ক্ষেত্রপাল অনার্য কৃষি দেবতা
এক সময় গোটা ভারত জুড়ে ক্ষেত্রপালের পূছা হতো! অবশ্যই এখনো হয়, দক্ষিণ ভারতে এই অনার্য লৌকিক দেবতার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে! ক্ষেত বা ক্ষেত্রকে পালনের অর্থাৎ রক্ষার জন্যই রুদ্ররূপী ভৈরবের আরাধনা শুরু হয়েছিল বলে অনেকে মনে করেন!
ক্ষেত্রপাল এর আরাধনা কবে থেকে শুরু হয়েছিল তা বলা অত্যন্ত কঠিন। এক সময় মানুষ পাহাড়ের গুহায় ,গাছের কোটরে, কখনো খোলা আকাশের নিচে দিনপাত করেছে, কখনো হিংস্র পশুর আক্রমন কখনো প্রকৃতির খেলায় তাদের জীবন গেছে! মানুষ কিন্তু সভ্যতার প্রাক পর্যায়ে একাই বাঁচতে চেয়েছিল, ফলে প্রান ও গেছে! এরপর অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বুঝেছে যে একা নয়, একসঙ্গে থাকলে সম্মিলিতভাবে লড়লে শুধু হিংস্র পশুই নয় প্রকৃতির অনেক ঝড় ঝাপটা থেকে নিজেদেরকে বাঁচানো যায় ! সেই শুরু সমাজবদ্ধতার ইতিহাস! প্রথমে ছোট ছোট গোষ্ঠী, পরে বৃহৎগোষ্ঠী, একটা ক্ষেত্র গড়ে ওঠে, প্রথমে জাদু তুকতাক, তাতেও যখন প্রকৃতিকে বশে আনা গেল না, গোষ্ঠীবদ্ধ জীবনে নানান প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তখন তাদের মনে হলো পৃথিবীর সব সৃষ্টি ধ্বংসের মূলে রয়েছে প্রকৃতি! অতএব প্রকৃতির আরাধনা করতে হবে! প্রকৃতিকে বশে আনতে হবে!
প্রকৃতি কিভাবে বশে আনা যায়? সেই চিন্তার তাদের ঘুম যায় উড়ে! প্রথমত তাদের বাঁচার আঁধার ছিল ভোতা পাথর, বৃক্ষ, নদ-নদী, পশু পক্ষী ইত্যাদি! এইভাবে এগুলোকে নড়াচাড়া করতে করতেই বৃক্ষ পূজা নদী পূজা পাথর পূজা এমনকি বিভিন্ন পশু পাখির পূজা এক কথায় প্রকৃতির আরাধনায় তারা মনোনিবেশ করল, বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক সমাজতাত্ত্বিক মনে করেন এভাবেই তো টোটেম প্রথার মাধ্যমে প্রকৃতির আরাধনার সূত্রপাত ঘটে! তাই মনে করা যেতে পারে যে পশুপালক সমাজেই টোটেল প্রথার উৎপত্তি ঘটে যা ধর্ম আরাধনার আদিম রুপ হিসেবে মনে করা যেতে পারে, অনেকে মনে করেন ভয় থেকেই ধর্মের উৎপত্তি! অবশ্যই অসহায় অবস্থা ভয় থেকেই মানুষ ধর্মের আশ্রয় নেয়! এখনো সেই ঐতিহ্য চলে আসছে, আমরা আমাদের মনস্কামনা পূরণের জন্য বিভিন্ন ঠাকুরের কাছে মানত করি, দন্ডিখাঁটি, পশু বলি দেই; আরো কত রকমের যে আচরণ করি, তা সকলেরই জানা!
তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো? ভয় থেকেই ভক্তি! বিশিষ্ট সমাজ দার্শনিক কাল মার্কস তো তাই বলেছেন! পৃথিবী যাবতীয় ধর্মের উৎপত্তি পেছনে আছে ভয়! অর্থাৎ বিপদতারণ ধর্মের কারণ! এই ভাবেই ক্ষেত্রকে বাঁচানোর জন্য এক সময় মানুষ টোটেম প্রথার মাধ্যমে প্রকৃতির আরাধনা করেছে! অবশ্যই গাছ পাথর নদ নদী বিভিন্ন পশু পাখি!
এভাবেই গোষ্ঠীবদ্ধ সমাজ ক্ষেত বা ক্ষেত্রকে বাঁচানোর জন্যই ক্ষেত্রপালের শরণাপন্ন হয়েছিল! প্রথমদিকে টোটেম প্রকৃতি ছিল গাছ! এখনো বিভিন্ন জায়গায় উত্তর-পূর্ব মাঠে খোলা আকাশের নিচে কোন বৃক্ষের নিচে ক্ষেত্রপালের প্রতিষ্ঠান! হয়তো পশুজীবি সমাজেই এর উৎপত্তি ঘটেছিল!
এই আচরণ অনার্যগোষ্ঠী বহুদিন ধরে করেছিল! হয়তো তারা বিপদ আপদ থেকে বেঁচে ছিল! তারপর সমাজের বিবর্তন ঘটেছে ধর্মতাত্ত্বিক সমাজ ধীরে ধীরে অধিবিদ্যক সমাজের রূপ গ্রহণ করেছে! এসেছে আর্য, বেঁধেছে আর্য অনার্যের সংঘাত! অবশেষে মিলন ঘটেছে! ধর্মীয় আচরণের রূপ বদলেছে! এসেছে বেদ পুরান বিভিন্ন ধর্মশাস্ত্র! ধর্ম কখনো রূপ নিয়েছে ঘরঘর ধক ধক জটাযুধারী রুদ্রের কখনো শিবের! এই ভাবেই একদিন টোটেম প্রথা রঙ্গ হিসেবে পঞ্চানন বটুকনাথ রুদ্ররূপী ভৈরব ক্ষেত্রপালের রূপ পরিগ্ৰহন করেছে -ক্ষৌং ক্ষেত্রপালায়! ক্ষেত্রকে রক্ষা করো!
বারিদ বরন গুপ্ত মন্তেশ্বর পূর্ব বর্ধমান
***কপি করবেন না???

Barid Baran Gupta