Dhrubajyoti Ghosh

dhrubajyoti ghosh

উৎসব উৎসব খেলা
ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ

উৎসব উৎসব খেলা খেলতেই হবে ;
দিনক্ষণ পূর্বনির্ধারিত:
ফসল উঠলো কি উঠলো না,
এসে গেল নবান্ন ;
বন্যার জল নামলো কি নামলো না,
প্রতিমার চক্ষুদান সুসম্পন্ন ;
সব পরিযায়ী ঘরে ফিরলো কি ফিরলো না,
পেরিয়ে গেল অষ্টমীর অঞ্জলীর লগ্ন;

চোপ্ খেলা চলছে
তাসা বাজছে
ভাঙ উড়ছে
মন্ত্র পড়ছে
বাজী ফাটছে….
বধির হও
অন্ধ হও
জেনে নাও আজ থেকে
তোমার চৌকাঠ তোমার নয়,
তোমার পথ
তোমার নয়,
তুমি আজ থেকে
নোটিশ বোর্ড পর্যন্ত বাইরের লোক।

এ খেলায় একপক্ষই জেতে,
অন্যপক্ষ শুরুর আগেই হারে।
ছাড় নেই তবু বাৎসরিক শুল্কের হারে ।

জারি মৃৎ-প্রতিমার বিউটি কনটেস্ট
ভীড় চাই ভীড় আরো ভীড়!
জিততেই হবে…
ভেঙে যাক ছাপোষা বাঁশের কেল্লা।
উৎসবের সেরা পুরস্কার পাবে তারা,
সেরা সঙ্গদোষে লিপ্ত যারা।

রাতের পর রাত হোক উৎসব
আসুক জনজোয়ার,
ভেসে যাক সামাজিক দূরগামীতা সবার ;
উৎসবের জন্য মানুষ
না মানুষের জন্য উৎসব?
কে দেবে উত্তর তার!

হাট করে খুলে দাও
অমোঘ স্বর্গের বিশাল সিংহদ্বার।
উৎসব উৎসব খেলা
অর্জিত গণতান্ত্রিক অধিকার।

এখন শরৎ
ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ

শরতের ঘননীল চোখে
কাশফুল কি দেখে তার সর্বনাশ!
আদিগন্ত শ্বেতপরীদের তন্বী হিল্লোল
বাতাসের সঙ্গে তাদের খুনসুটি অবিরল

শরৎ ছেড়ে তার আসমানী মেঘের প্রাসাদ
নেমে আসে মাঠে প্রান্তরে
শুভ্র আসঙ্গের প্রবল চোরাটানে,
রাজি সে দিতে বিসর্জন তার ইহকাল পরকাল
ভালবাসার সন্ধানে

একদিন সে শিশিরভেজা হেমন্তের
কাছে
পাকা ধানের গন্ধকে গচ্ছিত রেখে
চলে যাবে তার নি:সঙ্গ প্রাসাদে…

হয়তো তখন দেখবো
তুমি নিশ্চিন্দিপুরের দুর্গা হয়ে অপুকে নিয়ে,
দু হাতে সরিয়ে কাশফুল
ছুটে যাচ্ছো
সেই দূরে চলে যাওয়া
কালো ধোঁয়া ওঠা
স্বপ্নের ট্রেনের দিকে…

সেই সব ট্রেন চলে গেছে না ফেরার দেশে
নীলকণ্ঠ পাখির পালকে লেগে থাকে রক্তের ছিটে…

শহরের ফুটপাতে ভিখারিনীর সংসার
ঠেস দিয়ে আছে
এক শিরাওঠা শিউলি গাছে,
শিউলি ফুল থেকে ভেসে আসে
গরম ভাতের সুবাস

না কি মাংসপোড়া ঘ্রাণ?

Leave a Reply