Jalal Shaheen

গল্পঃ যেভাবে ভেঙ্গে গেলো একটি মানবিক বিয়ে!
জালাল উদ্দিন লস্কর

সেলামালিকুম চাচা।
-ওয়ালাইকুমুস সালাম।তা সাতসকালে কি মনে করে এসেছ রহিমুদ্দি?
-একটা সমস্যায় পইড়া আপনের কাছে আইছি চাচা।
-কি সমস্যা মিয়া কইয়া ফালাও জলদি,শুনি।

উঠানের এক কোণে ইজি চেয়ারে বসে ডান হাতে দাঁড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে বা হাতে থাকা তসবিহ ছড়ার দানা গুনতে গুনতে আমান শেখ রহিমুদ্দির আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করে মনেমনে বুঝতে পারেন কোনো বড় সমস্যায় পড়েই ও পাড়ার রহিমুদ্দি তার কাছে এসেছে।
-আমতা আমতা করে রহিমুদ্দি বলে,চাচা লকডাউনে আগের মতো টমটমডা লইয়া খ্যাপ দিবার পারি না।গরীব মানুষ, হাতে সঞ্চয় কিচ্ছু নাই।সংসারের খরচ তো আর বন্ধ নাই।তার উপর ছোড মাইয়াডার শরীল খারাপ।ওরে ডাক্তার দেখানি দরকার চাচা।তাই কইছিলাম কি আপনে যদি কিছু টেকা দিয়া সাহায্য করেন তয় খুব উপকার হইতো।

-মাইনসের উপকার করাই আমার কাজ।সারাজীবন মাইনসের উপকার কইরাইতো কাটাইয়া দিলাম।আর কয়দিন বাঁচমু আল্লাহ জানে।তয় কত টাকা লাগবো তোমার?

-পাঁচ হাজার টেকা হইলেই চলবো।দেশের অবস্থা ভালা হইলে কামাইর টেকা দিয়া শোধ কইরা দিমু চাচা।

বা হাতে থাকা তসবিহর দানায় দ্রুত আংগুল চালাতে চালাতে আমান শেখ জানতে চানঃ

-কখন লাগবো টাকা?

-এহনই চাচা।কাচুমাচু করে জানায় রহিমুদ্দি।

-টাকা দিতে আমার কোনো সমস্যা নাই।তা এখন তো পৌষ মাস চলতাছে।ফিরত দেওনের লাইগ্যা তোমার তাড়াহুড়া করনের দরকার নাই।সামনের বৈশাখ মাসে দিয়া দিও।

-খুব খুশী হইলাম চাচা।আল্লায় আপনের ভালা করুক।

মেহেদীরাঙানো দাঁড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে আমান শেখ
রহিমুদ্দির দিকে একবার তাকালেন।তারপর বললেনঃ

–ঠিক আছে।তোমারে টাকা দিতে সমস্যা নাই আমার।তয় একটা কাজ করন লাগবো যে তোমার।

-কি কাজ? নরম আওয়াজে জানতে চায় রহিমুদ্দি।

-জান তো কিছু পাইতে চাইলে কিছু দিতে অয়।এইডাই এই দুইন্যাইর নিয়ম। আমান শেখের কন্ঠে কিছুটা প্রশ্রয়,কিছুটা শ্লেষ।

-তয় কি করন লাগবো আমার কইয়া ফালান চাচা।আপনে যেডা করবার কইবেন সেডাই করবার পারুম আমি।

আমান শেখ একটু সময় নেন।একবার চোখ বন্ধ করেন।আবার খুলেন।তারপর বা হাতে থাকা তসবিহ ছড়াটারে দলা পাকিয়ে মুখের কাছে এগিয়ে এনে ‘চুচু’ শব্দে তিনবার চুমু খেলেন।তারপর আসল কথায় ফিরে আসলেন।

-জানতো রহিমুদ্দি।হিন্দুপাড়ার রমেশ পাল তো চড়া সুদের কারবার করে।মানুষ বিপদে পইড়া তার কাছে গেলে খালি স্টাম্পে সই করাইয়া টাকা দেয় রমেশ।সময়মতো সুদে আসলে ফেরত দিতে না পারলে মামলা মোকদ্দমার ভয় দেখাইয়া হয়রানি কইরা টাকা আদায় করে।হের পরেও মানুষ রমেশের কাছে যায়।মুসলমানদের মাঝেও অনেকে এখন সুদী কারবারে টাকা খাটাইতাছে।আমি তো আবার এইসবের মধ্যে নাই।

রহিমুদ্দি কেবল মাটির দিকে মুখ করে ও-আ করে আমান শেখের কথায় সায় দিয়ে যায়।

গলা খাকারি দিয়ে এবার আমান শেখ বলেনঃ

-বিপদ কেউর চিরদিন থাকে না।দাঁড়াও আমি ভিতর বাড়িত থিক্কা আসতেছি।

রহিমুদ্দি বুঝতে পারে,টেকাডা তাইলে দিবো আমান শেখ।

পরমুহুর্তেই আমান শেখ ফিরে আসেন।

–এই নাও টাকা।তয় মাইয়ারে নিয়া কোনদিন যাইতায় ডাক্তারের কাছে?

