Bikash chandra Mandal

Bikash chandra Mandal

” ভুত ছাড়ানো “

বিকাশ চন্দ্র মন্ডল

  
 ঘটনাটা আজ থেকে অনেকটা পিছনের সময়ের। তখন বাড়িতে বাড়িতে ইলেকট্রিক আলোর রোশনি পৌঁছায়নি । ছেলেরা মোবাইল হাতে হাতে নিয়ে পাড়ার রোয়াকে বসে ঘাঁটাতো না আর বাড়ি বাড়ি থেকে এত সিরিয়ালের শব্দও শোনা যেত না। গল্প টা সেই সময়ে 

তখন ” ছেলে ঘুমাল, পাড়া জুড়াল বর্গী এল দেশে ” ঘুম পাড়ানি ছড়া বললেই ছোট্ট ছেলেরা ঘুমিয়ে যেত। সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে দাঁতনে শাল দাঁত মাঝতো। চটের থৈলা বিছিয়ে গড গড় করে ডেকে ডেকে পড়তো।

এক প্রত্যন্ত গ্রামের আদিবাসী ঘরে ভুত লেগেছে । গভীর রাতিত্রে দুড় – দাড় শব্দ হয়, আতঙ্কে কারো যেন ঘুম হয় না। গৃহ কর্তা বাঘরাই মাঝি অনেক করে লাড়ুবাড়ি গ্রামের বট তলার এক নামকরা গুনীন সাধু বাবার খোঁজ পেয়েছেন। যে ভাবেই হোক বাড়ির ” বোঙা ” ছাড়াতেই হবে।

একদিন সাধু বাবাকে বাড়িতে আমন্ত্রণ করে ভালো রকম আতিথেয়তা করার পর ভুতের তান্ডবের কথা জানান। তিনি মাটির মোটা দেওয়াল দেওয়া টিনের চালের ঘরের চৌহর্দি অর্থাৎ চার পাশ দেখে শুনে ঘুরে নিয়ে বিধান দিলেন।

আগামী শনিবার মধ্যাহ্নে যাগ – যজ্ঞ করতে হবে। ঈশান কোণের ঐ বিশেষ জায়গায়, যেখানে কলা গাছের ঘন বন হয়ে আছে। ঐ কলা গাছের গোড়া তুলে ফেলে অস্থায়ী উগ্র পঞ্চ মুণ্ডির আসনে বসে হোম যাগ করা হবে।

জোগাড় করতে যা যা হবে সব তিনি ফর্দে লিখলেন লাল শালু কাপড়, কালো সরিষা ও রাই সরিষা, মাষ কলাই, কালো তিল, সিঁদুর, পান, গোটা সুপারি, চাল, ডাল আনাজের ভূজ্যি। 

বিশেষ করে জোগাড় করতে হবে মোরগের রক্ত ও কামারশালের তৈরি বিশেষ ভুত ছাড়ানো মোচড় দেওয়া জলই বা পেরেক, সর্ব্বষৌধি,গ্রহৌষধি, মহৌষধি, পবিত্র দশ মহা শ্মশানের মাটি।

আগামী শনিবারের জন্য গৃহস্থ প্রস্তুত। কলা গাছ, ঝুঁকে পড়া বাঁশ ডাল,পরিস্কার করে গোবর লাতা দিয়ে হোমের স্থানটি খুব সুন্দর করে প্রস্তুত করা হয়েছে। ফর্দ অনুযায়ী সমস্ত পূজোর উপকরণ জোগাড় করে রেখেছেন। 

শনিবারের দিন লগ্ন দেখে যথা সময়ে " ঔ হিড়িং কিড়িং " মন্ত্র ও গাল বাদ্য, ঘন্টা, ঝাঁঝরের শব্দ, হোম ধুপ - ধুনার গন্ধে ও ধোঁয়ায় এক বিশেষ পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। শব্দ আর ধোঁয়ার তাণ্ডবে সমস্ত কীট পতঙ্গ ভয়ে পলায়ন করেছে। 

 গোপনে সাধু বাবা বিশেষ তণ্ডুল মন্ড ( জিঙ্ক ফসফেট বা ইঁদুর মারার তীব্র বিষ দিয়ে প্রস্তুত) মাটির দেওয়াল দেওয়া টিনের চালের বাড়িটির আনাচে কানাচে, পাড়নে রেখে এসেছেন ভুতের প্রসাদের জন্য । আর কালো ও রাই সরিষা, গঙ্গা জল ছড়িয়ে ছড়িয়ে ঘর বাঁধার কাজ শেষ করে গুরু বিদায়ের আখের গুছানোর পর নিজ বট তলার  আশ্রমে ফিরেছেন। 

 শিষ্যদের বলে এসেছেন সাত দিন পর পর গুরু দক্ষিণা সহ ভুতের তাণ্ডবের খবর আশ্রমে পৌঁছাতে হবে। এবারও যদি ভুত ভৌতিক কাণ্ড ঘটায় তাহলে মেগা হোম যাগ করতে হবে, তবে এবার পাঁঠার রক্ত ও মুণ্ড বিশেষ ভাবে লাগবে। অদ্ভুত শান্তি করতেও হোতে পারে? 

বিকাশ চন্দ্র মন্ডল
  গদীবেড়ো, পুরুলিয়া

Leave a Reply