যাঁকে একবারও চেনার সুযোগ হয়নি, দেখার সুযোগ হয়নি, যাঁর সঙ্গে ফোনালাপও ছিল না — আজ তাঁর কথাই বলতে চেয়েছি। না, তিনি কবি নন, উপন্যাস লিখেছেন যদিও, তবু প্রত্নতাত্ত্বিক এবং প্রাচীন শিল্প-ভাস্কর্যের গবেষক হিসেবেই বেশি পরিচিত।
.
.
এই লোকটির নামই গোপালদাস মুখোপাধ্যায়। জন্মেছেন ১৯৩১ সালে, বীরভূম জেলা সংলগ্ন ঝাড়খণ্ড রাজ্যের মলুটী গ্রামে। ব্রিটিশ আমলে পড়াশুনো করে ম্যাট্রিকুলেশান পাশ করে ইয়়ারফোর্সে চাকরি গ্রহণ করেন। ভারত-চিন যুদ্ধে অংশ নেন। বহু দেশ ঘোরেন। ১৯৫১ থেকে মাত্র ১৫ বছরের চাকরি জীবন থেকে অবসর নেন।
.
.
অসম্ভব বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ। গ্রাম্যজীবনের আড়ালে থেকেই তিনি ভারতবর্ষের প্রাচীন ইতিহাস অনুসন্ধান যেমন করেছেন, তেমনি সভ্যতার আদিম নিদর্শনগুলিও সযত্নে সংরক্ষিত করেছেন। সন্তানহীন এবং স্ত্রী বিয়োগের পরও কোনও সময়ের মধ্যেই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েননি। এখনও জীবনের দীর্ঘপথ পরিক্রমার নানা অভিজ্ঞতা জানিয়ে দিচ্ছেন।
.
.
সুলতান হুসেন শাহর সময় থেকেই বাংলার সংস্কৃতিতে কত মিথ তৈরি হয়েছে মঠ মন্দির নির্মাণকে কেন্দ্র করে তারই একটা সঠিক ইতিহাস তিনি অনুসন্ধান করেছেন। এবং প্রতিটি নির্মাণেরই একটা প্রেক্ষিত তুলে এনেছেন।
.
নানকার তালুকের রাজারা তাঁদের রাজধানী মলুটীতে নিজেদের বাসের জন্য কোনও দালাল কোঠা নির্মাণ করাননি। কিন্তু দেবদেবীর বাসের জন্য ব্যয়বহুল মন্দির নির্মাণ করিয়েছেন। কালের গর্ভে তা একদিন হয়তো নিমজ্জিত হয়ে যেত, আমরা ইতিহাসের বিরাট সাক্ষীগুলি হারিয়ে ফেলতাম, যদি না গোপালদাস মুখোপাধ্যায় না ঘুরে দাঁড়াতেন।
.
.
.
গোপালদাস মুখোপাধ্যায় খুব ঝরঝরে স্মৃতিতে আমাদের অনেক কথা শোনালেন। বৌদ্ধদর্শন থেকে হিন্দুদর্শন, মুসলমান শাসক এবং রাজাবাদশাদের কাহিনি। আন্তরিকতা আর মানবিক রসের আবেদনে জীবন্ত হয়ে উঠল প্রাচীন ইতিহাস। অন্তরে জেগে উঠল ভক্তি ও সমীহ। তাঁর পড়াশুনো, তথ্য সংগ্রহ এবং প্রয়োগের সঠিক ব্যবহার দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম।
.
.
.