
কোন এক দন্ডিতের শেষ ইচ্ছা
মোঃ আতাউল্লাহ আল মাহমুদ
মিথ্যা মামলায় ফাঁসির আদেশে দণ্ডিত এক আসামিকে কারারক্ষী এসে বলল, “আপনার শেষ কোন ইচ্ছা থাকলে বলুন, কারাকর্তৃপক্ষ তা পুর্ণ করবে”। দণ্ডিত আসামি জানাল, “আমার শেষ ইচ্ছা, “ফাঁসির পুর্বে ফাঁসির মন্চে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট খেতে চাই”।
কিছুক্ষণ পর কারারক্ষী এসে জানাল, “আপনার শেষ ইচ্ছাটা কারা কর্তৃপক্ষ রাখতে পারছেনা, কারন যাহা সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ কৃত স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তাহা আপনাকে দেওয়া যাবেনা, অন্য কোন ইচ্ছা থাকলে বলতে পারেন”।
আসামি জানিয়ে দিল, “না আমার অন্য কোন ইচ্ছা নেই”।
তারপর আসামি বেশ কিছুক্ষন হাসলেন আর নিজে নিজে বলতে লাগলেন, ধন্য আমি ধন্য, ধন্য আমার দেশ,ধন্য দেশের আইন।ধন্যবাদ জানাই কর্তৃপক্ষের স্বাস্থ্য সচেতনতাকে।কিছুক্ষণ পরেই যাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া হবে কর্তৃপক্ষ তার স্বাস্থ্যের বিষয়ে কতো সচেতন!—-
অসচেতন সাধারন জনগন তো কত ভুল আবদারই করতে পারে, তাই বলে নীতি নির্ধারকগন তো আর তা অনুমোদন দিতে পারে না।
যা হচ্ছে তা সবই নির্দিষ্ট আইনের মাধ্যমেই হচ্ছে। এইতো কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আমাকে যে ফাঁসিতে ঝুলানো হবে তাহাও কিন্তু সুস্পষ্ট আইনের মাধ্যমেই হচ্ছে, যদিও যাকে খুনের দায়ে আমাকে ফাঁসিতে ঝুলানো হবে তাকে আমি কখনো দেখিওনাই এমনকি এর প্রত্যক্ষ কোন স্বাক্ষীও নাই, হতেও পারে সে আদৌ মরেই নাই কিংবা তার কোন অস্থিত্বই নাই,।
মামলা হয়েছে তাই আসামির প্রয়োজন তাইতো আমি এবং
আমার মতো অনেকের জন্ম।পাঁঠার জন্মইতো হয় বলীর জন্য।
আইন অনুযায়ী স্বাক্ষীর প্রয়োজন তবে স্বা,ক্ষী চুক্তিতে পাওয়া যায় আবার ধরেও আনা যায়। তবে আমার বেলায় এই ঝামেলাটা হতে দেইনি। আমি আইনের যাত্রাপথকে অনেক সহজ করে দিয়েছি।
আমি স্বীকারোক্তি দিয়ে দিয়েছি, একদম সহজ ভাষায়।|
কখন খুন করেছি কেন খুন করেছিকিভাবে খুন করেছিলাশকে কয় টুকরা করেছি *কোন নদীতে ফেলেছি সবই বলেছি।যারা আমায় উক্ত বুলি শিখতে সাহায্য করেছে তারাই বলেছে বেশ নাকি ভালো বলেছি।বিজ্ঞ আদালতও আমার উত্তরে সন্তুষ্ট হয়ে রায় দিয়ে দিলেন “ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু দন্ড”।।
তবে যত সহজে উত্তর গুলি দিয়েছিলাম তা আয়ত্ব করা এত সহজ ছিলনা।এর জন্য রিমান্ডের নামে দিনের পর দিন কত ধরনের নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে সবকি আর বলা যায়?
তবে আজ যারা স্বাস্থ্য সুরক্ষার অজুহাতে আমার শেষ ইচ্ছা পুর্ণ হতে দেয়নি, সেদিন কোথায় ছিল তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার
ভাবনা যেদিন আমার সমগ্র শরীরে জলন্ত সিগারেট চেপে ধরতে ধরতে আমার দেহটাতে যেন বাংলার মানচিত্র এঁকে ফেলেছ, কোথায় ছিল তোমাদের এই সচেতনতা যখন মিথ্যা
স্বীকারোক্তি আদায় করার জন্য নখের অগ্রভাগ দিয়ে সুঁচ ঢুকিয়ে দিতে, সাবান জলে নাকমুখ চেপে ধরতে, সর্বাঙ্গে দিতে বৈদ্যুতিক শক্,প্লাস দিয়ে টেনে তুলেছ নখ,পশ্চাৎ দিয়ে যখন দিয়েছিলে তপ্ত ডিম, প্রতি গিঁটেগিঁটে করেছ লাঠিপেটা, আমি যখন বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতাম, তখন তোমরা বলেছিলে, “আমরা যে ভাবে বলি সেইভাবে বলেদে, তবেই বাঁচবি “।
সেদিন বাঁচতে চেয়েছিলাম, কাউকে না কাউকে বাঁচানোর জন্য আমাকে ঝুলিয়ে দিলে।এখনতো আর বাঁচতে চাইনা শুধু একটা সিগারেট চেয়েছিলাম।
আচ্ছা আমি বুঝতে পারিনা এই সিগারেটের প্রতি কেন তোমাদের এত ক্ষোভ, আমিতো দেখেছি জীব ও জড় সকল বস্তুর মধ্যে একমাত্র এই জড় বস্তুটাই নিঃস্বার্থভাবে নিজেকে পুড়িয়ে নিঃশেষ করে অন্যকে সুখ দেয়,আর বাঁকি সবই স্বার্থের লেনদেন অথবা মিথ্যা আশ্বাস।
যাই হোক জীবনের সব ইচ্ছা যে পুরণ হতেই হবে তা কিন্তু শ্রষ্ঠার সাথে সৃষ্টির কোন চুক্তি নয়।
জীবনের হয়ত আর অল্পক্ষণ বাঁকি, কিছুক্ষণের মধ্যে হয়ত পড়বে জল্লাদের ডাক,আর আমার জীবনের গল্পের ঘটবে সমাপ্তি।তবে আমি যাচ্ছি তোমরা থাক, তবে জেনে রাখ দুনিয়ার আইন হচ্ছে ক্ষমতাধরদের ক্ষমতাকে আরো শক্তিশালী করা ও দুর্বলকে কোণঠাসা করার একটা হাতিয়ার মাত্র। সভ্যতার ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখ,কোন কালেই পৃথিবীতে আইনের শাসন ছিলনা,সবকালেই দুর্বলরা সবলের হাতে বলি হতে হয়েছে।ঘড়ির কাঁটায় রাত বারোটা বাজছে, এই তো জল্লাদের হাঁকডাক আর কারা রক্ষীর পায়ের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে, তোমরা থাক আমি যাচ্ছি।
মোঃআতাউল্লাহ আল মাহমুদ
০৯/০৬/২০২১