Md. Nayan Ali

অপেক্ষা
লেখকঃ মোঃ নয়ন আলী

দুপুর বেলা রুমের মধ‍্যে শুয়ে আছি। হঠাৎ আমার ফোনটা বেজে উঠলো,ফোনটা হাতে নিয়ে তাকিয়ে দেখি আমার gf তাসনিয়া ফোন দিয়েছে, রিসিভ করতেই ওদিক থেকে বলতে লাগলো….

“ওই কুত্তা ফোন রিসিভ করতে এতক্ষণ লাগে।
“রিসিভ করতে কই দেরি হলো,ফোন আসা মাত্রই তো রিসিভ করলাম।
“আবার আমার মুখে উপর কথা বলতেছো।

[আমি জানি যে এর সাথে কথার মাধ‍্যমে পেরে উঠবোনা। তাই ও যা যা বলছে সবগুলোই মেনে নিতে হবে]

“আমার ভুল হয়েছে’Sorry। তুমি কেমন আছো।
“আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো, তুমি কেমন আছো।
“আমিও ভালো আছি।
” নয়ন তোমার সাথে কতদিন ধরে দেখা হয়নি, আজকে দেখা করব।

[তাসনিয়ার মুখে এই কথাটা শুনে আমিতো খুশিতে আত্মহারা, প্রায় ১৫ দিন ধরে তার সাথে আমার কথা হয়নি কারন ওর বাসা থেকে আমার বাসা থেকে প্রায় ৭ কিলোঃ দুরে তাছাড়া তাসনিয়া মানা করছিলো বেশি বেশি দেখা করতে ]

“সত‍্যি বলছো, তুমি আজকে দেখা করবে।
“হুম সত্যিই বলছি আজকে তিস্তা কলেজে দেখা করব।
“অনেক খুশি লাগতেছে,কতদিন পর তোমার সাথে দেখা হবে।
“আমারো লাগতেছে, তবে বেশিক্ষণ তোমার সাথে কথা বলতে পারবোনা।
“দিলেতো মনটা খারাপ করে।
“আসলে আব্বুর তিস্তা কলেজে বিকেল ৪ টার দিকে মিটিং আছে, আমি যাবো আব্বুর সাথে, আব্বুর যতক্ষণ মিটিং শেষ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত কথা বলতে পারবো।
“ওকে অপেক্ষায় থাকবো।
“ওকে। ঠিক ৪ টার সময় কিন্তু আসবে ।
“আমি ৩ টা থেকে অপেক্ষায় থাকবো।
“ওকে বাই।

এই বলে তাসনিয়া ফোনটা কেটে দিলো।
আমি তারাতারি করে গোসল শেষ করে পোশাক বদলিয়ে খাওয়া দাওয়া করে, ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি ২:৪৫ বেজেছে। তাই বাইকটা বের করে পাড়ি দিলাম তিস্তা কলেজের দিকে। তিস্তা কলেজে পৌঁছে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি ৩:৩০ বাজে। তাই আশপাশ টা একটু ঘুড়াঘুড়ি করে তাসনিয়াকে ফোন দিলাম কিন্তু ফোনটা সুইচ অফ দেখছি। আরো বেশ কয়েকবার ফোন দিলাম কিন্তু প্রতিবারেই সুইচ অফ দেখাচ্ছে। তাই ধৈর্য্য ধরে আবারো অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকলাম, কখন এই অপেক্ষার প্রহর গুনা শেষ হবে কখন আমার প্রিয়টার সাথে আমি দেখা করবো। হঠাৎ পিছন থেকে একটা বাচ্চা মেয়ে বলে উঠলো ভাইয়া ভাবির জন‍্য একটা ফুল নেন প্রতিটা ফুল ১০ টাকা করে। মেয়েটার কাছ থেকে ২ টা ফুল নিয়ে ৫০ টাকা দিয়ে বললাম বাকি টাকাটা তুমি রেখে দাও। মেয়েটা আমাকে ধন‍্যবাদ নিয়ে চলে গেলো, আমি আমার বাইকের কাছে এসে বাইকে মাথাটা হেলান দিয়ে শুয়ে ফুল দুটোর দিকে চেয়ে একটা ছোট কবিতা বলতে লাগলাম,

“কখন আসবে তুমি প্রিয়তমা
ভেঙ্গে আমার অপেক্ষাটা,
শেষ হবে কখন এই ধৈর্য্যর বাধন
কখন মিলিত হবে এই দুটি মোন।

কবিতাটা শেষ হতে না হতেই আমার ফোনে তাসনিয়ার আন্টির ফোন আসলো, ফোনটা ধরতেই ওদিক থেকে যা বললো তা শুনে আমার হাতে থাকা নিস্পাপ ফুল দুটো পরে গেলো, চোখ দিয়ে অঝরে অশ্র গড়িয়ে পরতে লাগলো। ওদিক থেকে যা বললো,,,

“নয়ন তাসনিয়া আর তার বাবা বাইক এক্সিডেন্টে মারা গেছে,

[তাসনিয়ার আন্টি আমাদের সম্পর্কের কথা জানত]

