কিন্তু, ওদিকে? সমস্ত পারিবারিক চাপ উপেক্ষা করে বিয়ে না করে রয়ে গেল সুদর্শন। বাবার ব্যবসায় না বসে স্বাধীন ভাবে মদের ব্যবসা শুরু করল। রক্তে ব্যবসা। ঐ মদেরই ফরেন লিকার অন শপ্ থেকে মদের সাপ্লাই শুরু করতেই ফুলে ফেঁপে ঢোল হয়ে গেল। পায়ে চাকা লাগিয়ে ব্যবসার কাজে ঘুরে বেড়াতে লাগল। আসলে সুদর্শন ব্যবসার কাজে সব কিছু ভুলে থাকতে চায়। আজ ওর ব্যবসার নাম ‘কারনসুধা এন্টারপ্রাইজ’ ।.
এক কালী পুজোতে সুদর্শন আকন্ঠ পান করেছিল। পরের দিন বড়াই করে কাবেরীকে গঙ্গার পাড়ে বসে তা বলতে, কাবেরী গুনগুন করে গান গাইতে শুরু করেছিল, ‘বিপিনবাবুর কারনসুধা, মেটায় জ্বালা, মেটায় ক্ষুধা’। সারাদিন গতর খাটিয়ে পেটের ভাত জোগাতে হয় ওদের। তার জন্য কোনো আক্ষেপ ছিল না ওদের। দু’বছর যেতে না যেতেই কাবেরীর খাবারে অরুচি বাড়িতে খুশির জোয়ার নিয়ে এল। সেই সময়ে কাবেরী কোনো মাইনে পেত না। ঐ একার রোজগারে অর্পন সব সামলে নিয়েছিল।
শুধু তাই নয়, পাছে কাজ নিয়ে বাড়িতে অশান্তি হয়, অর্পন কাজে যাবার আগে সংসারের অনেক কাজ গুছিয়ে দিয়ে যেত। লোকে অবশ্য টিপ্পনী কাটত বৌয়ের গোলাম বলে। তাতে অবশ্য সাদামাটা অর্পনের কোনো হেলদোল ছিল না।
ঠিক দুশো আশি দিনের কাছাকাছি নিকটবর্তী ফলতা ঈ.এস.আই. হসপিটালে ডা. অমিয়বালা নস্করের তত্বাবধানে পৃথিবীর আলো দেখল সৌম্য। নামে কোথাও যেন একটা অবচেতন ভাবেও সুদর্শনের ছোঁয়া।সব কিছু ধাতস্থ হলে কাবেরী আবার পুরনো কাজে যোগ দিল। একদিন হন্তদন্ত হয়ে কাবেরী কাজে যাবে বলে জোরে হাঁটা দিল, এমন সময়ে একটা ফরটুনার্ গাড়ি কাবেরীর পাশে এসে দাঁড়াল।
ঘটনার আকস্মিকতায় কাবেরী থমকে গেল। কালো কাঁচ নামতেই কাবেরী কাকে দেখল? সময় যেন থমকে দাঁড়ালো। উঠে এস। ভেতর থেকে শুধু এটুকু শব্দই এল। কেমন মোহাবিষ্ট হয়ে কাবেরী গাড়িতে চড়ে বসল। ইব্রাহিম জিজ্ঞেস করল,”দাদা কোন দিকে যাব?” সোজা নন্দকুমার, মাঝের সিটে বসে সুদর্শন বলল।
কাবেরী পাশে বসতেই , ইব্রাহিমকে এসি টা চারে দিতে বলল; আর কার ফ্রেশনার আর একবার দিতে বলল। কাবেরী আর সুদর্শন আকস্মিকতা কাটিয়ে কথা বলতে শুরু করল। আস্তে আস্তে উঠে এল, কেন, কিভাবে, কাবেরীরা চলে এল।
কিন্তু, তুমি কেন আমার জন্য অপেক্ষা করলে না? আমি তো আজও শুধু তোমাকেই চাই। এ কথায় যেমন কাবেরীর চোখে জল বাঁধ মানল না, তেমনি নিজের বাড়ির লোকের উপর চরম ঘেন্না লাগল সুদর্শনের। মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল কত না অশ্রাব্য গালিগালাজ।.
রাগে গুলি করে মারতে চেয়েছিল নিজের বাড়ির লোকেদের। ইব্রাহিম ও কাবেরী কোনোমতে শান্ত করল সুদর্শনকে। সব দেখেশুনে কাবেরী সুদর্শনকে ওর বর্তমান ঠিকানায় আসতে বলল।