You are currently viewing GALPO & POEM

GALPO & POEM

শেষের দিনে
কলমে-সিদ্ধেশ্বর হাটুই
সুখাডালী/সারেঙ্গা/বাঁকুড়া/পশ্চিমবঙ্গ

সারাটা জীবন অন্যের বোঝা নিজের ঘাড়ে
এক পা এক পা করে বয়ে চলেছো গাধার মতো।
নিজের জন্য ভাবলে না, নিজেকে রাখলে আড়ালে
দিনে দিনে তাই জেনে-শুনে শরীরে বাড়ালে ক্ষত।
ভেবেছিলে পাবে সুখ, আশা করেছিলে অন্যের কাছে,
তাই নিজের শত যন্ত্রণা রাখলে নিজের মনে ঢেকে।
নিজেকে চেয়েছিলে কী তুমি কভু বাসতে ভালো ?
চেষ্টা করেও পারলে না তা আপন জনের মুখ দেখে।
এই জীবনে আশায় আশায় কেটে গেল সকাল বেলা
এইতো আমাদের মহা মানব জীবন দুঃখের পথ চলা।
ছুটে ছুটে এখন তুমি ক্লান্ত, পরের ঝোঝা বয়ে বয়ে,
সেকথা তোমার অব্যক্তই থাকিবে, হবে না কাউকে বলা।
হাতড়ে কোথাও খুঁজে পেলে না সুখ, জীবনের এই মাঠে,
যত দিন দেবে ততদিন ভবে দু মুঠো পাবে মুখে আহার
পাওনা যত সুখ আছে বাকি, একদিন তুমি তা পাবে ঐ শ্মশান ঘাটে।

জঙ্গলে ভোট
কলমে-সিদ্ধেশ্বর হাটুই
সুখাডালী/সারেঙ্গা/বাঁকুড়া/পশ্চিমবঙ্গ

জঙ্গলের রাজার মেয়াদ শেষ হয়ে হয়েছে, আবার হবে ভোট । এত দিন ছিল বাঘ মামা রাজা, এবার আবার কে হবে রাজা কে জানে ! এদিকে ভোটের বাদ্যি বেজে চলেছে জঙ্গলের চারিদিকে। নিয়ম মেন একদিন বাঘ মামা সমস্ত দল গুলোকে নিয়ে একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকলেন। জঙ্গলের রাজা বাঘের কথায় জঙ্গলের সমস্ত দলের দু-জন করে সদস্য হাজির হলেন সেই বৈঠকে । বৈঠকে জঙ্গলের রাজা বাঘ প্রথমে উপস্থিত সকল সদস্য-সদস্যাকে বললেন-“দেখো ভাট করতে অনেক খরচের ব্যপার আছে, তারপর অনেক ঝুটঝামেলাও হয়। যদি ভোট না হয় কোন দলের অসুবিধে আছে ?“ একথা শুনে সিংহ বলল দেখুন গত ভোটে আমাদের দল মাত্র দশটি ভোটে হেরেছিল, এবার আমাদের ভোট বেড়েছে, ভোট তো হবেই । সিংহের এ কথা শুনে সব দলগুলো বলল ভোট তো হবেই, মেয়াদ শেষে ভোট হবে এটাই তো নিয়ম। শেয়াল তখন বলে উঠল-‘ভোট তো সঠিক সময়ে করতেই হবে মশায়, বাঘ রাজা হলে বাঘ-সিংহ দুই দলেরই সুবিধা, ছোট ছোট শুদের উপর অকথ্য অত্যাচার করে তা আর সহ্য করা যায় না, তাছাড়া ভোট হবে এটাই তো গণতান্ত্রিক নিয়ম। আর আপনারা বলেন ভোট না কী উৎসব! তাহলে এতো মারামারি, হত্যাকাণ্ড হয় কী করে? ভোটারদের সুরক্ষার কথাটাও তো সকলকে ভাবতে হবে।‘

