চিকিৎসার জন্য মানুষ
ভারতে যাবেনা কেন ?
মোঃ মমতাজ হাসান
দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার ও দ্রব্যমুল্যের উর্ধ্বগতির পরে দেশে সর্বাধিক আলোচনার বিষয় মনে হয় চিকিৎসা ব্যব¯’া। এর কারণ মানুষের মনে চিকিৎসা ব্যব¯’া ও চিকিৎসকদের বিষয়ে প্রচুর ক্ষোভ ও অসন্তোষ আছে। প্রচুর খরচ হলেও এখানে ভাল চিকিৎসা পাওয়া যায়না। তাই বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রতিবছর বিদেশে, বিশেষতঃ ভারতে চিকিৎসার জন্য যান। ভারতীয় হাই কমিশনার রিভা গাংগুলি দাস একবার বলেন, তারা ২০১৯ সালে তারা পনের লক্ষ ভিসা ইসু করেছেন(বিবিসি বাংলা ০১/০১/২০২০)।
ধারণা করা সংগত এর মধ্যে বৃহৎ অংশের কারণ চিকিৎসা। থাকা খাওয়ার খরচ বাদ দিলে প্রায় অনুরুপ খরচে কখনও এর চেয়ে কমে সেখানে ভালো মানের চিকিৎসা পাওয়া যায়। তাই সামর্থ্যবানেরা তো বটেই ,এমনকি এর চেয়ে নীচের শ্রেণীটিরও ভরসা ভারতের কোন সুপরিচিত হাসপাতাল। এই বহির্গমন দেশে চিকিৎসা ব্যব¯’ার দুর্দশাজনিত কারণে কিনা তা নিয়ে বাহাস থাকলেও সংখ্যাটা ক্রমশঃ বেড়ে চলেছে। এর মধ্যে অনেকে আবার এক ঢিলে দুই পাখী মারেন অর্থ্যাৎ চিকিৎসার সংগে ভ্রমণের কাজটাও সেরে নেন।
বিগত দুই বছর ধরে দেশে চলেছে কোভিডের প্রকোপ। মানুষ তখন খুব কঠিন একটা সময় পার করেছেন। এই সময়ে স্বাভাবিকভাবেই ডাক্তারদের কদর ছিল বেশ উঁচুতে। বিশেষ করে কোভিড আক্রান্ত লোকজন ও তাঁদের আত্মীয়স্বজন অত্যন্ত অসহায়ভাবে চিকিৎসকদের উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। চিকিৎসকগণও এর প্রতিদান কম দেননি। দিনরাত পরিশ্রম ও সেবা দিয়েছেন। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেককে করোনার কবলে পড়ে প্রাণ দিতে হয়েছে। স্বল্প পরিসরে তাদের ত্যাগ স্বীকারের বিবরণ দেয়া সম্ভব নয়। এই ঋণ পরিশোধ করারও নয়। তার পরেও কথা থাকে, তাদের ভাবমুর্তির আগের সেই কালো দাগটি মোচন হলনা।
আমি নিজেও ভারতে চিকিৎসার জন্য গিয়েছি। আমরা ছিলাম এক ঢিলে দুই পাখী মারা-দের দলে। প্রাপ্ত চিকিৎসাকে ফলাফলের নিরিখে অনেক ভালো মানের বলতে হবে। বিশেষভাবে মনে ধরেছে তাদের পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যপারটা। কতটা নিখুঁতÑতা বলতে না পারলেও,নির্ভরতার ঘাটতি বোধ করিনি যেটা দেশে সচরাচর ঘটে থাকে। টেকনিশিয়ানের দল সার্বক্ষণিক কাজ করেন। আমরা গিয়েছিলাম ভোর পাঁচটার দিকে।
