Dhrubajyoti Ghosh

খোঁজ
ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ

কবিতা খুঁজতে খুঁজতে
তুমি চলে যাও নির্জন বনবীথিকায়,
জ্যোৎস্নাস্নাত সাগরবেলায়,
হিমালয়ের ফুল্ল উপত্যকায়,
কিংবা চলে যাও সাঁওতালি গ্রামে,
মাদলের ছন্দে পা মেলাও
মহুল গাছের তলায়;
কিংবা চলে যাও যেখানে সূর্যহীনা অরণ্যানী
রয়েছে জননী পৃথিবীর অতন্দ্র পাহারায়

কখনও বা চলে যাও
অজন্তা ইলোরার লাস্যময়ী বিভঙ্গ বিভাজিকায়,
যেখানে সত্য শিব সুন্দরের অর্চনায়
স্থানু হয়ে আছে সময়

অশোকের শিলালিপিতে কি তুমি
প্রেমের কবিতা খুঁজে পাও?

কেউ তোমাকে ফেরায় খালি হাতে
কোথাও তোমার চোখের পেয়ালা উপচে যায়
খুশির মদিরায়

তুমি কি বোঝোনা
কবিতাও তোমাকে খোঁজে
যাতে সে কবিতা হয়ে ওঠে
তারও যে কাটে কত বিনিদ্র রাত!

তুমি তো রেখে যাও না কোনো চিহ্ন তোমার!
শরতের দুষ্টুমিষ্টি মেঘেরা
দলবেঁধে যায় খুঁজতে তোমায়…

তখন হয়তো তুমি
ঝর্ণাধারায় ভিজিয়ে আঁচল
থামিয়ে দিয়ে পল অনুপল,
চোখের তারা কুহেলি সজল,
মনের মণিকোঠায়
রাখছো সাজিয়ে
নুড়ি পাথরের কাছে বলা
ঝর্ণার প্রগলভ কবিতা।

২০.৯.২০২২

আত্মরতি
ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ

মনীষার কাছে সুখ এসেছিল পায়ে হেঁটে
তাই তো সে সুখ খোঁজে
সিগারেটের ছন্নছাড়া ধোঁয়ায়।
স্বপ্নের নীলাভ শয্যায়
একাকী ঈশ্বরী
হয়তো কারোর অপেক্ষায়।

এক সমুদ্র সফেন প্রেম অপ্রেম করে সফর
স্পর্শের পৃথিবীতে
আর কোন রোমাঞ্চ বেঁচে নেই জেনে
কার আসঙ্গ কামনায়
সে অকূলে ভেসে যায়!

কারা আসে তার মদিগ্লিয়ানী ড্রয়িংরুমে,
কাদের সে করবে আমন্ত্রণ
ঊর্বশী ইশারায়?
চোরাপথে বিষনীল ছড়ায়
শিরায় শিরায়

অবয়ব বাসি হলে
আসে তাজা অবয়ব
মন থাকে কোথায়, মনীষা
টেডি বেয়ারের লোমশ গায়ে
না
ওয়ার্ডরোবের মহার্ঘ প্রশ্রয়ে?

ইচ্ছেসঙ্গী ক্রুশবিদ্ধ, দেয়ালে ঝোলে
ছবির মতন…
কেউ কি স্বপ্নেও ভেবেছে
আদিম খেলায় যখন তখন
চে মার্কস্ কি লেনিনের হবে নির্বাচন!

মনীষার মন ছিল নিষ্পাপের মত উঁচু,
কাচপাত্রের মত ভেঙে
পাতালের দিকে যেতে যেতে
তার মনহীন শরীরী মুহূ্র্তেরা
তাকে অকাতরে দেয়
কিছু অশালীন বিজ্ঞাপন।

১৯.৯.২০২২

কবিতার জন্ম
ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ

তুমি বলেছিলে পারমিতা
আরো দীর্ঘ হল না কেন
আমার দীর্ঘ কবিতা?
থাকত না হয় আরো কিছুক্ষণ
প্রিয় শব্দরাজির মোহময় অনুরণন!

মোমের শিখা কাঁপা কাঁপা আলোয়
লিখেছিল তার শেষের কবিতা
দেওয়ালের সাদা পাতায়।
হঠাৎ অন্ধকার এসে বসেছিল
মেনি বেড়ালের মত
কালো মখমল জড়িয়ে সারা গায়ে।

তুমি আমি মুখোমুখি
মাঝখানে খোলা কবিতার খাতা…
যেন এক ছোট্ট সাঁকো আবছা অন্ধকার মাখা।
জানি আমি নও তুমি বনলতা সেন
নয় পাখির নীড় তোমার ও দুটি চোখ;
তবুও তোমার কাছেই
দু দণ্ড শান্তি পাই…
নিরুপায় আমি লিখি তোমাকেই অমোঘ।

তুমি কি জাননা
কবিতার শেষ শব্দ থেকে
খেজুরের সুগন্ধি রসের মত চুঁইয়ে পড়ে বিশুদ্ধ নৈঃশব্দ্য,
সেখানেই হয় উন্মোচিত শব্দের খোলস…
কবিতা আসে নগ্ন ঈভ হয়ে
আমাদের গোপন উদ্যানে,
চতুর আপেল লুকিয়ে থাকে
পাতার আড়ালে।

যেমন করে শীতের বিকেলে
পাখিরা সব ঘরে ফিরে এলে
থেমে যায় সব কোলাহল, বনের গভীরে
তখনই যায় শোনা শিশিরপতনের শব্দ;
তখনই এক একটি না লেখা কবিতার জন্মমুহূর্ত!

তুমি কি জাননা পারমিতা
হাজার শব্দের শবদেহের ওপর গড়া হয়
শুধু একটি কবিতার তাজমহল?

১৭.৯.২০২২

Leave a Reply