শেয়ালের সঙ্গে জোটের পতিনিধি হিসেবে এসেছিল খরগোশ , শেয়ালের কথা শুনে ছোট খরগোশ বলল-“শেয়াল ঠিকই বলেছে, ভোট হবে। আর সঠিক সময়েই হবে। না হলে জঙ্গলে একনায়তন্ত্র চলবে তা আমরা মানছি না মানবো না। এ অত্যাচার আর সহ্য করা যাবে না।

রাজা শুনে বললেন-“ঠিক আছে ভোট হবে, পরের মাসের এক তারিখে , সকাল আট-টা থেকে দুপুর এক-টা পর্যন্ত, ততক্ষণে যাদের ভোট বেশি হবে তারাই জয়ী হয়ে কে রাজা হবে তারা ঠিক করবে, দেখা যাবে কাদের কত দম আছে।“

শুরু হয়ে গেল ভোটের প্রস্তুতি জোর কদমে। চারিদিকে এ দল-ও দলের সভা শুরু হয়ে গেল। বাঘেদের দলের বাঘের ছবি প্রতীক, সিংহর দলের সিংহ প্রতিক, আর হাতিদের দলের হাতির ছবি প্রতীক, আর এদিকে বাকি সমস্ত পশুরা যেমন-শেয়াল, হরিণ, বাঁনর, জিরাফ, খরগোশ, ভাল্লুক আরো ছোট ছোট যত পশুরা মিলে মহাজোট গঠন করে শেয়াল কে ভোটে প্রার্থীপদে রেখে এবার ভোটে লড়বে বলে ঠিক করেছে, তাদের প্রতীক থাকবে পাতা চিহ্ন।
সেই মতো নির্ধারিত দিনে নোমিনেশন্ ফাইল করা হয়ে গেলো। তার পর যত ভোটের দিন এগিয়ে আসছে গোটা জঙ্গলে অশান্তি বেড়েই চলেছে। দলগুলোর মধ্যে চরাগোপ্তা মারামারি শুরু হয়ে গেছে। সব দলেই চেষ্টা করছে অন্য দলের সদস্যদের টোপ দিয়ে নিজেদের দলে আনার।

বাঘেদের দল ঠিক করেছে ভাট হওয়ার পূর্বেই মহাজোটের কিছু সদস্য-সদস্যা কমাতে হবে, না হলে ওরা জিতে যেতে পারে। তাই ওদেরকে খেয়ে কিছু কমিয়ে দিতে হবে, আর ভয় দেখিয়ে ওদের ভোট দানে বাধা দিতে হবে, সেইমতো তারা কাজ শুরু করে দিয়েছে। সিংহের দলও ঠিক একেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এদিকে হাতিরা এ সমস্ত ব্যপার শুনে ভীষণ রেগে গেল। তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করল -আমরা এত আকারে বড়, শক্তি বেশি, এবার ভোটে জিততেই হবে। না হলে আমাদের সম্মান থাকবে না। তাই তারা মহাজোটের সঙ্গে গোপনে গোপনে যোগাযোগ শুরু করল। এদিকে শেয়ালের মহাজোট কৌশলে হাতিদের সাথে একটা চুক্তি করল। শেয়াল হাতিদের বলল- দেখো ভোটের দিন পর্যন্ত আমাদের সুরক্ষার দায়িত্ব তোমাদের, কারণ বাঘের দল আর সিংহের দল তাদের সদস্যদের মেরে খেয়ে নিচ্ছে। যদি আমরা ভোটে জয়ী হই তাহল তোমাদের থেকেই রাজা করব। হাতিরা ভাবল শেয়াল ঠিকই বলেছে, বাঘ কে আর রাজা হোতে দেওয়া যাবে না । হাতিরা ভাবল মহাজোটের সমর্থনে যদি আমরা জিতি কিম্বা মহাজোট জেতে তাহলে হাতি-ই রাজা হবে।

এভাবে চলতে চলতে ভেটের আগের দিন চলে এলো। রাত কাটলেই ভোট শুরু, ভোট নেওয়ার সমস্ত প্রস্তুতি সারা। সব দলগুলি নিজেদের নিজেদের ভোট যাতে বাড়ে সেই কাজে ব্যস্ত। বাঘের দল অনেক মাংস জোগাড় করে সকলকে খাওয়াচ্ছে, সিংহের দলও তাই, তারা সারা রাত ধরে সকলেই বেশ ভালোই খেল। এদিকে হাতির দল শেয়ালের মহাজোটের কেউ মাংসের লোভে বাঘের দলে বা সিংহের দলে গিয়ে যাতে তাদের শিকার না হয়ে যায়, সেদিকে খেয়াল রেখেছে। এভাবেই রাত কেটে গেল।

