মাধব মণ্ডল

গল্প

ফোকাস

বন্য মাধব

আমাদের এডুকেশন বিটে মাঝে মাঝে ঢেউ লাগে। তখন কত খবর করবি কর। শেষ আর হয় না। একটা খবর ভেঙে আর একটা,আরেকটা ভেঙে ফের একটা, চলতেই থাকে। এই ধর অধ্যাপকদের সম্মেলন। ভারি জমকালো সব ব্যাপার স্যাপার। সম্মেলন মানেই মোচ্ছব। এলাহি কান্ড কারখানা।

এই ধর বইমেলা। মান্যিগন্যি সব মানুষ।ফাঁকফোকরহীন সিক্যুরিটির বেড়াজাল। অবশ্য  বিতর্কিত লোকজন কোন সম্মেলনে এলেই আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হয়। তাদের হাঁচির বা ঢেকুর তোলার কারণও না বাদ পড়ে।সবার আগে সব খবর নিয়ে তবেই শান্তি।

ক’টা স্ক্রুপ সকাল হলেই বোঝা যাবে। তারপর চিফের ফোন আসবেই – ওয়েল ডান। এটুকু শোনার জন্যে জীবন বাজি ধরা। হনহন করে হাঁটিয়েদের পিছন পিছন দুড়দাড় ছোটা। মাঝে মাঝে না চাইতেই বৃষ্টি। তবে তাতে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির ব্যাপারটা থাকেই। আমাদের কাজ হাঁসেদের মত। পাঁক ঘাটো কিন্তু কোনো পাঁক যেন হাতে গায়ে না লাগে। লাগলেই দৌড় থেকে ছিটকে পড়। 

সোর্স তৈরি করা আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সোর্সকে তেলে জলে রাখাও। এই ধর এবারের কথাটাই। সাংবাদিক সম্মেলন করে যারা যারা টিউশনের বিরুদ্ধে গরমাগরম কথা বলছেন, সোর্স থাকলেই একটা ফোনে জানা যায় তাদের বাড়ি ঢুকতে কত জোড়া জুতো ডিঙোতে হয়।

এবার কলেজ শিক্ষকদের সম্মেলণের প্রকাশ্য সভা দিশাগ্রাম  কলেজ মাঠে। অটোমেটিক্যালি কভার করার দায়িত্ব আমার ঘাড়েই। শীত শীত আমেজ চলছে। মন্ত্রী আসছেন। আশপাশের গ্রামের মানুষ কাতারে কাতারে আসবেই। সেটাও একটা কপি। জনপ্রিয়তা বোঝানোরও একটা চাপ থাকে স্থানীয় নেতাদের ওপর। তারাও নেমে পড়ে লোক জোটাতে। মন্ত্রী না তাঁর হেলিকপ্টার দেখতে এত ভিড় বোঝার চেষ্টা চালাতে হবে।

দুপুর দু’টোয় মূল অনুষ্ঠান। আমি আর ফটোগ্রাফার তারাদা পৌঁছে গেছি দশটায়। চেনা জানা নেতাদের সঙ্গে একটু খেজুরি করেই কার মনে ক্ষোভ আছে আভাস ইঙ্গিতে খুঁজতে লাগলাম। সৃজনদা সদ্য পদ হারিয়েছেন, উসখুস করতে করতে মুখ খুললেন। বরাবরই তিনি সাংবাদিক ঘেঁষা। খবরে থাকতে ভালবাসেন। কতবার যে আমাকে স্ক্রুপ দিয়েছেন তার ঠিকঠিকানা নেই। সেই সৃজনদা প্রায় দশবছর পর পদ হারালেন। হুঁ, জব্বর একটা খবর তো হবেই। ভাবতে না ভাবতেই টুক করে একটা কাগজ গুঁজে দিলেন। বাঃ! এই না হলে সোর্স !

মনের দুঃখ বনে প্রকাশ করতে চান না সৃজনদা।  মন্ত্রীর সঙ্গে বরাবর খুব ভালো সম্পর্ক। পদ ফিরে পাবার সব চেষ্টা তলে তলে তিনি নিশ্চিত করেছেন। আজকেও আরো করবেন এটাই তো স্বাভাবিক।হাসিমুখে সব তদারকি করছেন।

মন্ত্রী এলেন হেলিকপ্টারে।উৎফুল্ল জনতার বিপুল গর্জন।তাঁকে স্বাগত জানাতে অন্যান্যদের সঙ্গে সৃজনদাও হাজির।অন্যান্যদের সঙ্গে দ্রুত ফর্মালিটিজ সারলেও মন্ত্রী সৃজনদার সঙ্গেই ক্রমাগত কথা বলছেন। মঞ্চেও একপাশে নিয়েই বসেছেন।মাঝে মাঝেই কথা বলছেন।

গতে বাঁধা কিছু প্রশংসা ছুঁড়ে দিয়েই বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে কোন রীতিনীতির ধার না ঘেঁশেই সৃজনদাকে যথাযোগ্য সম্মানে পদে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়ে দিলেন আর সমিতিতে তার অপরিহার্যতা মনে করিয়ে দিলেন। বিপুল হাততালিতে সভা ফেটে পড়ল।ফ্লাশের ঝলসানি আর থামে না। একেই বলে ফোকাসে থাকা ।  সৃজনদা পারলেন ।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতায় এম. এ.;যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বি.এড.।১৯৯০ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় একফর্মার কবিতার বই ‘ছায়াপাত’।বইটি আনন্দবাজার ও বর্তমান পত্রিকার খুব প্রশংসা পেয়েছিল।এবছর বর্ধমান লিটিল ম্যাগাজিন বইমেলায় প্রকাশ পাচ্ছে ‘ব এ বর্ণমেলা’।মূলতঃ ছড়া এবং কবিতা নিয়ে লেখালেখি।রাজ্য সেচ দপ্তরে কর্মরত।ছোটদের বেসরকারি একটি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।জীবন শুরু সেন্ট জুডস্ একাডেমিতে শিক্ষকতা দিয়ে।কালান্তর দৈনিকে স্টাফ রিপোর্টারিও করেছি।১৯৬৮ এর মার্চে জন্ম।জন্মস্থান সুন্দরবন, বর্তমানে সোনারপুরে বসবাস।

প্রকাশিতব্য বই এর তালিকা –

১) আশ শ্যাওড়া
২) রক্ত জমেছে কুয়াশায়
৩) ভালবাসাই শেষশব্দ
৪) এক থেকে একশ
৫) শব্দেরা লুকিয়ে ঐ শূন্যতায় 
৬) এলাডিং বেলাডিং
৭) পান্না হীরে চুনী
৮) টুকরো টাকরা
৯) প্রলাপ বকছি

এবং ছোটদের আরো ১১টি।

Leave a Reply