বিপন্ন শৈশব – শ্যামল কুমার রায়, সহ শিক্ষক,

শ্যামল কুমার রায়

বিপন্ন শৈশব – শ্যামল কুমার রায়, সহ শিক্ষক,

সভ্যতার শিখরে অধিষ্ঠিত আমরা, 
সেই সভ্যতায় বিপন্ন শিশুরা ।
কম বেশি সব শিশুই বিপন্ন আজ।
সব শিশুর বিপন্ন শৈশবের ধরন এক নয়,
খোলা আকাশের নীচে দিন গুজরান করে যে শিশু, 
শৈশব বিপন্ন আজ তারও ।
খাদ্যের অভাবে ভিক্ষা করে সেও, 
ভালোভাবে বাঁচতে কার না ইচ্ছে করে , 
ইচ্ছে পূরণের তরে অন্ধকার জগতে সেও ঢুকে পরে ।
কোথাও বা ব্লেড মাস্টার, কোথাও পকেটমার, শৈশবের ঐ কাঁচা বয়সেই নেশায় বিভোর ।
কোথাও বা ডেনড্রাইট , কোথাও গাঁজার ছিলিম।কোথাও বা মেয়ে শিশু লালসার শিকার ।
অপরিণত কিশোরীও আজ ভোগের সামগ্রী, 
লালসার শিকার শুধু বাইরেই নয়, 
গৃহকোণে সেও আজ যৌনতার শিকার। 
বিদ্যালয় শিক্ষা, পুষ্টিকর খাদ্য সবই আজ তার জন্য বরাদ্দ ।
কিন্তু, রক্ষকই যদি ভক্ষক হয়, বিপন্ন পথ শিশু তাহলে কোথায় যায়? 
বৈভবে লালিত মধ্য কিম্বা উচ্চবিত্তের শিশু, 
এখানেও নিরাপদ নয় শিশু যীশু ।
ইঁদুর দৌড়ের প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছে এরা ,
বাবা মায়ের অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণের কাণ্ডারী যে এরা। 
শৈশবের খেলাধুলার পাঠ যে গেছে চুকে ,
বইয়ের ব্যাগ নিয়ে এরা কোচিং সেন্টারে ঢোকে ।
অবসর কাটানোর নেই অবসর কোনো ,
ধূলো – বালি ঘেঁটে খেলা দিবাস্বপ্ন যেন।
ধূলো – বালি, লুকোচুরি, ডাংগুলি খেলা, 
কোথায় যে হারিয়ে গেছে, যায় না ঠিক করে বলা।
ক্রিকেট, ফুটবল, সুইমিং আর  ক্যারেটে , 
সব কিছুরই সিডিউল ঠিক করা আছে।
খেলার জন্য খেলা , যায় না কো আজ বলা।
সবই যে লোভনীয় ক্যারিয়ার ভাই আজ, 
পারফেকশনের জন্যে তাই কঠোর পরিশ্রম চাই।
শিশু মনে আজ ক্লান্তি জমেছে একরাশ ,
ঠাকুরমার ঝুলি নিয়ে কে আর আদর করে সারছে প্রাতরাশ! 
চাকুরিজীবী বাবা , মায়ের হাতে সময় বড়ই কম, 
নিঃসঙ্গতায় নিষ্পেষিত শৈশব হরদম।
ফ্লার্ট কালচারের মধ্যে দূরত্ব অনেক বেশি, 
বন্ধুত্ব গড়ে খেলা যায় না যেমন খুশি ।
ছকে বাঁধা এই জীবনে দুষ্টুমি করা মানা ।
শৈশবের এই দুরন্তপনা মানে না কোনো বাধা ,
সরকারি স্কুলে যে ভাই নেই কো কোনো সাজা।
শিক্ষক, শিক্ষিকা এখানে আপন বড় , 
মন খুলে কথা বলাতে এখানে সবাই দড়ো ।
ম্যানারস্ এর চাপ সাহেবি স্কুলে খুব, 
মাপা হাসি আর চাপা কান্নাতে দুষ্টুমি নিশ্চুপ ।
শৈশব নিরাপদ নয়কো এখানে মোটেও, 
শিক্ষার্থী নয়কো ওরা খদ্দের বটে।
শিক্ষকের লালসার শিকার হওয়া, সংবাদে ওঠে।
জীবন জটিল হচ্ছে আজ বড্ড বেশি, 
শৈশবের সারল্য তাই হচ্ছে মাটি ।
ফিরিয়ে দাও সেইসব অতীতের দিন , 
 যেখানে মা – ঠাকুরমার কোলেতে শিশু ঘুমোল , 
পাড়া জুড়োল ; নিরবতা এল নেমে, 
শিশু জাগার সাথে সাথে কল্লোলিনী কলোনি, 
শিশুর বাসযোগ্য হবে এ ধরণী।

Leave a Reply