সকাল হতে না হতেই চারিদিকে সাজ-সাজ রব। ভোট শুরু হয়ে গেল । শেয়ালের মহাজোটের দলের সকলেই অনেক বাধা উপেক্ষা করে সকাল সকাল সকলে ভোট দিয়ে দিল। বাঘ -সিংহরা ভাবল ভোট তো দেবই। আগে দেখি অন্য দলের কী-রকম ভোট পড়ছে। হাতিরা তখন কিছু ভোট দিয়েছে আর কিছু হাতি মহাজোটের সদস্য-সদস্যাদের সুরক্ষার কাজে নিযুক্ত আছে।
চতুর শেয়ালরা বুদ্ধি খাটাল বাঘ-সিংহ-আর হাতির দলের মধ্যে কিভাবে লড়াই লাগানো যায়। কয়েকটি শেয়াল হাতিদের বলল-“ বাঘ –সিংহরা বলছে ভোটের পর তোমাদের আগে মেরে মেরে খাবে।“ এদিকে তখন কয়েকটি শেয়াল হাতিদের নজর এড়িয়ে বাঘেদের গিয়ে বলল-“হাতিরা বলছে ভোট হয়ে গেলেই বাঘ-সিংহদের শুঁড়ে করে ধরে ধরে আছড়ে আছড়ে মারবে। তারপর শেয়ালেরা যে যার নিরাপদ স্থানে চলে গেল। এই খবরটা বাঘেদের মুখে সিংহরাও শুনল। শুনে খুব রেগে গেল।

তারপর শুরু হয়ে গেল যুদ্ধ, হাতিরা আক্রমন করল বাঘ-সিংহদের । বাঘ-সিংহ রা মিলে হাতিদের কামড়া- কামড়ি করে মারতে শুরু করল। চলল প্রচণ্ড লড়াই, লড়াই যখন চলছে মহাজোটের সকলে তখন বুথ পাহারা দিচ্ছে আর কিছু কিছু ছাপ্পা ভোট দিচ্ছে। এদিকে তখন ঘড়িতে এক-টা বেজে গেছে। মহাজোটের সকল সদস্য –সদস্যারা এসে বলল-“বন্ধ করো তোমাদের লড়াই সময় শেষ হয়ে গেছে, আর ভোট দেওয়া যাবে না।“

সকলেই চুপচাপ হয়ে গেল। মহাজোটের থেকে ভোট গননার প্রস্তুতি শুরু করতে বলা হলো। ভোট গণনা শুরু হলো, দেখা গেল বাঘ-সিংহের দলের দু-একটি ভাট পড়েছে, আর হাতিদের কয়েকটি ভোট পড়েছে। আর মহাজোট হাজার ভোটে এগিয়ে আছে। অন্য দলের সদস্য-সদস্যারা ঝগড়া করে ভোট দিতেই পারেনি।

ফলাফল বেরোল মহাজোট জয়ী হলো। হাতিরা ভাবল মহাজোট মনে হয় আমাদেরই রাজা পদে বসাবে। কিন্তু তা হলো না, মহাজোটের সকল সদস্য-সদস্যারা মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়ে আগামী পাঁচ বছরের জন্য একটি শেয়াল কে রাজা হিসেবে ঘোষনা করল । এবার শেয়াল হলো জঙ্গলের রাজা।

মহাজোটের সদস্য-সদস্যারা শ্লোগান দিল-“এখন গায়ের জোরকে কেউ পায় না ভয়, দেখো হল ধুর্ত বুদ্ধির জয়।“ বাঘ –সিংহ আর হাতির দল মহাজোটের রাজা শেয়ালের শাসন মেনে নিতে বাধ্য হলো।

PHATO.jpeg

SIDDHESWAR HATUI

Leave a Reply