আমাদের পাড়ায়, আমাদের বাড়ির পিছনে তিন ঘর উড়িষ্যার লোক, লোকে বলতো উড়ে, যাদের আমরা পিসি বলতাম, তারা থাকতো। এদের আর্থিক অবস্থা ক্রমশঃ পড়তির দিকে যাচ্ছিল। এক বিধবা পিসির ছেলে রজনীদা। রজনীদা যতবার বিয়ে করে ততবারই বউ চলে যায়। বউ চলে যেত ভোলাদারও।
দু’পা গেলেই কলতলার পাশেই ওদের বাড়ি। ওরা ছিল বিহারি, লোকে বলত খোট্টা। সীতাদি, ভোলাদার বিধবা বোন, একটি মেয়ে ছিল তার, ধানের ক্ষেতে খোয়ালি করতে গিয়ে ধারালো ধানের পাতা লেগে সীতাদির একটা চোখ নষ্ট হয়ে গেল। পরে বিহার থেকে এদের বোনও সপরিবারে এখানে চলে আসে। বিহারের আরও তিন চার ঘর থাকতো বুনোপাড়ায়। এদের মধ্যে গিরেকাকার ছেলেদের সঙ্গে আমরা খেলাধুলো করতাম। পরিবারগুলোর আর্থিক অবস্থা মোটেও ভাল ছিল না।
বাবুদের জাওলগাছির বাড়িতে রান্না করতো রজনীদার জ্ঞাতি কান্তি পিসেমশাই, বাড়িতে থাকতো তাঁর প্রথম পক্ষের ছেলে কর্ণদা আর দুই মেয়ে। ছোট মেয়ে অনিতা ছিল আমাদের বউ বসানো খেলার সাথি। আর থাকতো পিসেমশাই এর দ্বিতীয় পক্ষ ও তাঁর মেয়ে। রজনীদার আরেক জ্ঞাতি রাধাদি আর তার মাও থাকতো।
গিরেকাকার একটা ছেলেও বাবুদের বাড়ি রাখালি করতো। তার কাছে বাবুদের কত গল্প শুনতাম, তাদেরও অবস্থা যে তখন পড়তির দিকে সেকথা তার কাছ থেকেই আমরা জেনেছিলাম।
৩৫