যেতে বলা হয়েছিল তারও আধঘন্টা আগে। কিš‘ দেশীয় মানসিকতা অনুসরণে ভেবেছিলাম যে এত ভোরে কি আর কেউ ল্যাবে আসবে। তাই একটু দেরী করে যাই। যাওয়ার পর দেখা গেল সেখানে আগে হতেই অনেকে বসে আছেন Ñবেশ লম্বা লাইন। এরপর ভেতরে প্রবেশ করি। প্রায় ২৫-৩০ জন টেকনিশিয়ান কয়েকটি সারিতে বসে নমুনা নি”েছন। নমুনা দিতে তেমন দেরী হল না। অনেক কর্মী দেখে মনে হল একটু বয়স্ক ও অভিজ্ঞ লোকটির কাছে যাই, আশা পরীক্ষাটা যেন ভাল হয়। কার কাছে যাব ভাবতে একটু সময় নি”িছলাম। একজন কর্মী এগিয়ে এলেন।
হিন্দিতে বললেন, যে কোনখানে বসতে পারেন। সবাই সমান দক্ষ। এখানে পরীক্ষা নিরীক্ষায় সামান্য হেরফের হবেনা। নমুনা দিলাম। পরে বিভিন্ন জনকে জিজ্ঞাসা করেছি জবাব প্রায় একই রকম ছিল। আমার মনে পড়ল দেশে আমার ছেলের একবার ডেংগুতে আক্রান্ত হবার কথা। ঢাকার একটি বেসরকারী ক্লিনিকে তার চিকিৎসা করাতে ব্যয় হয়েছিল অনেক টাকা। এরপর সু¯’ হয়ে উঠলে তাকে বাড়ীতে নিয়ে আসি।
ঢাকার ডাক্তারের পরামর্শ ছিল কয়েকদিন পরে একবার ডাক্তারকে দেখিয়ে নেবার। সে অনুযায়ী গেলাম ঠাকুরগাঁও-এর ¯’ানীয় এক বড় বেসরকারী হাসপাতালে। ডাক্তার যথারীতি রক্ত পরীক্ষা করতে দিলেন। পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা গেল ছেলেটির ভয়ানক ডেংগু,প্লাটিলেট কাউন্ট অনেক নীচে নেমে গেছে। ডাক্তার আমাদের মুখের দিকে ভাবলেশহীনভাবে চেয়ে রইলেন কিছুক্ষণ,তারপর ধীরে ধীরে বললেন,ওষুধগুলো খান। পরে একবার দেখিয়ে নেবেন। দিন কয়েক পরে আবার সেই পরীক্ষাগুলো করালাম। এবার ফলাফল স্বাভাবিক। ডাক্তার জিজ্ঞাসা করলেন,এখন কেমন আছেন।
বলা হল, ভাল।আমি বললাম আমার ছেলেতো প্রথমবার দেখানোর আগে থেকেই ভাল আছে।পুরো ব্যাপারটা তাকে আগেই বলা হয়েছিল।বললাম, কেবল চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে দেখাতে এসেছিলাম। এরই খেসারত দিতে হল বেশ কিছু টাকা আর একগাদা ওষুধ সেবন। এর কোন জবাব পাওয়া গেলনা। ডাক্তার সাহেব কোম্পানীর অনুগত কর্মচারীর ন্যায় নীরব থাকলেন। ভেলোরের ক্রিশ্চিয়ান হাসপাতালে চিকিৎসার পাশাপাশি ওষুধও দেয়া হয়। আমাকে দেয়া ওষুধগুলি ছিল বিদেশী। অনেক ক্ষেত্রে তারা তাদের দেশীয় ওষুধও দেন। দেখা গেছে এদেশে একই উপাদানের ওষুধ দেয়া হলেও এখানে মাত্রা বেশী থাকে। এর অর্থ দাঁড়ায় এখানকার ওষুধের গুণমান ও কার্যকারীতা কম যে কারণে বেশী পরিমাণে খেতে হয়।
