কোজাগরী
ধন সম্পদের আরাধ্য দেবী তুমি,
গৃহস্থের ঘরে ঘরে পূজিতও তুমি ।
তোমারই কৃপায় কেউ অপার ঐশ্বর্যের অধিকারী হয়,
আবার তোমারই কৃপায় কেউ কেউ সুখী গৃহস্থ হয়।
জানি তোমার কোনো প্রিয় অপ্রিয় নাই ,
ভক্তিমতীর ঘরে তুমি চিরস্থায়ী তাই।
বৈকুণ্ঠবাসিনী
–
শ্রবণামৃত করেছি পান,
যখন শুনেছি সেই গান –
‘বৈকুণ্ঠ থেকে লক্ষ্মী এল, পৃথিবীর এই মাটিতে,
জয়রামবাটীতে ।’
শ্যামাসুন্দরী তনয়া তুমি,
ধরিত্রীর ক্রোড়ে সাক্ষাত লক্ষ্মী প্রতিমা তুমি ।
নররূপী নারায়ণের ভরসাস্থলও তুমি ।
কত রূপে ধরা দিয়েছো মাগো এই ধরিত্রীর বুকেতে!
কোথাও লক্ষ্মী, কোথাও সাক্ষাত সরস্বতী, আবার কোথাও বা জ্যান্ত দুর্গা তুমি!
কিন্তু, তোমার আগে কেউ দেয়নি মাগো এমন বরাভয় –
” কিচ্ছু চিন্তা করো না, বাবা, আমি মা থাকতে তোমাদের কে কি করবে । “
এই অভয়দায়িনী একমাত্র মাগো তুমি ।
কিন্তু, সবকিছু ছাপিয়ে গেছে মাগো তোমার ঐ মাতৃরূপখানী ।
” আমার ছেলে ধূলো কাদা মেখে এলে , আমাকেই তো ধূলো ঝেড়ে কোলে তুলে নিতে হবে । “
ঘরে ঘরে হোক মাগো তোমার ভাবনার জাগরণ।
কুসন্তান যদিও হয়, কুমাতা কখনোই নয়।
‘ নিন্দে মন্দ তো করতে পারে সবাই,
জল যার স্বভাব নীচে যাওয়া, সূর্য কিরণ তাকেও টেনে তোলে,
ভাঙতে পারে তো সবাই, গড়তে পারে ক’জন? ‘
কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর এই প্রাক্কালে,
ভাবছি মাগো সক্কালে –
আর একবার এসো গো মা এই ধরিত্রীর তলে,
তাপক্লিষ্ট মানুষ যে আজ ছটফট করছে,
‘উদ্বোধন ‘ আর ‘ নিবোধত’ এ তোমাকে খুঁজছে ।
অসহিষ্ণুতার মাত্রা মাগো ভীষণ বেড়ে গেছে ।
আসুরিক প্রবৃত্তি মাগো প্রবল হয়ে উঠেছে,
কামিনী, কাঞ্চনে আসক্ত এরা সব,
চির অতৃপ্ত কামানলে বুঁদ হয়ে আছে,
আরও আরোর লোভ গগনচুম্বী আজ!
ভোগ বিলাসে যেন কিছু না পরে বাদ ।
নিজে ছাড়া ফালতু সবই এদের কাছে ,
প্রতিহিংসা আর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এরা খুবই দড়ো। সহ্য গুণ এখানে খুঁজে পাওয়া ভার!
তোমার সেই বাণী — ‘ পৃথিবীর মত সহ্য গুণ চাই ‘ — কাঁদছে নিভৃতে আজ।
তাই একবার এসো মাগো এই ধরাতে ।
হানাহানি আর লাঠালাঠি সব থেমে যাক আজ ।
ধর্মান্ধতার বিষ বাষ্প নিভে যাক আজ ।
ফিরুক মাগো সেই সোনালী দিন —
যেখানে থাকবে না কোনো ভেদ ।
শরৎ আর আমজাদ কে নিয়ে কেউ করবে না কোনো জেদাজেদ।
সমন্বয়ের ধ্বজা উড়বে মাগো সব ধর্মস্থানে,
মানবতার জয়ধ্বনি দেবে সবাই,
বৈকুণ্ঠলোকে মাগো তোমার সেদিন ফেরা চাই।
কবি , গল্পকার , প্রাবন্ধিক
শ্যামল কুমার রায়