–দুইএকদিনের মধ্যেই যাইমু চাচা।

-তয় যাইবার আগে আমারে একটু জানাইয়া যাইও।আমি মাইয়াডারে গিয়া দেইখ্যা আইমুনে একবার।

-আইচ্ছা চাচা।আমি এইবার যাই তাইলে।সেলামালিকুম।

বাড়ী ফিরে আসতে আসতে রহিমুদ্দি মনে মনে আমান শেখেরে ধন্যবাদ দিতে দিতে ভাবে সবই আল্লাহর ইচ্ছা।কিভাবে যে আল্লাহ পাক কোন সময় কার উসিলায় মানুষের উপকার করেন!

পরদিন বিকালবেলা আমান শেখ রহিমুদ্দির বাড়ীতে এসে উপস্থিত।সাথে কফিল মিয়া ও সামেদ আলী।
আমান শেখের সাথে এই দুইডারে দেইখা বুকটা কেঁপে উঠে রহিমুদ্দির।

–আহেন আহেন,আহেন চাচা।ভিতরে আহেন।আমরা কাইল সকালেই টাউনে যামু বড় ডাক্তরের কাছে।দেখি গিয়া কি আছে মাইয়াডার কপালে।

আমান শেখ বলেন,যাও বেটা।ফি আমানিল্লাহ। তয় তোমার মাইয়াডারে দেইখা যাইতে আইছি আমি।রোগী দেখন আমাগো নবীর সুন্নত।কারো অসুখবিসুখের খবর শুনলে আমাগো নবী স্থির থাকতে পারতো না রহিমুদ্দি।

রহিমুদ্দির মেয়ে সালেকা।কতোই আর বয়স।সালেকার সাথের মেয়েরা তিন মাইল দূরের বকশিগঞ্জ হাইস্কুলে পড়াশোনা করে।রহিমুদ্দি পাঠশালা পাশের পর সালেকারে আর পড়তে দিতে চায় নি।তাই সালেকার পড়া বন্ধ।
তিন বছর আগে সালেকা পাঠশালা পাশ করে এখন সংসারে মায়ের সহকারী হিসাবে কাজ করছে।

আমান শেখ সালেকারে দেখেন।একটা মলিন বিছানায় সালেকা শুয়ে আছে। মাথায় লম্বা ঘোমটা টেনে শিয়রে বসে আছে সালেকার মা আংগুরা বেগম।চেহারায় বিষন্নতা। কপালে দুঃশ্চিন্তার ভাজ।

-চিন্তা কইরা না বেটি।তোমাগো সালেকা ভালা হইয়া যাইবো।
কালকেই ডাক্তারের কাছে লইয়া যাও।আরো টাকার দরকার হলি পরে আমারে ফোন করি জানাইবা।আমি বিকাশে টাকা পাঠাইয়া দিমু নে।

রহিমুদ্দি ও তার স্ত্রী আংগুরী বেগম হাজী আমান শেখের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা বোধ করতে থাকে।মনেমনে তাকে ফেরেস্তা রূপে কল্পনা করতে থাকে।এই যুগে এমন ভালো মানুষও তাহলে আছে আল্লাহর দুনিয়ায়।এই সাতপাঁচ ভাবনার মধ্যেই আমান শেখের ডাকে সন্বিত ফিরে পায় রহিমুদ্দি।

-ও মিয়া রহিমুদ্দি।ধর।এই কাগজডায় একটা টিপ দেও আগে।নিজের নাম তো লেখতে পারতায় না! না, পার?
থাক টিপসই দিয়া দিলেই হইবো।

স্টাম্পে টিপসই দেওয়ার কথা শুনেই রহিমুদ্দি বুঝতে পারে ফাঁদে পা দিয়েছে সে।এই ফাঁদ থেকে আর বের হওয়ার উপায় নেই।