কোভিডের পরের কথা।একই ছেলের শ^াসকষ্টের সমস্যা দেখা দিল। ঠাকুরগাঁও আধুনিক সরকারী হাসপাতালের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে ¯’ানীয় একটি আধুনিক বেসরকারী ক্লিনিকে দেখালাম। তিনি উ”চমাত্রার এন্টিবায়োটিক দিলেন। এক র্কোস খাবার পরেও উপসর্গ কমলনা। পরে ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি আরেক কোর্স দিলেন। এবারও খাওয়া হল। কিš‘ ফল পুর্ববৎ। এবার ছেলেকে নিয়ে যাই ঢাকায়। সেখানে তাকে তিনটি হাসপাতাল Ñইবনে সিনা ল্যাব এইড ও পপুলারে দেখানো হয়।
ইবনে সিনার চিকিৎসক ঠাকুরগাঁও-এর ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন দেখে চোখ কপালে তুললেন,বললেন এতাকিছু খেয়ে ফেলেছেন। আমি আপনাকে কোন এন্টিবায়োটিক দিলাম না,তার প্রয়োজন দেখছিনা। যে ওষুধ দিলাম সেগুলো খান। আশাকরি ভাল হয়ে যাবেন। ল্যাব এইডের ডাক্তার তেমন কিছু বলেননি;তিনি কেবল শুনেছেন,ভেবেছেন এবং মাথা নেড়েচেড়ে প্রেসক্রিপশন লিখেছেন।
সবশেষে দেখানো হয় পপুলার হাসপাতালে। পপুলারের চিকিৎসক(বারডেম জেনারেল হাসপাতাল ও ইব্রাহীম মেডিকেল কলেছের বক্ষব্যধি ও মেডিসিন বিষয়ের অধ্যাপক)বললেন, উনারতো এন্টিবায়োটিকের সমস্যা না। এন্টিবায়েটিক কেন দিল। ছেলেকে বলেছিলাম বিষয়টা সিভিল সার্জনকে জানানো উচিৎ। কিš‘ ছেলে রাজী হলনা। বলল কী লাভ! আবার এদের কাছেই আসতে হবে। তখন আবার ঝামেলা বাধাবে। চিকিৎসা না পারুক ঝামেলা বাধাতে ভালই পারবে।
কোন কোন ক্ষেত্রে দেশীয় চিকিৎসকদের ব্যাপারে কারো কারো এবং আমার নিজেরও ভাল ধারণা আছে। তবে এ সংখ্যা মনে হয় অনেক কম। কোন কারণে এই ধারণার প্রসার ঘটেনি। হতে পারে তাদেরকে খুঁজে পাওয়া সহজ নয় বা তারা প্রচার বিমুখ মানুষ। ব্যবসায়িক প্রসারের জন্য প্রচারের প্রয়োজন আছে। তাই দেখা যায় শহরে একজন নতুন চিকিৎসক আসার পর কয়েকদিন ধরে চলে ব্যাপক মাইকিং ,শহরের লোকজনকে জানিয়ে দেয়া হয় তিনি এসেছেন। এছাড়া পোষ্টার প্রভৃতি থাকে।
কোন কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে দেখেছি টেবিলের সামনে হাতের কাছে ভিজিটিং কার্ড রাখেন,সে রকম পরিচিত লোক পেলে কয়েকটা কার্ড হাতে ধরিয়ে দিয়ে রোগী পাঠাতে বলেন। ব্যবসায়িক ব্যাপারে এরা খুব সজাগ। প্রচু ভীড়ের মধ্যেও কাজটি সম্পন্ন করেন। ‘প্রচার বিমুখদের’ পরিচিতি বিস্তৃত হলে হয়তো বা বহির্গমনের ঢেউটা কমতঃ। কিš‘ মুশকিল হল ভালো-মন্দ নির্ধারণের দায় নিতে হয় নিজেকে এবং এর উপায় বহুলাংশে জনশ্রুতি, কিছু অংশ অভিজ্ঞতা নির্ভর যেগুলি সব সময় নির্ভরযোগ্য নয়। এ রকম একটি ঘটনার মুখোমুখি হই রাজশাহীতে।
