১. রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে বলি-‘আজকের দিনটা খুব সুন্দর,আমার খুব ভালো লাগছে।সব কিছু খুব সুন্দর লাগছে।’ মানে খুব সোজা কথা,আজকের দিনটা যেন আমার খুব ভালো যায় সেইটে মাথায় রেখেই এই চিন্তা।কিন্তু হঠাৎ দন্ত পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখি দন্তপরিষ্কারক অর্ধশক্ত অর্ধতরল পদার্থটি(টুথপেষ্ট) শেষ হয়ে গেছে।আমি কিনতে ভুলে গেছি।তখন কাকে দোষ দেব?দিনটি কী করে ভাল হয় বলুনতো?
২. আবার সেইদিনকার কথা, হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুললাম।আমাদের আবাসনের এক ভদ্রলোক আমার কাছে একটা নীলকালির পেন চাইলেন।আমি একগাল হেসে বললাম-‘এক্ষুণি দিচ্ছি’,বলে ঘরে ঢুকে সেই যে খোঁজা শুরু করলাম।মিনিট পনেরো খোঁজার পরও একখানি নীলকালির পেন পেলাম না।অত্যন্ত লজ্জিত মুখে ফিরে এসে তাঁকে জানাতে তিনি যারপরনাই বিরক্ত হয়ে চলে গেলেন।তার কিছুক্ষণ পরেই আমি এমন একটা জায়গা থেকে ভালো নীলপেন আবিষ্কার করলাম, যেটা আগে চোখেই পড়েনি! এটাকে কী বলব?দিনটাই খারাপ না আমার কপাল খারাপ?
৩. আবার আর একদিনের কথাই বলি।কী মেঘ আকাশে! বাইরে যাওয়ার আগে তাড়াতাড়ি ব্যাগে ছাতাটা পুরে নিলাম।আসুক ঝেঁপে বৃষ্টি,কুছ পরোয়া নেহি-এইরকম একখানা ভাব নিয়ে বেরোলাম।ছোটব্যাগে জল, মোবাইলফোন, মানিব্যাগ, আরও কত ইমপর্টান্ট ইমপর্টান্ট থিং,তার মধ্যে কোনওরকমে নিলাম ছাতাটাকে ঠুসে।কিন্তু বাইরে বেরোতেই হালকা রোদে ছেয়ে গেল ভুবন।তার সাথে শুরু হল মৃদুমন্দ পবন।বেকার ছাতাটাকে আনলাম ভেবে ঠান্ডা হাওয়াতে খুব দুঃখ না হলেও মনটা বেশ খচখচ করছিল।যদিও কিছুক্ষণপরেই ভুলে গিয়েছিলাম এত সামান্য ব্যাপার।কিন্তু আমার বক্র কপাল!হঠাৎ আমাকে ব্যাগ খোলার সামান্য সময় না দিয়ে কোথা থেকে বিদ্ঘুটে বৃষ্টিটা ঝাঁপিয়ে পড়ল।ছাতা টা বের করে খুলতে গেলাম।হায়রে কপাল!কিছুতেই ছাতাটা খুলল না! মারামারি করে ফেললাম প্রায়,কিন্তু সে বড্ড রাগ করে প্রবল পরাক্রমে নিজেকে বন্ধ করে বসে থাকল।আমি ভিজতে ভিজতে বাড়ি ফিরে এলাম।ছাতাটা মানুষ হলে রাগের মাথায় দিতাম দু ঘা বসিয়ে।কী বলব আমার কপাল খারাপ না ছাতাটা মহা পাজি কে জানে?ও হ্যাঁ, বলে রাখি ছাতাটা বাড়ি এসে ঠিক খুলে গিয়েছিল।
এরকম বহু ঘটনা আছে,খুব সামান্য হলেও আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনে প্রভাব ফেলে। কখনো কখনো মনে দাগ কেটেও বসে যায়।আবার বেশীর ভাগ সময় আমরা যাই ভুলে।জীবন যে আসলে নদীর মত। দুঃখ,আনন্দ,রাগ, অভিমান সব কিছুই কেমন সময়ের ঢেউয়ে বয়ে চলে।
তবুও আমরা সুখের পিয়াসী।তার ব্যতিক্রম হলেই আমরা দুঃখী হয়ে পড়ি।মনে হয় জীবনটা যেন কিছুসময়ের জন্য নিরর্থক হয়ে পড়েছে।কিন্তু এই ছোট ছোট অখুশীগুলি না থাকলে খুশীর মর্ম বুঝতাম কীরূপে?
তাই বর্তমানে আমি ঠিক করেছি এই ছোট্ট ছোট্ট অখুশীগুলিকেও আপন করে নেব।খুশী যদি আপন হয় তবে অখুশী কেন পর হবে?থাক না সে আমার সাথী হয়ে স্মৃতির মণিকোঠায় চুপটি করে!