-হায়াত মউতের মালিক আল্লাহ।কার আগে কেডা মরে কেডায় জানে।একটা প্রমান থাকা দরকার।

এই বলে আমান শেখ আরো ৩ হাজার টাকা রহিমুদ্দির দিকে বাড়িয়ে দেন।

রহিমুদ্দি ইতস্তত করতে থাকলে আমান শেখ বলেনঃ
ধুর মিয়া তোমার মাইয়া আর আমার মাইয়া তো একই।সালেকারে চিকিৎসা করাইয়া ভালা কর।টাকা লাগলে আরো দিমু।শুধু স্টাম্পটাতে টিপসইডা দিয়া দেও।একটা প্রমান থাকুক লেনদেনের।

কফিল মিয়া ও সামেদ আলীর কাছে আরো আগেই রহিমুদ্দির মেয়ে সালেকার রূপের বহু প্রশংসা শুনেছেন
বিপত্নীক আমান শেখ।আজ নিজ চোখে দেখে বিশ্বাস হয়েছে।মুখে যতো যাই ভালো কথা বলুক ভেতরে ভেতরে কামনাপোকার কামড়ে ক্ষতবিক্ষত হতে থাকা আমান শেখের নিজের ভিতরে থাকা পশুটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো।
মনেমনে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেলেন আমান শেখ।

তেমন কোনো অসুখবিসুখ করেনি সালেকার।শহরের ডাক্তার সবকিছু শুনে কিছু টেস্টফেস্ট করিয়ে শেষমেষ যা বললেন তা এইরূপঃ

-সালেকার শরীরে কোনো অসুখ নেই।অসুখ কিছুটা তার মনে।তার সাথের মেয়েরা ধেইধেই করে স্কুলে যায়।প্রজাপতির মতো নেচে বেড়ায়।আর সে একলা একলা সারাদিন বাড়ীতে মায়ের সাথে সংসারের ঠেলা সামলায়।এই চিন্তায় তার মানসিক বিষণ্ণতা দেখা দিয়েছে।ঠিক হয়ে যাবে।তবে সালেকার তার বয়সী দুইএকজন সংগীসাথী হলে ভালো হয়।

সালেকাকে নিয়ে শহর থেকে রহিমুদ্দির ফিরে আসার খবর শুনে আমান শেখ ভাবলেন একবার গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে আসবেন।এই সুযোগে সালেকাকেও দেখা হয়ে যাবে।নিজের চোখে সালেকাকে দেখার পর থেকেই কেমন কেমন জানি লাগে আমান শেখের।তার নিজের বউ মারা গেছে দশ বছর আগে শেষ সন্তান জন্ম দেওয়ার সময়ে ঠিক সময়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারেন নি বলে।বিয়ে আর করা হয়ে উঠে নি।ইবাদত বন্দেগীতে ব্যস্ত থাকেন।বড় ছেলেকে বিয়ে করিয়েছেন।বউমার কোল জুড়ে বছর না পেরোতেই নাতনী এসেছে।নাতনীর সাথে ঢং করেন।কিন্তু ভেতরে ভেতরে একটা কালসাপের দংশন অনুভব করেন আমান শেখ।চোরা চোখে পুত্রবধুর রূপ সুষমা উপভোগ করেন সমানতালে।আর সুযোগ পেলেই কথায় কথায় ‘মাশাল্লাহ’ ‘আলহামদুলিল্লাহ’ আর ‘সোবহানাল্লাহ’ র তুবড়ি ফোটান।

একরাতে বিশেষ মুহুর্তে আসলামকে তার বউ সেহেলী বলেই ফেলেঃ
-একটা কথা কই।রাগ করবায় না তো আবার?

আসলাম চিন্তায় পড়ে যায়।সে তার বউ সেহেলীকে অনেক বেশী ভালোবাসে।সেহেলীও সেটা জানে।তাহলে কি বলতে চায় সেহেলী?

-রাগ করমু ক্যান?তোমার উপর রাগ করছি কোনোদিন বিয়ার পর থেইকা? আসলাম উদাসভাবে বলে।

-আমার শশুর আব্বারে একটা বিয়া করাইয়া দিলে কেমন হয় গো? সেহেলী আসলামকে বলে।

-ক্যানে তোমার আবার এই কথা মনে আসল ক্যানে?কি হইছে আমারে খুইলা কও।

–কিছু না।পুরুষ মানুষ।একজন সংগী দরকার।এমন অনেক খেদমতের তার দরকার যেইডা নিজের স্ত্রী ছাড়া আর কেউ করতে পারে না।

-তা ঠিক।তয় আব্বাতো বিয়া করবার লাগি রাজী হয় না।আমি দুইএকজনের মাধ্যমে তার লগে কথা বলাইয়া দেখছি।হের মত নাই।