অফিসের একজন সহকর্মী অসু¯’ হয়ে পড়লেন। রাজশাহী মেডিকেলের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তাকে হার্টের বাইপাস সার্জারী করার পরামর্শ দিয়ে বিপুল পরিমাণ খরচের একটা হিসাব ধরিয়ে দিয়েছেন। সহকর্মীটির সে টাকা যোগাড়ের সামর্থ্য ছিলনা। তিনি বিষম চিন্তিত, অফিসে বসে কেবল ঘামেন আর হাঁপান। আমরা দেখলাম তার অব¯’া ভাল নয়,তাকে ছুটি নিয়ে কলকাতা যাবার পরামর্শ দেয়া হল । তিনি এতই অসু¯’ যে পাসপোর্ট ও ভিসা করার ক্ষমতাও নাই। আমি উদ্যোগ নিলাম। দাপ্তরিক অনুমতি সহ পাসপোর্ট ভিসার কাজ সমাধা হল। তিনি কলকাতায় গেলেন।
চিকিৎসা শেষে ফিরে অফিসে প্রথমদিনে তাকে বেশ উৎফুল্ল দেখা গেল। চেয়ারে বসেই ¯’ানীয় চিকিৎসকদের উদ্দেশে ছোট একটা অপ্রীতিকর সম্ভাষণ উ”চারণ করে বললেন,এরা আমাকে মেরে ফেলত। কলকাতায় ডাক্তার বলেছেন সমস্যা আছে তবে তেমন জটিল কিছু নয়। কিছু ওষুধ দিয়েছেন.তাতেই সেরে যাবে। ছয়মাস পর বা সমস্যা না হলে এক বছর পরে যেতে বলেছেন। বাংলাদেশ সম্পর্কে কলকাতার ঐ চিকিৎসকের খুব আগ্রহ। সহকর্মীটির কাছ থেকে নানা বিষয়ে জেনেছেন।
এক পর্যায়ে বলেছেন, তিনি লন্ডনে পড়াশোনা করার সময়ে তার সংগে কয়েকজন বাংলাদেশী ডাক্তারও ছিলেন। তিনি সহকর্মীটিকে প্রশ্ন করেছেন,‘‘আপনারা এতদুরে না এসে সেখানে যাননা কেন?’ সহকর্মীটির কাছে এর কোন জবাব ছিলনা। এই ঘটনা এখন হতে ২৪/২৫ বছর আগের। কিছুদিন আগে সহকর্মীটির খোঁজ নিয়েছি। তিনি ভাল আছেন। নিয়ম মেনে চলেন। বাইপাস সার্জারী করলে কী হত বলা যায়না।
ভেলোরের হাসপাতালের আরেকটি উদাহরণ দিতে চাই। পরীক্ষা নিরীক্ষার ফিস জমাদানের জন্য লাইনে দাঁড়ানো আমার স্ত্রী,আমি পাশে দন্ডায়মান ;সময়টা কাটানোর জন্য দুজনার মাঝে টুকটাক কথা চলছে। আমার স্ত্রীর পেছনে দাঁড়ানো একজন মহিলা,আমাদেরকে লক্ষ্য করে কিি ত হাসছেন বলে মনে হল। উৎসাহ পেয়ে বলতে গেলাম দিদি আপ কাঁহাসে…। আমার কথা শেষ হলনা তিনি জবাব দিলেন, ঢাকা থেকে এসেছেন। ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও অনেক দুরে।তিনি কেবল নামটা শুনেছেন তবু খুশী হলেনÑদেশের লোক ।
দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ কথা হল তার সংগে।বললেন,কোমর ও পায়ে সমস্যা ছিল,ঠিক মত হাঁটাচলা করতে পারতেন না।ঢাকায় বছর দেড়েক চিকিৎসা করিয়েছেন। ফলাফল বলতে আগে হাঁটাচলা করতে পারতেন পরে সেটা বšধ হয়। এক সময় বিছানায় আশ্রয় নেন,চলাফেরার কাজাটা সারতে হত হুইল চেয়ারে ,পরিবারের অন্য কারো সহায়তায়। এরপর আত্মীয় স্বজনের পরামর্শে ঢাকার চিকিৎসা বন্ধ করে দেন, ছেলেকে সংগে নিয়ে ব্যবহৃত হুইল চেয়ারটিতে বসেই ফ্লাইটে করে চলে আসেন চেন্নাই,সেখান থেকে সড়ক পথে ভেলোরে।
প্রথমবার তাকে ভেলোরে কিছুিদন থাকতে হয়েছে। এরপর এবার এসেছেন দ্বিতীয়বার, হুইল চেয়ার ছাড়াই।বললাম আপনার ছেলেকে দেখছিনা? জানালেন,এবার ছেলেকে আনেননি,একাই এসেছেন। জিজ্ঞাসা করি কেমন আছেন? হেসে বললেন,দেখতেই পা”েছন। এরপর ঐ ভদ্র মহিলার কাছে যদি বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যব¯’া সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় তিনি কী জবাব দিবেন! ভাল চিকিৎসার জায়গা বলতে তার মুখে আগে আসবে কোন নামটা,ঢাকা নাকি ভেলোর।তাকে দোষারোপ করার উপায় নাই।একইভাবে চিকিৎসা নিতে ভারতে যাওয়া অন্য লোকদেরকেও দায়ী করা যাবেনা। কারো কাছ থেকে বিপরীত কোন উ”চারণও পাওয়া যাবেনা।
কারণ মনে হয় একটাইÑসেখানে মানুষের প্রয়োজনে চিকিৎসা আর দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঠিক তার বিপরীত-চিকিৎসার প্রয়োজনে মানুষ। ‘চিকিৎসার’ জায়গায় আপনি ‘হাসপাতাল’ বা ‘ক্লিনিক’ শব্দগুলোও বসাতে পারেন। দায়ী আসলে আমাদের নিয়তি। সবরকম ব্যব¯’া আছে এবং আধুনিক বিশে^র সংগে পাল্লা দি”িছ। অনেক হাসপাতাল ক্লিনিকের গায়ে ‘বিশ^মানের’ ‘আধুনিক’ ‘অত্যাধুনিক’ শব্দগুলি কখনও আধুনিক সব যন্ত্রপাতির ছবি সহ বেশ বড় আকারে ঝোলানো।তবু এসব ফেলে নগদ কড়কড়ে টাকা দিয়ে আসছি অন্য দেশে। গরীব দেশের এই গরীব মানুষেরা এতই বিলাসী!
উদাহরণ বাড়িয়ে লাভ নেই,পরি¯ি’তির দিকে তাকানো দরকার। গত কোভিড কালে স্বা¯’্য ব্যব¯’ার ভেতরের চিত্রটা পরিষ্কার বোঝা গেছে। পিয়ন চাপরাশিদের কোটি কোটি টাকা আর বড় বড় বাড়ীর গল্পগুলি বোধ হয় এখনো অনেকের মনে আছে। স্বা¯’্য ব্যব¯’া কার কাছে কোথায় জিম্মি তার একটা পুণার্ংগ হদিস বের করা গেলে ভাল হত। সদি”ছা হয়তো কারো কারো আছে তবে সবকিছু দুর্বৃত্তায়নের ফাঁদে আটক। কিছুদিন আগে স্বা¯’্য বিভাগ দেশের বেসরকারী হাসপাতাল-ক্লিনিকে অভিযান চালায়। বহু হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এসব হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধ হবার পুর্ব পর্যন্ত অনেক রোগীর চিকিৎসা দিয়েছে। যদি কেউ জানাত চিকিৎসার নামে ঐসব আসলে কী ছিল,রোগীরা কেমন চিকিৎসা সেবা লাভ করেছেন,খরচ কত হয়েছে,এখন কতজন ভাল আছেন, কতজন প্রাণ বাঁচাতে ভারতে গেছেন বা অকালে পরপারে গেছেন এবং এতসব অন্যায়ের জন্য কার কতটা শাস্তি হয়েছে। এটা স্বা¯’্য ব্যব¯’াপনার চিত্র, অন্যদের দোষারোপ করা নিষ্প্রয়োজন।
সবকিছুর মুলে সেই পুরোনো কথাটাই ঘুরে ফিরে আসেÑ জবাবদিহি নাই।যে যেমন পারেন চলেন। এটাই নিয়ম। মনে হয় পুরো স্বা¯’্য ব্যব¯’াকে ঢেলে সাজানো দরকার। এই ব্যব¯’ার উপরে মানুষের আ¯’া নিতান্ত কম । প্রথমে আ¯’া ফেরানো দরকার।তা না হলে চিকিৎসার জন্য রোগীদের ভারতে যাওয়া কেবল বাড়বে। আ¯’া নষ্ট হওয়ার বড় কারণ নীতি-নৈতিকতাহীন বাণিজ্য। অনেকে নিজে বাণিজ্য করেন, আবার অনেকে বাণিজ্যের কর্মচারী হিসাবে কাজ করেন।সু¯’ লোকের প্লাটিলেট সংখ্যা অনেক কমিয়ে ফেললে আ¯’া জন্মাবে কীভাবে।
কিম্বা চিকিৎসকের দায়িত্ববোধ যদি কেবল মালিকের স্বার্থ রক্ষায় নিয়োজিত থাকে তাহলেও মানুষের আ¯’া বাড়বেনা। অহেতুক পরীক্ষা নিরীক্ষা চাপিয়ে দেয়ার ব্যাপারে আবারো আমার ছেলের প্রসংগটি টানতে হয়। ইবনে সিনার চিকিৎসক একটি এক্সরে দেন এবং ফিল্মটি রিপোর্ট ছাড়াই সরাসরি তার কাছে নিয়ে যেতে বলেন।এতে খরচ পড়েছিল দু’শ টাকা।
ল্যাব এইডের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বেশ কতকটা সময় ধরে মাথা চুলকে নানা চিন্তাভাবনা করে অনেকগুলো পরীক্ষা লিখলেন। কাউন্টার গিয়ে জানা গেল খরচ পড়বে প্রায় এগার হাজার টাকা। পপুলারেও পরীক্ষা নিরীক্ষা ছিল, খরচ পড়েছে এক হাজার ছয়শত প াশ টাকা। পাঠক এসব বিষয়ে আমার চেয়ে বেশী অভিজ্ঞ ,তাই আর কোন মন্তব্য নয়।
আমাদের চিকিৎসা ব্যব¯’ার ভুতগুলি সম্পর্কে সবাই জানেন কিš‘ কেউ সেসব তাড়াতে পারেন না। উল্টো অনেককে মনে হয় ভুতের সহযোগী।কোভিডের ন্যায় একটি বড় সংকট স্বা¯’্য ব্যব¯’াকে কেবল চেনার সুযোগ দিল। এরপর ভাল চিকিৎসার সুযোগ পেতে মনে হয় আরও অনেক বড় কোন দুর্যোগের প্রয়োজন হবে। অবশ্য তারপর কেউ বেঁচে থাকলে তবে চিকিৎসার প্রশ্ন।
মোঃ মমতাজ হাসান
গোষপাড়া ঠাকুরগাঁও। ২২/০৯/২০২২খ্রীঃ।
যথাযথ বিশ্লেষণ, প্রিয় মোমতাজ হাসান। আমার নিজের অভিজ্ঞতা যা ছিল ভারতে গিয়ে চিকিতসার্থে যাওয়া পাবলিকদের সাথে মতবিনিময়ে তা হাজার গুণ বেড়েছে। ঘর ঘর কা কাহানী!