“ক,কি,কি বলছেন আন্টি এসব।
“হুম নয়ন আমি ঠিকই বলছি, রাত ৮ টায় ওদের জানাজা।

আমি ফোনটা কেটে দিয়ে বাইকটা নিয়ে তাসনিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখি সাদা কাফনে কাফন পড়া দুটি লাশ, আমি দুরত্ব তাসনিয়ার লাশের পাশে গিয়ে হাউ মাউ করে কেদেঁ দেই। অনেক লোক আমাকে দেখতেছে,সবাই ভাবতেছে কে এই ছেলেটা তাসনিয়ার লাশের পাশে এসে পাগলের মতো করে কান্না করছে কেনো। তখনি আন্টি এসে আমাকে শান্তনা দিতে লাগলো,,
“নয়ন ভেঙ্গে পরোনা,শান্ত হও নিজেকে শক্ত করো নাহলে তাসনিয়ার আত্মা কষ্ট পাবে।
“আন্টি আমি যে তাসনিয়ার সাথে কথা না বলে এক মুহূর্ত থাকতে পারবোনা, আল্লাহ্ কেনো আমার সাথে এমন করলো।
“নাঈম সবই আল্লাহর ইচ্ছা, কে যে কখন এই পৃথিবী আর প্রিয়জনের মায়া ছেড়ে চলে যাবে কেউই যানেনা।

আমি কান্না করেই যাচ্ছি,কোনো মতে নিজেকে শান্ত করতে পারতেছিনা।

দেখতে দেখতে কলিজাটার জানাজা হয়ে গেলো,কলিজাটার জানাজা আমি নিজেই চোখের অশ্রে অশ্রে পরিয়েছি।

কয়েকজন লোক মিলে আমার চোখের সামনে আমার কলিজাটাকে মাটিতে আবদ্ধ করলো, আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে কেউ আমার শরীর থেকে আমার কলিজাটাকে টেনে বের করে নিতাছে, সবাই একে একে কলিজাটার কবরে মাটি দিয়ে চলে গেলো আমি ধিরে ধিরে কলিজাটার কবরের দিকে যাচ্ছি, এক সময় কবরের ঠিক খুব নিকটে গিয়ে ধপ করে মাটিতে বসে পরলাম আর বলতে লাগলাম,

“এই পাগলি তুমি না বলেছিলে ৪ টার দিকে আমার সাথে দেখা করবে,কই তুমিতো দেখা করতে এলেনা। এই আমিতো তোমার বাড়িতে এসেছিলাম কই তুমিতো চোখ দুটি মেলে আমাকে দেখলেনা। এই পাগলি তুমি না সেদিন আমাকে বলেছিলে, আমাকে ছেড়ে কখনো যেওনা, তবে আজ কেনো তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে।
এই তুমি কই গেলে আমাকে একাকী করে,কোন সেই অজানায় গেলে।
ফিরে কি আসবে আবারো আমার এই অভাগা জীবনে। নেইতো আর আমার কোনো আশা আমার এই জীবনে,এই জীবনের সব কিছু ভেঙ্গে দিলে এক নিমেশেই। আমার আর কি লাভ হবে এই জীবন রেখে, তুমি আর নেই তো এই আভাগার পাশে। আর কিছু নেই আমার এই জীবনে,তুমি হিনা অনেক ব‍্যাথা লাগতেছে এই মনে ,কেউ না জানলেও ওই আমার আল্লাহ্ যানে।

হঠাৎ পিছন থেকে কে যেনো বলে উঠলো,,

“নয়ন আর কান্না করে কোনো লাভ নেই,চলো খাওয়া দাওয়া করে ঘুমাবে।
“কি করে আমি খাওয়া দাওয়া করে শান্তিতে ঘুমাবো,রাতে কলিজাটার সাথে একটি বার কথা না বললে যে আমার ঘুম আসেনা।
“নয়ন এরকম করোনা, এরকম করলে তাসনিয়ার আত্মা কষ্ট পাবে।

আন্টির জোরাজুরিতে ওদের বাসায় গেলাম, আন্টি আমাকে তার নিজ হাতে খাবার খাইয়ে দিলো, আমি আন্টিকে বললাম,

“আন্টি বাসায় যাচ্ছি।
“কালকে যেও,
“না, মা চিন্তা করবে।

আন্টির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তাসনিয়ার কবরে গিয়ে একটা চুমু দিয়ে বাইকে করে বাসায় এসে ঘুমাতে চেষ্টা করতেছি,কিন্তু কোনো মতেই ঘুম আসতেছে না সুধু তাসনিয়ার কথা কথা মনে পরতেছে । তবুও কোনো মতে চোখ দুটো বুজে গেলো আমিও চলে গেলাম গভীর ঘুমে আছন্ন হয়ে।