–ওহ! আমার কেমন জানি লাগে।তুমি যখন গঞ্জের বাজারে বা দূরে কোথাও যাও তখন শশুর আব্বা নানা বাহানায় আমার আশপাশে ঘুরঘুর কইরা বেড়ায়।কি জানি কইতে চায় চোখের ভাষায়। আমার ভয় লাগে জান। সেহেলী থামে।

-ধুত্তেরি। তোমার যতো খামাকা চিন্তা।আসলাম শেখ প্রসঙ্গ বদলাতে চায়।

-তুমি বলছ খামাকা চিন্তা।আমরা মেয়েরা পুরুষের চোখের ভাষা বুঝি।এই তুমি যখন আমারে আদর সোহাগ কর তোমার চোখের ভাষা কি তুমি বুঝতে পার?আমি ঠিকই বুঝবার পারি।তোমার বাপের চোখ ভালা না।আমি তোমারে কইয়া রাখলাম কিন্তু। সেহেলী জেদ করে।

–বাদ দাও এসব এখন।তোমার হইছে?হইলে এখন ঘুমাও।গাঙ্গে নয়া জোয়ার আইছে।শেষ রাতে জাল বাইতে যামু।এখন ঘুমাও।আমারেও ঘুমাতে দাও।

-আমার সাথে না কি উনার কথা আছে।সময়ে কইবো বলছে।আমার ডর লাগে তুমি শেষ রাইতে গাঙে গেলে পরে নি আবার সময় হইছে মনে কইরা সে আমার কাছে সেই কথা কইবার আয়।-স্বামী আসলাম শেখের সাথে আরো ঘনিষ্ঠ হয় সেহেলী।আসলামের ততোক্ষণে নাক ডাকা শুরু হয়ে গেছে।

কার্তিক মাসের বেশী বাকি নাই আর।আমান শেখের কাছ থেকে নেওয়া টাকা শোধ করতে হবে রহিমুদ্দিকে।লকডাউন উঠে গেছে অনেক আগেই।কিন্তু কামাইরোজগার ঠিকমতো হচ্ছে না রহিমুদ্দির।যা হয় তা দিয়ে কোনোরকমে সংসার চলে।টমটম কেনার সময় গ্রামীণ ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি শোধ করতে আরো নানান জায়গা থেকে ধার দেনা করেছে রহিমুদ্দি।এসব ঋণ কিভাবে শোধ করবে এই দুঃশ্চিন্তায় সারাক্ষণ আচ্ছন্ন হয়ে থাকে রহিমুদ্দি।বাড়ীতে এসে স্ত্রী কন্যার সাথেও সেভাবে কথা বলে না।কেমন জানি মনমরা হয়ে থাকে।

আশ্বিন মাসের শেষ প্রায়।সাতসকালেই টমটম নিয়ে রাস্তায় নেমেছে রহিমুদ্দি।অনেক দূরের একটা খ্যাপ মিলেছে আজ।
এক খ্যাপেই দিন সাবাড়।বেশ টাকাও পাওয়া যাবে।দুই-চারদিন টমটম নিয়ে বের হতে না পারলেও সমস্যা হবে না।ফেরার পথে রোজগার না হলেও ক্ষতি নাই।

কুসুমপুর থেকে টমটম নিয়ে ফিরছে রহিমুদ্দি।নিজ গ্রাম মালতিপাড়ায় যাবে।অনেক দূরের পথ।মাঝে মহাসড়কের কিছু অংশ পড়ে।এই জায়গাটা ঝুঁকিপূর্ণ। রহিমুদ্দি মনেমনে আল্লাহর নাম স্মরণ করে।তার মাথায় এসে ভর করে ঋণ চিন্তা। কার্তিক মাসে কিভাবে আমান শেখের কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত দেবে,আর অন্যান্য জায়গা থেকে নেওয়া ঋণই বা কি করে যে শোধ করবে।টমটমটা বিক্রী করে দিলে হয়তো আমান শেখের টাকাটা দিয়ে দিতে পারবে।কিন্তু টমটম বিক্রী করলে পেট চলবে কি করে? এইসব সাতপাঁচ ভাবতে গিয়ে মানসিকভাবে ক্লান্তশ্রান্ত রহিমুদ্দি অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে।টমটমের নিয়ন্ত্রণ হারায় রহিমুদ্দি।নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের খাদে গিয়ে পড়ে টমটমসহ রহিমুদ্দি।
আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসে।এগিয়ে আসে হাইওয়ে পুলিশের একটি টহল দল।দ্রুত রহিমুদ্দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।অবস্থা ক্রিটিকেল দেখে জরুরী বিভাগ থেকে রহিমুদ্দিকে রেফার করা হয় জেলা সদর হাসপাতালে।

