
” ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা
যম দুয়ারে পড়ল কাঁটা । “
বিকাশ চন্দ্র মণ্ডল
ভাই ফোঁটা বাঙালি তথা হিন্দুদের এক সামাজিক উৎসব । কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে দিকে দিকে দিনটি " ভাতৃদ্বিতীয়া " নামে অধিক পরিচিত। হিন্দীভাষী মানুষ বলে " ভাইদুজ্ "এছাড়া মহারাষ্ট্র, গোয়া, কর্ণাটকে ভাই ফোঁটা কে বলে " ভাইবিজ " । তবে ভাইবিজ বিজয়া দশমীর পরের দিন অনুষ্ঠিত হয়। আবার অন্যত্র " ভাইটিকা " ও " যম দ্বিতীয়া " নামেও পালিত হয়। নেপালে এই অনুষ্ঠানকে বলা হয় " ভাইলগন" বা " ভাতিলগন " ।
নাম ও রীতি অঞ্চল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হলেও আসল উদ্দেশ্য এক ভাইকে অশুভ শক্তির হাত থেকে, যম তথা মৃত্যুর হাত থেকে নিরন্তর রক্ষা করা। প্রসঙ্গক্রমে বলা যেতে পারে ভাই ফোঁটা আমাদের সুপ্রাচীন রীতি গুলোর মধ্যে একটা। বর্তমানে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে এই উৎসব সারা ভারতবর্ষে পালিত হয়ে আসছে।
পরাধীন ভারতবর্ষে স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত বিপ্লবী গণের গোপন আস্তানায় পালিত হয়েছে ভাইদের রক্ষায় ভাইফোঁটা অনুষ্ঠান ব্রত। ভাই বোনের এমন পবিত্র আত্মিক বন্ধনের অনুষ্ঠান সুপ্রাচীন কাল হোতে বৃহত্তর ভারতবর্ষে প্রচলিত হয়ে আসছে যার ঐতিহ্য ও পরম্পরা আজিও বর্তমান। আর এই সমস্ত লৌকিক সামাজিক অনুষ্ঠান চলুক প্রবাহমান কাল ধরে।এর মধ্যে বেঁচে থাকবে সমাজে একান্নবর্তী পরিবারের ভাবনা ।
শাস্ত্র মতে মৃত্যুর দেবতা যম তার বোন যমুনার হাতে ফোঁটা নিয়েছিলেন। অন্য মতে নরকাসুর নামে এক দৈত্যকে বধ করার পর যখন কৃষ্ণ সুভদ্রার কাছে আসেন তখন সুভদ্রা তার কপালে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে তাকে মিষ্টি খেতে দেন। সেই থেকে এই রীতির প্রচলন হয়।
এই শুভ দিনে প্রতিটি বোন তাদের ভাইদের দীর্ঘায়ু কামনা করে চন্দনের ফোঁটা কপালে দিয়ে মুখে বলে – –
” ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা
যম দুয়ারে পড়ল কাঁটা ।
বোন যমুনা দেয় যম কে ফোঁটা
আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা।
যমুনার হাতে ফোঁটা পেয়ে যম হয়েছে অমর
আমার হাতে ফোঁটা পেয়ে আমার ভাই হউক অমর।”
প্রদীপ জ্বেলে, ধান দুর্বার ছড়িয়ে, উলু ধ্বনি দিয়ে, সেন্ট তেল ছিটিয়ে মাথার চুল আঁচড়ে দিয়ে কপালে শ্বেত বা রক্ত চন্দন বা দই, হলুদের ফোঁটা দিয়ে হাতে পান, গোটা সুপারি, মিষ্টি ও নুতন বস্ত্রাদি উপহার দিয়ে শুভ কামনা করে।
বোনেরা ভাইদের দীর্ঘ জীবন কামনা করে মিষ্টি মুখ করায়। ভাইরাও তার প্রিয় বোনকে যথাসাধ্য উপহার দিতে ভুলে না। বড় ভাই ছোট বোনদের আশীর্বাদ কের ছোট বোনরা দাদাদের পা ছুঁয়ে প্রণাম করে আশীর্বাদ নেয় আর ছোট ভাইদের আদর করে।
বর্তমানে ব্যস্ততার একটা দিনে ভাই বোনের মিলন উৎসব উদযাপিত হয় ঘরে ঘরে। সমাজে সম্প্রীতির বার্তা বয়ে আনে এটাই কম কি ? যেখানে বর্তমান সমাজে ট্রেন্ড হতে চলেছে কবির ভাষায় – – –
” আমি এবং আমার শান বাঁধানো উঠোন।”
বিকাশ চন্দ্র মণ্ডল
গদীবেড়ো, রঘুনাথপুর,
পুরুলিয়া