ক্লাসের সবচেয়ে ছোট আর সবচেয়ে দুষ্টু বাচ্চাটা সেদিন আসেনি স্কুলে | মনে আছে , সেবার বেশ কদিন ধরেই আসছিল না কী কারণে | শরীরের কোনো একটি অংশ কোনো এক মুহূর্তের জন্যও স্থির হয় না তার | নড়ছে তো নড়ছেই | চলছে তো চলছেই | সদা দামাল পা হাত | ফলে আদরে চাপড়ে সবসময় জমাট বেঁধে থাকি আমি আর সে | সে ও আমি | খেয়াল করবেন , দুর্দান্ত দূরন্ত সবসময় ভালোবাসাকে দানা পাকিয়ে রাখতে পারে | শিষ্টের চেয়ে এ ক্ষমতা তাদের অনেক বেশি |
এ শিশু যেমন দুষ্ট না হয়ে থাকতে পারে না আমিও তেমনি তাকে দুষ্টু না দেখে রইতে পারি না | মানে ব্যাপারটা হলো গিয়ে , সে শিষ্ট হলে আমিই যেন পড়ব ফাঁপরে | তার আমার জটলাটা ছিল ঠিক এইরকম | তার জন্মদিন এসে গেল –তবু এল না স্কুল | কী মনে হলো , একটা ফোন করে ফেললাম তার মাকে | এপাশ থেকে শুনলাম মা ডাকছেন তাকে —-আয় আয় ম্যাডাম ফোন করেছেন তোকে |
কথা শুনতে বলতে কিছুই পারে না সে | একটি কানযন্ত্র দিয়ে কতগুলো বৃহৎ শব্দের আভাস পায় মাত্র | তবু সেদিন কেন জানি মনে হচ্ছিলো,ফোনের মধ্যে দিয়ে আমার গলা ঠিক পৌঁছেছে তার কানে | সে চিনতে পারছে আমার কথাগুলোকে আর চিনতে পাওয়ামাত্রই লম্বা লম্বা লাফ দিচ্ছে ফোনের ওপাশে | দেখুন আমি কি উন্মাদিনী ! একবর্ণ বুঝবে না জেনেও মিনিট চারেক তার সাথে গল্প করে গেলাম | ঠিক যেমন করে নিত্যিদিনের গল্প বাঁধে কথা বলতে জানা গেরস্ত দুইজনা |
আমি : কী রে কবে আসবি ?
সে : এক লাফ ও সামান্য কিচিমিচি |
আমি : জন্মদিনেও এলি না তো ? কাল পাই তোকে ! দ্যাখ কেমন পেটাই !
সে : দু লাফ ও বিকট চিল্লামিল্লি |
আমি : স্কুলের সবাই আজ মিষ্টি খেল | তোরটা রেখেছি তুলে | কাল এলে পাবি | নচেৎ সব ফক্কা |
ওগো তাকে স্কুলে আনার জন্য মিছিমিছি কহিলাম আমার মিঠাইকথন | এবার চড়াই হেসে ওঠে খিলখিল | লাফের পর লাফ | ফোনের মধ্যে ধূপধাপ আওয়াজ শুনি | দামালের লাফ পাহাড় ছাড়ায় | শনশন বহিছে বাতাস | বাতাসই বুঝি জুড়িছে কথা | উন্মাদিনী খুঁজে ফেরে ! বড় আঁটো তার গাথা |
পরদিন আসবে সে নিশ্চয় |
দু মুঠোয় চকলেট পুরে |
https://www.facebook.com/storyandarticle/posts/1121223648304086