Ataullah Mahmood

মানুষ ও উপযোগীতা
মোঃ আতাউল্লাহ আল মাহমুদ

মোঃ আতাউল্লাহ আল মাহমুদ

কিছুতেই ঘুম না হওয়ায় বই পড়ব বলে অন্ধকারের মধ্যেই বুক সেলফে হাত দিয়ে একটা বই নিলাম।
ছাত্র জীবনেত বই ধরলেই ঘুম আসত।
দেখি এই ঔষধে এখনো কাজ করে কিনা?
লাইট জ্বালতেই মেজাজ গেল বিগড়ে।
যে বইটা হাতে উঠল তা হল ‘অর্থনীতি’, কি কঠিন বিষয়
Economics উচ্চারণ করতেই দাঁত ভেঙে যায়।

আসলে অর্থনীতি কোন কালেই আমার প্রিয় বা পাঠ্যবিষয় ছিল না। রসহীন বা কঠিন বিষয় বলে সর্বদায়
দুরে রেখেছি। হাতে আসা বইটা এক বন্ধুর কাছথেকে ধার করা।
তবে বেশ কয়েকবার পড়েছি। তবে কঠিনকে যতই ভয় পাইনা কেন,কঠিনের মধ্যেও মজা আছে।অনেকেই দেখি নরম জিনিস কে কঠিন করিবার জন্য অনেক টাকা পয়সা খরচ করে শুধু মজা পাওয়ার জন্য।কে কি ভাবছেন যানি না, তবে যা ভাবছেন তাও মিথ্যা না।
স্থাপত্যবিদগন নির্মাণ সামগ্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে যার কাঠিন্যমান বেশী তাকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।
তবে অযথাই কেন কাঠিন্যভিতী?
অর্থনীতি যতই রসহীন হোকনা কেন, ‘অর্থ ‘বা টাকা,তেই
কিন্তু জগতের রসভান্ডারের সকল রসের উপস্থিতি বলেই একটি কথা আছে “টাকা মধুর চেয়ে মিষ্টি “।

তাই বলছি, আমরা অর্থের প্রতি লালায়িত থাকব কিন্তু এই অর্থের নিতী সম্পর্কে কিছুই জানবনা তা নিতান্ত বেমানান।
আসলে আমরা প্রথম থেকেই রসের প্রতি আসক্ত থাকার কারনে জীবনটাযে নিরস হয়েগেছে তা অনেক দেরিতে অনুভব করতে পেরেছি। সরস ও সহজ পথে কখনে সাফল্য লাভকরা যায়না তা সময় হাড়ায়ে টের পেয়েছি।

যা হবার তা হয়েছে। সেই ত্রিশ বছর আগে পড়েছিলাম
অর্থনীতি, এর মধ্যে এখনো মনে আছে চাহিদা, যোগান, উপযোগ, ম্যালথাসের জনসংখ্যা তত্ব, রিকার্ডোর খাজনা তত্ত, দুর্বল মুদ্রা সবল মুদ্রা ইত্যাদি ইত্যাদি।

আজ নিদ্রাহীন মধ্য রাতে মনে পড়ছে অর্থনীতির ‘উপযোগ’তত্ত্বের কথা।এখানে বলা হয়েছে যে দ্রব্য মানুষের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে অভাব পুরন করতে পারে তাহাই উপযোগ। উদাহারন হিসাবে দেওয়া হয়েছে
চাল,ডাল,পেয়াজ, রসুন, আদা,সিগারেট এমনকি মদ।
বিভিন্ন লেখক বা অর্থনীতিবিদ বিভিন্ন পণ্যের উদাহারন দিয়েছেন।★কিন্তু অতি দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে এই
তালিকায় মানুষের নাম নাই।যারা লিখেছেন তাঁরা হয়ত আত্বসম্মানবোধের কথা ভেবে মানুষকে পণ্য তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন হয়ত।

আসলে আমরা নিজেকে যতই মানুষ ভাবিনা কেন, কেউ না কেউ আপনাকে পণ্য হিসাবে ব্যবহার করছেই।
তাতে দুঃখ পাওয়ার কিছুই নাই।এই পন্যগুন অর্থাৎ অন্যের অভার মেটাবার ক্ষমতা যার যত বেশী সে তত মুল্যবান। এটা শ্রষ্টার নিয়ামত।
আর যার এই উপযোগীতার ক্ষমতা মুটেও নাই সে অন্যের বোঝা। তার স্থান ডাষ্টবিনেও নাই।
কারণ ডাষ্টবিনের ময়লারও একটা উপযোগীতা আছে, কেউ কেউ এই ময়লা কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করে।

এক শ্রেনির পেশাদার মানুষের হাঁক প্রায়ই শুনতে পাবেন,তারা ক্রয় করছে, এই ভাঙা মোবাইল, ভাঙা লেপটপ,ভাঙা টিভি, পুরাতন টায়ার, ভাঙা বোতল,ছেড়া কাপড় এমনকি ছেঁড়া জোতাও বিক্রয় হয়।
কিন্তু কখনো শুনেছেন কি,কেউ কিনতে চায় ভাঙা মানুষ,
পুরাতন মানুষ,অকর্মণ্য মানুষ? উপযোগ বা অন্যের অভাব পুরণের ক্ষমতাহীন মানুষের স্থান পৃথিবীতে নেই।

আল্লাহ আমাদেকে যেন মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত কর্মক্ষম অর্থাৎ এ জগতের অভাব পুরণে সক্ষম রাখেন, কখনো যেন উপযোগীতা না হারাই এবং একদিনের জন্যও যেন কারো বোঝা না হই সেই কামনাই করি।

(সমাপ্ত)

Leave a Reply