ততোক্ষণে আংগুরী বেগমের কাছে রহিমুদ্দির এক্সিডেন্টের খবর পৌঁছে গেছে।আংগুরী বেগম দৌঁড়ে আমান শেখের বাড়ীতে গিয়ে হাউমাউ কান্নায় আকাশ ভারী করে তুললো। আমান শেখ আছরের নামাজ আদায় করছিলেন।নামাজ শেষে ঘর থেকে বের হয়ে সবকিছু শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেনঃ
মরার উপর খাঁড়ার ঘা। যাক যা হইছে হইছে।চিন্তা কইরা কাইন্দাকাইট্রা লাভ নাই।ও আংগুরী তুমি বাড়ীতে যাও।আমি তোমাগো বাড়ীতে আইতাছি।

একটু বাদেই আমান শেখ রহিমুদ্দির বাড়ীতে এসে হাজির।
-রহিমুদ্দির বউ কই গো?ও রহিমুদ্দির বউ? সালেকা ও সালেকা?
সালেকা কাঁদতে কাঁদতে ঘর থেকে বের হয়ে আসলো।
–মা জানি কই গেছে।আমার বাপ বাঁচবো নি।ও আল্লাহ তুমি ক্যামতে এতোবড় বিপদ দিলা আমরারে। সালেকা চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।

আমান শেখ চোরা চোখে সালেকারে দেখে নেয় এক পলক।
শান্তনা দেওয়ার জন্য বলেঃ
-কাইন্দো না সালেকা।আমি আছি না? দেখি কি করবার পারি।

এর মধ্যে আংগুরী বেগম ফিরে এসেছে।ও পাড়ার নাজিম উদ্দিন রহিমুদ্দির বিপদের কথা শুনে আংগুরী বেগমকে কিছু টাকা দিয়েছে।বেশী না।দুই হাজার টাকা।

-,কিন্তু এত কম টাকায় কিছুই হইতো না–আংগুরী বেগম ভাবে।তাহলে উপায়?

-তোমরা তিয়ার হও গো আংগুরী।জেলা সদর হাসপাতালে যাইতে হইবো এক্ষুনি।

-সালেকাও যাইবো আমরার লগে?

-এমন জোয়ান মাইয়ারে একলা বাড়ীত থুইয়া যাইবা নি কোনো? আমান শেখ জানতে চান।

ঘন্টাদেড়েকের মধ্যেই জেলা সদর হাসপাতালে এসে পৌঁছালেন আমান শেখ।সাথে আংগুরী বেগম ও সালেকা।

জ্ঞান ফিরেছে রহিমুদ্দির।মাথার আঘাতটা গুরুতর।বেশ কয়েকটা সেলাই দিতে হয়েছে।আরেকটু হলে হয়তো বাঁচানো যেতো না পেশেন্টকে-জানালেন কর্তব্যরত ডাক্তার।রক্ত লাগবে। রক্তের গ্রুপ ও নেগেটিভ।হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে এই গ্রুপের রক্ত নেই।

ডাক্তার তড়িঘড়ি করে তিনজনের রক্তের স্যাম্পল নিলেন।যদি মিলে যায়।ডোনার পাওয়া মুশকিল ডাক্তার জানালেন।

একটু পর জানা গেলো আমান শেখের রক্তের গ্রুপ ও নেগেটিভ।মা মেয়েরটা ম্যাচ করে নি।যাক তবু একজন পাওয়া গেলো।

আমান শেখ সাথেসাথে রক্ত দিয়ে দিলেন।কৃতজ্ঞতায় আংগুরী বেগম এবং সালেকার চোখে জল এসে গেলো।

সারারাত রহিমুদ্দির বেডের পাশেই কাটিয়ে দিলেন আমান শেখ।সাথে আংগুরী বেগম ও সালেকা।

নার্সরা এসে একটু পর পর স্লিপ ধরিয়ে দেয়-এটা আনুন,ওটা আনুন।এই ইঞ্জেকশন আনুন ৩ টা।হাসিমুখে আমান শেখ নিজে গিয়ে ফার্মেসী থেকে কিনে আনেন।আসার সময় সালেকার জন্য এটাসেটা আনতেও ভুল করেন না।

পরদিন সকালে আমান শেখ গ্রামে চলে যেতে চাইলে আংগুরী বেগম ও সালেকার কান্না দেখে কে।শহরের কিছুই চিনে না।তারপর নাই টাকা পয়সা।তাদের কি হবে?রহিমুদ্দিরই বা কখন কি হয় কে জানে।

আমান শেখ বিকালেই ফিরে আসবেন কথা দিয়ে হাসপাতাল থেকে বিদায় নেয়।এর আগে ডাক্তারদের সাথে কথা বলে বুঝতে পারেন, রহিমুদ্দিন এখন শংকা মুক্ত।

শশুরকে বাড়ী ফিরে আসতে দেখে সেহেলী চমকিত হয়।আসলাম শেখ সেই সকাল থেকে কোথায় যে গেছে এখন পর্যন্ত ফিরবার নাম নেই।

-বউ মা,ও বৌ মা।আসলাম কই গেছে?

