক্সা,ব্লু-প্রিন্ট করার কি দরকার ? বয়স হয়েছে
বন্ধ করো এসব | নিজেরটা ভাবো…এবার |
‘ঘরের কাঠ উইয়ে খাচ্ছে,আর কাঠ কুড়োতে বনকে যাচ্ছো’..জমি গুলোয় তো এখন চাষবাস হয়না,কতদিন দেখভাল কোরবে ? বিক্রি করার ব্যবস্থা টুকু করো |ছেলে দুটোর মাথায় ঝামেলাগুলো রেখে দিচ্ছো কেন ? ঝামেলা মেটাও আগে
.
.
তার পর না হয় যত পারো কবিতা লিখো, পাতার পর পাতা |ফেসবুক করো, কিছু বলবো না | বত্রিশটা বছর ধরে আমাদের সমস্যার কথাটা ভাবলেও না,আমাদের পথে বসিয়ে দিয়ে যাবে দেখছি |
.ভাগ্যিস হালটা.ধরেছিলাম তাই ছেলে দুটো কিছুটা মানুষ হলো ,তোমার কোন হুস আছে নাকি ? ছেলেদের কথা, ঘরের কথা ভেবেছো কোনদিন ? টাকা রোজগার করলেই হয় না……গুছোতে জানতে হয় |এতোদিনেও একটা কাজও গুছিয়ে করতে পারোনি,তোমার দ্বারা কিছু হবে না |”
.
.
তবে আমি কি?আমি কি অসাংসারিক?
সারাদিন শুধু কিচির মিচির…কিচির মিচির,কান ঝালাপালা…
কথাগুলো শুনি আর ভাবি ,
শুনতে শুনতে ,ভাবতে ভাবতে ,রাত্রিতে কবিতার কাছে যাই ,কবিতার সাথে কথা বলি |জামগাছ আমগাছের সাথে কথা বলি,রাত্রির সাথে কথা বলি,
.
.
জীর্ণ খাতাগুলি খুলি,কবিতাও মুচকি হাসে…বলে ‘যাও হাল ধরো সংসারের…..ফুল দিতে হবে না আমাকে তোমায়.’..আমি বলি এই অবেলাতেও
তোমার কাছে নিশ্চিন্তে বসতে পাবো না..একটু মন খুলে ভালোবাসতে পারবো না,বাঁচবো কি করে ? ….অসহায় ..ভেঙ্গে পড়ি…
.
.
কোনো কোনো দিন,ভাবি পাগলামিটা ছেড়ে দেবো,পুটলি কোরে বেঁধে সমস্ত খাতা পত্তর,যক্ষের ধন
গুলোকে ভাসিয়ে দেবো দ্বারকেশ্বরে..
কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই করতে পারি না
.
.
চুপচাপ বসে বসে কবিতাকে দেখি,স্পর্শ করি,সারা শরীরে কবিতাকে জড়িয়ে রাখি..
ছন্নছাড়া জীবনে সঠিক কোন কিছু করতে না পারার যন্ত্রনা কুরে কুরে খায়..ক্রমশ শেষবিন্দুতে পৌঁছে যাচ্ছি….
এখনতো
কাগজে অজস্র আঁকি বুঁকি তার পর কাটাকুটি ,কোনো কোনদিন একটা রূপ দিই ,ভাসিয়ে দিই, অর্ন্তজালে
দেখি এতো ফুল নয় শুধু শব্দজাল |আমি কবি নই | বিলক্ষণ টের পাই |
তবুও মননে
ফুরিয়ে যাবার গানগুলো গাইতে হবে যে এবার ..
বিকেলের বাতাসে ভেলাখানি ভাসিয়ে রাখি
আঁধার এলো বুঝি,
.
.
সজনার ডালে ডালে দোয়েলের নাচানাচি,
এতো সুন্দর শিস দ্যায় পাখি টা..
চুপচাপ শুনি,
ভালোবাসি পাখিটাকে…
.
.
কবে যেন প্রথম ভালোবেসেছিলেম পাখিটাকে
আজ আর মনে নেই, মনের আবরণও নেই
পাখির পালক,শূন্যতার স্মৃতি….
.
.
.
.
ক্ষরণ নেই
ক্ষয়ে যাচ্ছে আকাশ,গোধূলির চোখে
বিষাদের জল আর
মেঘের ব্যথা নিয়ে মরুভূমির উষর প্রান্তরে
স্বপ্নের সহচরী চেয়ে নিচ্ছে পরকীয়া …
ভালোবাসা পলাতক উড়ে যাচ্ছে..
আলো তে ঢাকা নিকষ অন্ধকার
প্রদীপের তলায় লুকিয়ে
জাবর কাটে রাত |
.
.
ভালোবাসবো ভেবে ভেবে জং ধরে গ্যালো
বিছানার ঘুমের গাদায় সূঁচ খুঁজে খুঁজে
বাসনার রাত হলো শেষ |
.
.
অসম্ভব আঘাত নিয়ে স্মৃতিরা
ভালোবাসার কফিনটা বয়ে নিয়ে চলেছে
পৃথিবীর গভীরে যেখানে জলের ধারা নেই
সভ্যতার শিকল পরে টিয়ারা নকল করছে না
মানুষের স্বর,উড়ে যাবে শিকল ছিঁড়ে….
তিক্ততায় শৈপ্লিক ভাবনায় জারিত স্বপ্ন
রসাতলে | রসনাগুলো বিজারিত …বদ্ধ..উন্মাদ…
.
.
ক্ষরণ নেই |
কি আর করি ,গ্রহণ চারিদিকে, মুঠোমুঠো
অবগুন্ঠন, বিলক্ষণ ভাঁওতাবাজি
দেশপ্রেম দেশপ্রেম ,ভালোবাসা ভালোবাসা ,সারা দুনিয়াটায় ,
অথচ
ভালোবাসার
মানবিকতার সহজ পাঠ নেই…..
পরকীয়ায় বাঁচার আস্বাদ টুকু চেয়ে নিচ্ছি |
উপেক্ষণীয় নয়,সমর্থন ও সমর্পণ
আমৃত্যু……
হাট কোরে খুলে দিচ্ছি বুক
দেখার ইচ্ছে হলে সবাই দেখুক
আমি তো আমার নই |
শুধু …..শূন্যতার….
.
.