
বন্ধু
~ড. নজরুল ইসলাম খান
বন্ধু-
যাকে সময়ে-অসময়ে ফোন দেয়া যায়। একদিন ফোন না দিলেই যে বলে-
কোনো যোগাযোগ নাই কেন?
অসুবিধা হয়নি তো কোনো?
ফোনে কথা না বলার কারণ বিস্তারিত জানতে চায়। বন্ধুর কোনো ক্ষতি হয়নি জেনে যে প্রশান্তি পায় মনে মনে।
বন্ধু-
পকেট খালি হলে যার পকেট নিজের পকেট মনে হয়। নিজের প্রয়োজনে যার টাকা খরচ করা যায় নির্ভয়ে। অভাব-প্রয়োজনের কথা বলা যায় নিঃসংকোচে। লজ্জায় মরতে হয় না সামনে কিংবা পেছনে।
বন্ধু-
যাকে নিয়ে বর্ষায় ভিজতে মন চায়। মেঘে ঢাকা আকাশের নিচে নির্মল বাতাসে উড়তে ইচ্ছে করে। যাকে নিয়ে অচেনা জনপদে পাখিদের মতোই নির্ভার প্রাণোচ্ছ্বল থাকা যায়।
বন্ধু-
যার সাথে কোনো প্ল্যান ছাড়াই ঘুরতে যাওয়া যায়। প্ল্যান কেনসেল হলেও যাকে কোনো কৈফিয়ত দিতে হয় না। যার অভিধানে ‘মাইন্ড’ শব্দের অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায় না। যার সামনে চেনা-অচেনা দুপুরেও সুখ-দুঃখের অনুভূতি প্রকাশ করা যায়।
বন্ধু-
যাকে পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠানে দাওয়াত না দিলেও বলে-
‘হয়তো বন্ধুর কোনো অসুবিধা ছিল’। মাইন্ড করে না। মাইন্ড কে সে অনেক আগেই ডাঙায় তুলেছে।
বন্ধুর সমস্যায় যে কাতর হয়, আর বন্ধুর অসুবিধায় যে কান্দে বিধাতায়।
সেই বন্ধু
সেই প্রকৃত বন্ধু।
বন্ধু-
যার সাথে মিথ্যা বলতে একটুও জড়তা আসে না মুখে। বন্ধুর সাথে মিথ্যা মানিয়ে যায়, সত্যের কাছাকাছি সুখে-দুখে।
পাশের কেউ যদি বলে-তোমার বন্ধু তোমাকে মিথ্যা বলেছে। বন্ধু শুনে বলবে-
‘নিশ্চয় বন্ধুর কোনো সমস্যা ছিল এই ভবে। আমার বন্ধু বেচারার কোনো দোষ নাই তবে’।
বন্ধু-
যার বাসায় অসময়ে ভাত খাওয়ার আব্দার করা যায়। বন্ধু ক্ষুধা লাগছে ভাত দে বলা যায়। খাবার খাওয়ার ব্যঞ্জনা না থাকলেও কাঁচা মরিচ আর পেয়াজ দিয়েও উদার পূর্তি করা যায়।
বন্ধু-
যার কাছে ঈদ পার্বনে চেয়ে চেয়ে উপহার নেয়া যায়। বন্ধুর জন্য যা কিছু করে মনে ভাবে না অপচয়। শুধু ঈদ নয় পুজোয় নয় মনের ভান্ডার খোলা জীবনব্যাপী রয়।
বন্ধু-
একটা ব্লাঙ্ক চেক বই। যার পাতায় পাতায় থাকে শুধু ভালোবাসার সই। একবিন্দু যাতনায় যার নাম ভেসে ওঠে-
আমারে ফেলে বন্ধু তুমি গেলে কই?
(ড. নজরুল ইসলাম খান, শিক্ষাবিদ, কথাসাহিত্যিক ও কবি)