  • কই গেছে কিছু কইয়া যায় নাই আব্বা।

-আমার কিছু টাকার দরকার।আবার শহরে যাইতে হইবো।

-ট্যাকা আমি পামু কই আব্বা?আমার কাছে তো আপনের সাওয়াল কোনোসময় ট্যাকাপয়সা দেয় না।

-তুমি কি যে কউ বউ মা! সে তো আমার জানা।আসলাম শেখ তো এখনো বাপের উপর খায়। সিন্ধুকের চাবিটা আসলামের কাছে।আর সিন্ধুকের মধ্যেই আমার টাকা।

-ও আব্বা,যাওনের আগে কি মনে কইরা জানি সিন্ধুকের চাবিডা আমার হাতে দিয়া গেছে আপনের ছাওয়াল।

-সিন্ধুকটা খোল বউমা।সিন্ধুকটা খোল।

-দাঁড়ান যাইতাছি।

আগের দিনের বিশালাকৃতির সিন্ধুক। সেহেলী গিয়ে সিন্ধুকের ডালাটা খুললো।ডালা খুলে সিন্ধুকের ভেতরের বিশালত্ব দেখে অবাক হয়ে গেলো।এতো বড় সিন্ধুক! কুল কিনার নাই!!

আমান শেখ এসে দাঁড়ালেন।বললেন,বউমা তোমাকে সিন্ধুকটার ভিতরে ঢুকতে হইবো।এরপর আমি বলে দিবো কোন খোপে টাকার পুটুলিটা রাখা আছে।

সেহেলী তড়াক করে সিন্ধুকের মধ্যে ঢুকে পড়লো।আমান শেখের ভেতরের কালসাপটা আবার কুটকুট করে তাকে দংশন করতে লাগলো।দুষ্ট বুদ্ধি খেলে গেলো আমান শেখের মাথায়।কোন খোপে টাকার পুটুলীটা আছে সেহেলীকে সে কথা বলার পর আমান শেখ সিন্ধুকের ডালাটা ফেলে দিলেন।সিন্ধুকের ভিতরটা অন্ধকার হয়ে গেলো।সেহেলী প্রথমে কিছুই বুঝতে পারছিল না।পরক্ষণেই বিদঘুটে অন্ধকারে প্রচন্ড ভয় পেয়ে ভেতর থেকে সিন্ধুকের ডালায় আঘাত করতে লাগলো।আমান শেখ সিন্ধুকের ডালা মেলে ধরলেন আবার।

সেহেলী কিছুটা ভয়ে কিছুটা লজ্জায় কিছু সময়ের জন্য ম্রিয়মাণ হয়ে রইলো।তারপর খোপ থেকে টাকার পুটুলিটা শশুরের দিকে বাড়িয়ে দিলো।সিন্ধুক থেকে বের হওয়ার মতো শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেললো সেহেলী।

আমান শেখ দুহাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,এবার বেরিয়ে আসো বউমা।আমি তোমাকে সাহায্য করছি।

নিরূপায় সেহেলী দুহাত বাড়িয়ে দিলে নিচে দাঁড়ানো আমান শেখ অনেকটা টেনেহিঁচড়ে কিংবা বলা চলে পাঁজা কোলা করে বাইরে নিয়ে আসলেন।এসময় আমান শেখের চোখে সেহেলীর চোখ পড়ে গেলে দুজনেই কেমন যেন মিষ্টতা জড়ানো লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে উঠলো। সেহেলী ভাবতে লাগলো,বিয়ের পর স্বামী আসলাম শেখও কোনোদিন এভাবে পাঁজা কোলা করে আদর সোহাগ করে নি।
আজ বাড়ী আসুক।তাকে সবকিছু খুলে বলবে সেহেলী।

টাকার পুটুলিটা খুলে একটা ১ শ টাকার নোট সেহেলীকে দিতে চাইলেন আমান শেখ।সেহেলী সেটা নিতে রাজী হলো না।

