লুপ্ত পেশা (মাদারির খেলা)

You are currently viewing লুপ্ত পেশা (মাদারির খেলা)

লুপ্ত পেশা (মাদারির খেলা)

“এ ডালের বাঁদরি
উ ডালকে যায়।
ডালে ডালে বাঁদরি
পিয়াল পাকা খায়। ”

কত গুলো চেনা জানা পশু পাখি সরীসৃপ এক সময় প্রান্তিক মানুষের পেশার সহায়ক হয়ে রুজি রোজগারের উপায় করে ছিল আবহমান কোল থেকে। সেই ভাবে হয়তো সমাজে বংশ পরম্পরায় সম্প্রদায় তৈরি হয়েছিল। যেমন বেদে, বেদিয়া,বা বেদ্যা নাম যাই বলি না কেন।

পরিবেশ থেকে পশুপাখির সংখ্যা দিন দিন কমে আসায় একদিকে যেমন জীবজগতের লুপ্ত প্রায় প্রাণী গুলোর সংরক্ষণের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে তেমনি পশু পাখি নিয়ে যাদের পেশা ছিল সেই সব পেশা ও পেশার মানুষ গুলো সমাজ থেকে হারিয়ে গেছে বা যাবে।

কোথাও কোথাও অবৈধ ভাবে দু একজনকে এখনও দেখা যাবে এই সব পেশায় আঁকড়ে রয়েছে । তবে বর্তমানে বাজার মূল্যের আক্রায় এই সব পেশায় দিন চলে না। আর মানুষের শিক্ষার আলো পাওয়ায় বুজরুকি করে লোক ঠকানোর পেশা আর চলে না। অদূর ভবিষ্যতে আর হয়তো দেখতে পাবো না আর তাদের।

এরকম একটা খেলা মাদারির খেলা। এছাড়া ভাল্লুক নাচ, হাতি, উট দেখিয়ে ধান আদায়। সাপ খেলা দেখিয়ে বেদ্যা সম্প্রদায়ের বংশগত পেশায় রুজির টান। কাক চরিত্র, টিয়া পাখির ভাগ্য গণনা, সার্কাসে পশুদের বিভিন্ন মনোরঞ্জনের খেলা।

এক সময় জমিতে ধান উঠলে পাড়ায় পাড়ায় হাতি উট আসতো ধান আদায় করে ঝোলা ভর্তি করতো। ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের হাতিতে – উটে চাপিয়ে পয়সা নিত। এতে করে ছোট ছেলে মেয়েদের পশুটি চিনতে সহায়ক হোত বইকি।

কিছু কুপ্রথার জন্ম দিয়ে ছিল মনের অন্তরালে । কারণ সেই সময় পাড়ায় হাতি এলে গৃহস্থ তার বিষ্ঠা সংগ্রহ করে রাখত। শুনেছি আমাকেও হাতির বিষ্ঠা মাখানো হয়েছিল। যাতে স্বাস্থ্যবান হই।

ডুগ ডুগি নামে ছোট্ট একটা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে পাড়ায় পাড়ায় আসত। এখন ডুগডুগি কি ? ছবিতেই বোঝাতে হয়। তা়র শব্দ শুনা যাবে না।

ভাল্লুক বা বাঁদর নাচ দেখানোর পেশাদার ব্যক্তিরা।
ভালকা জ্বর বা রাতের বেলা হঠাৎ গা গরম হবে না বলে ভালুকের পিঠি চাপতে বলত। ভালুকের লোম মাদুলিতে পুরে দিত। সমাজে তখন সরল মানুষজন এই সব মানুষের কথায় বিশ্বাস রেখে খরিদ করত।

যারা ভালুকের নাচ দেখাতো তারা ভাল্লুক কে উদ্দেশ্য করে এই কথা বলত যেমন – –

” বনে মরা মানুষ পেলে খাবি ?”

উত্তরে ভালুকের কেবল মাথা নাড়িয়ে বলত না না না – – –

” জীবন্ত মানুষ পেলে কেমন করে খাবি ?”

উত্তরে ভালুকের মুখ নীচে – উপরে করলে ভালুকের মালিককে মুখে বলতে শুনেছি – –

” গপা গপ্ গপা গপ্ , লপা লপ্ লপা লপ্।”

যারা বাঁদরের খেলা দেখাত তারা বলত – –

বাঁদরি বিয়ের পর শুশ্বর বাড়ি কি করে যাবি
মাথায় ঘোমটা নিয়ে দেখিয়ে দিত।

কাক ও টিয়া পাখি ঠোঁটে টানা কাগুজী ভাগ্য পরীক্ষা শহরে এখনও দেখা যায়। কিছুদিন আগে হাওড়ায় দেখা পেলাম এক গণক কে । তবে মানুষ সচেতন হওয়ায় তাদের বাজার নেই।

বৈদ্যনাথ ধাম থেকে আগত বলে কপালে সিঁদুর লাগানো, শিং এ তেল বুলানো বিশেষ ঝটা হওয়া ব্যাতিক্রমি গাই, গরু, বাছুর, ষাঁড় অনেক বার পাড়ায় পাড়ায় আসতে দেখেছি। তারাও মাদুলি , তাবীজ, মালা বিক্রি করত।

এখনো কোন কোন সময় সাপুড়েরা আসে। বিষধর সাপ ধরে ও মাদুলি কবজ দিয়ে সহজ সরল মানুষ পেলে ঠকাতে ছাড়ে না।

মাঝে সাজে সাজানো এক্কা গাড়ি পথে চলতে দেখছি। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ঘোড়ার নাল মাদুলি কবজ বিক্রি করে মানুষের ভাগ্য ফেরানো। এদের কালো ঘোড়ার নাল বিশেষ সমাদৃত।

দীঘার সৈকতে সাজানো ঘোড়া, উটে চাপিয়ে ছবি তোলা বা সৈকতে বেড়ানোর জন্য কয়েকটা পশুর করুণ দশা এখনও নজরে পড়ে।

নেপাল – ভুটানের শীতের দেশে চমরী গাই এর বাহন হয়ে অনেকেই ছবি তুলে।
মানুষ পেটের তাগিদে পেশা বদলাতে এক সময় বাধ্য হবেই।
শেষে একটা কথাই বলতে হয় –
” বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃকোড়ে । ”

ছবি – নিজ ক্যামেরা থেকে।
যোগাযোগ না 9932380618

Screenshot_20230319-220616_Facebook.jpg

বিকাশ চন্দ্র মণ্ডল

Leave a Reply