সন্ধ্যার আগে আগেই জেলা শহর হাসপাতালে চলে আসলেন আমান শেখ।আরো ৩/৪ দিন পরে রহিমুদ্দির রিলিজ হবে।সেই পর্যন্ত থাকতে হবে এখানেই।গ্রামে ফিরে যাওয়ার আগে একদিন সালেকাকে নিয়ে শহরে ঘুরে বেড়াবে–মনেমনে পরিকল্পনা করে আমান শেখ।সুযোগ বুঝে কথাটা পাড়েন আংগুরী বেগমের কাছে।আংগুরী বেগম রাজী হলেও বেঁকে বসে সালেকা।আমান শেখের মনো বাসনা আর পূর্ণ হয় নি।
সালেকার প্রতি এ কারনে কোনো ক্রোধ জন্ম নেয় নি আমান শেখের মনে।বরং সালেকাকে ঘিরে আমান শেখের মনে রঙের ঝিলিমিলি বেড়েই চললো আরো।

হাসপাতাল থেকে রহিমুদ্দিকে রিলিজ করে দেওয়া হলো সোমবার সকালে।আমান শেখ একটা সিএনজি রিজার্ভ করে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।যথাসময়ে বাড়ী পৌঁছালেন তারা।রহিমুদ্দিকে আরো অনেকদিন বিশ্রামে থাকতে হবে।রোজগারে যাওয়া চলবে না।আমান শেখ বললেন,চিন্তা করো না রহিমুদ্দি।আমি দেখবো কি করা যায়।

বিনয়ে গদগদ হয়ে রহিমুদ্দি বললো,চাচা আপনে আমার জন্য যা করছেন তার ঋণ শোধ করার ক্ষমতা আমার নাই।

-আছে,আছে।ক্ষমতা আছে।মাথা খেলাও।পাইয়া যাইবা মিয়া।চিন্তা কইর না।এখন আমি যাই।পরে এসব কথা কইমুনে তোমারে।

সেদিন রাতে সেহেলী আসলাম শেখকে তার বাপের সিন্ধক খুলে টাকা নেওয়ার সব কাহিনীই শুনালো।শুনে আসলাম শেখেরও জানি কেমন কেমন লাগলো বিষয়টা।বাপকে তো আর ফেলতে পারবে না।তাই কি করা যায় ভাবতে লাগলো।

আমান শেখ রাতে খেতে বসলেন।ভাত বেড়ে দিচ্ছে সেহেলী।পাশেই বসে পুত্র আসলাম শেখ বাবাকে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে লাগলো।পুত্রের এমন ব্যবহারে খানিকটা বিস্মিত হলেন আমান শেখ।

বাবা আপনেরে একটা কথা কইতাম।রাগ কইরেন না আবার।
আসলাম শেখ বিনয় করে পিতাকে বলে।

কি কথা। কউ শুনি।রাগ করবার কথা হইলে তো রাগ করবারই পারি।আচ্ছা কউ শুনি।

-বলছিলাম কি।মা মারা গেছে অনেকদিন হয়।আপনার খেদমতের লাগি একটা মানুষ দরকার।

-আমারে বিয়া করনের কথা কইতাছ নি মিয়া?এই কথাডা এতোদিনে তোমাদের মাথায় ঢুকলো তাহলে!

-না,ভাবছিলাম আপনে আবার কিতা মনে করেন।

-তোমাদের খোঁজে আছে নি তেমন কেউ?

-না,তেমন করে ভাবি নাই।আপনের অনুমতি পাইলে একটা বিহিত করার চেষ্টা করতাম পারমু নে।

-শুন।আমিও মনেমনে দীর্ঘদিন ধইরাই ভাবতাছি বিষয়ডা।এমন অনেক ব্যাপার আছে যেখানে স্ত্রীর কাজ আর কেউ করতে পারে না।কথা কউ, ঠিক না বেঠিক?

-ঠিক,আব্বা।ঠিক।

-তাইলো শোনো তোমরার তেমন কষ্ট করন লাগতো না।আমি মনেমনে পাত্রী ঠিক কইরা রাখছি।তোমাদের পছন্দ না হইয়া যাইতো না।

-কোনখানে আব্বা?
আসলাম শেখের স্ত্রী সেহেলী উৎকর্ণ হয়ে আছে।কে সেই পাত্রী যাকে তার শশুর আব্বা পছন্দ করে রেখেছেন।

-রহিমুদ্দির মেয়ে সালেকা।সালেকারেই আমি বিয়া করমু।
আমান শেখ জলদগম্ভীর স্বরে নিজের ইচ্ছার কথা জানালেন ছেলে এবং ছেলের বউকে।

-বউমাও একা।তারও একজন সংগী দরকার।সালেকা হবে বউমার উপযুক্ত সংগী–আমান শেখের গলায় দৃঢ়তা।

-রহিমুদ্দির মেয়ে সালেকার তো বয়স অনেক কম আব্বা।রহিমুদ্দি রাজী হইবো এই বিয়াতে?

-রহিমুদ্দি হইবো।রহিমুদ্দির বাপ শুদ্ধা রাজী হইবো।আমি রহিমুদ্দির পেছনে কতডি ট্যাকা খরচ করছি এই পর্যন্ত জান তোমরা।আমার একটা উদ্দেশ্য আছিল।আর সেইডা হইলো সালেকারে বিয়া করমু আমি। মানবিক দিক চিন্তা কইরা সবকিছু করছি আমি।ভাবছি রহিমুদ্দি তার মাইয়ারে বিয়া দিবার টাকা কই পাইবো?সে কারনে আগাগোড়া মানবিক চিন্তা কইরা সবকিছু করছি আমি।

সমস্তকিছু শুনে আকাশ ভেঙ্গে পড়লো রহিমুদ্দির মাথায়। কিন্তু ঋণের ফাঁদ থেকে মুক্তির কোনো পথই যে খোলা নেই তার সামনে।উপায়ান্তর না পেয়ে আসলাম শেখের প্রস্তাবে রাজী হয়ে যায় রহিমুদ্দি।কিন্তু বেঁকে বসে সালেকা।কিছুতেই সে এই ‘বুইড়ার’ কাছে বিয়ে বসবে না।সাফ জানিয়ে দিয়েছে বাবা মাকে।ভীষণ বিপদে রহিমুদ্দি।

নানাভাবে একান সেকান হয়ে সালেকার বিয়ের খবর জানাজানি হলো পুরো গ্রামজুড়েই।সালেকা যে এ বিয়েতে রাজী নয় সে কথাও গোপন রইলো না।

সালেকার সহপাঠি কয়েকজন এসে সালেকার সাথে দেখা করলো।কথা বললো।তারা এখন হাইস্কুলের শেষের ক্লাশে পড়ে।লেখাপড়া বন্ধ না করলে সালেকাও তাদের সাথেই পড়তো এখন।

সালেকার বান্ধবী পারভিন।গ্রামের মেয়ে হলেও বেশ স্মার্ট।লেখাপড়ার পাশাপাশি হালজামানার সব খবরই রাখে। পারভিন সালেকাকে বলে,তুই রাজী হয়ে যা।পরে যা করার আমি করবো।তবে তোর বিয়ে হবে না এটা মনে রাখিস।
সালেকা বিয়েতে রাজী এ খবর আমান শেখের বাড়ীতে গেলে পরদিন আসলাম শেখ সেহেলীকে নিয়ে এসে সালেকার হাতে আংটি পরিয়ে গেলো।বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করা হলো।রহিমুদ্দির বাড়ির যাবতীয় খরচের টাকা যোগান দিলেন আমান শেখ।

বিয়ের সব আয়োজন সম্পন্ন। পবিত্র শুক্রবারে বাদ জুমা বিয়ের সময় স্থির হয়েছে আমান শেখের ইচ্ছাতেই।

সালেকার বান্ধবী পারভিন তার স্কুলের হেডমাস্টার সাহেবের সাথে দেখা করে তাদের উপজেলার ইউএনওর মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে শুক্রবার সকালে ফোন করে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের বিয়ে ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইউএনওকে কাকুতিমিনতি করে অনুরোধ করলো।বিস্তারিত জেনে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেন ইউএনও সামিনা মৌসুমী।

ইউএনও’র নির্দেশে বেলা দুইটার সময় একদল পুলিশ নিয়ে বিয়েবাড়িতে হাজির হলেন সেখানকার সহকারী কমিশনার আশরাফ আজিম।বিয়ের আসর থেকে আটক করা হলো আমান শেখকে।প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত মেয়ের বিয়ে দেবেন না মর্মে রহিমুদ্দির কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হলো।

পুরো এলাকায় পারভিনের সাহসিকতা ও নামধাম ছড়িয়ে পড়লো।

সেই রাতে সেহেলী অনেক চেষ্টা করেও আসলাম শেখকে জাগাতে পারলো না।সেহেলীর খুব ইচ্ছা করছিল কল্পনায় নিজেকে নববধূর আসনে বসিয়ে আসলাম শেখের সাথে রোমাঞ্চকর একটা রাত কাটাবে।কিন্তু পিতৃশোকে স্তব্ধ হয়ে যাওয়া আসলাম শেখের পৌরুষ সে-রাতে আর জাগলো না।

জালাল উদ্দিন লস্কর
শিক্ষক ও সাংবাদিক
মাধবপুর, হবিগঞ্জ
মোবাইলঃ ০১৭২৪২৩৫৭২৪

Leave a Reply