দেখতে দেখতে কেটে গেলো ২ টি বছর।
এই ২ বছরে মাঝে মাঝে কলিজাটার কবরে গিয়ে হাউ মাউ করে কান্না করে দিতাম। তার জন‍্য প্রতিবারেই এক গুচ্ছ তাজা গোলাপ। আর বুক ভরা ভালোবাসা নিয়ে গিয়ে তার কবরের পাশে সব ভালোবাসা বিলিয়ে দিতাম ওই কবরটাকে জড়িয়ে ধরে।
আজকে আমার বিয়ে, কোনো এক অজানা মেয়ের সাথে। আজকে কেনো জানি খুব মনে পড়তেছে কলিজাটার কথা। আজকে যদি কলিজিটার সাথে আমার বিয়ে হতো কতই না আমি খুশি হতাম। আমি মা কে বলে তাসনিয়ার কবরের দিকে রওনা দিলাম।

[আমার মা বাবা সবাই তাসনিয়ার কথা আগে থেকে যানতো]

বাজারে গিয়ে এক গুচ্ছ গোলাপ নিয়ে, তাসনিয়ার কবরে গিয়ে হাটুঁ গেরে বসে, ফুল গুলো কবরে রেখে কবরটাকে জড়িয়ে ধরে সব ভালোবাসা বিলিয়ে দিলাম তবু কেনো জানি মনটা শান্তি হচ্ছে না। কবরটাতে একটা চুমু দিয়ে হাউ মাউ করে কেদেঁ কেদেঁ বলতে লাগলাম ,,

“এই তাসনিয়া, এই কলিজা আর কি এই অপেক্ষার প্রহর শেষ হবেনা । এই অপেক্ষাটা কি সারাজীবন থেকেই যাবে। এই কলিজা উত্তর দাও, দাওনা উত্তর।

এই বলে বাসায় চলে গেলাম, দেখতে দেখতে অজানা মেয়েটার সাথে আমার বিয়ে গেলো, মেয়েটার নাম বন‍্যা। আজ আমার বাসর রাত, এই বাসর রাতে থাকার কথা ছিলো তাসনিয়ার। আজ তার ভিন্নতা হয়ে গেলো। আজকে অন‍্যকেউ সেজে আছে তাসনিয়ার বদলে বউ সেজে আমার রুমে। আমি ছাদে বসে সিগারেটের ধোয়া ওরাচ্ছি তখনি ছোট ভাই ও বোনরা এসে আমাকে টেনে নিয়ে বাসর ঘড়ে ঢুকিয়ে দিলো। তখনি বিছানার উপর থেকে আমার বউ মানে বন‍্যা এসে আমাকে সালাম করল, আমি তাকে অজু করতে আসতে বললাম, সে নাকি আগে থেকে ওযু করে বসে আছে, আমি ওয়াশরুমে ঢোকে ওযু করে বের হয়ে এসে দুজনে নামাজ পরে বিছানায় সুয়ে আছি তখনি বন‍্যা বলে উঠলো,,,
“দেয়ালে লাগানো ছবিটা নিশ্চই তাসনিয়া আপুর।

আমি একটু আবাক হয়ে বললাম,,

“তুমি কি করে জানলে।
“তোমার ছোট ভাই ও বোনরা আমাকে সব কিছু বলেছে।
“ওহ, হুম ওটা তাসনিয়ার ছবি।
“এখনো খুবই ভালোবাসেন বুঝি তাকে।
“জানিনা তবে,তার কথা মনে পরলে নিজের অজান্তেই চোখদুটো থেকে কয়েক ফোটা অশ্র গড়িয়ে পরে যায় ।

[কথা গুলো বলতে বলতে চোখ থেকে অশ্র গড়িয়ে পরতে শুরু করলো]

“চোখের পানি মুছে ফেলেন, আগের সৃতি গুলো ভুলে যান।
“হুম। আর হ‍্যাঁ আমি আপনাকে হয়তো।

আমাকে আর বলতে না দিয়ে বন‍্যা বলতে লাগলো,

“বুঝেছি, এখন ঘুমান।

আমি ঘুমি পড়লাম,
হঠাৎ ঘুমের মধ‍্যে সপ্নে তাসনিয়া আমার কাছে এসে আমার মাথার পাশে বসে বলতে লাগলো,

“নয়ন আর অপেক্ষা করো না, আমি আর কখনো তোমার কাছে ফিরে আসবোনা। নতুন মানুষটাকে আমার মতো করে ভালোবাসো। আমাকে তোমার নতুন মানুষটার মাঝে খুজে নিও।

আমি তাসনিয়া বলে জোরে একটা চিৎকার দিয়ে উঠে দেখি আমার পাশে বন‍্যা শুয়ে আছে। তাসনিয়া আর আমার মাথার পাশে বসে নেই ওটা আমার সপ্ন ছিলো। আমার চিৎকার শুনে বন‍্যাও জেগে উঠলো,বন‍্যা বলতে লাগলো,,,

“কি হয়েছে নয়ন এরকম চিল্লিয়ে উঠলে কেনো।
“না কিছু হইনি।

এই বলে বন‍্যাকে জরিয়ে ধরে বন‍্যার মাঝে তাসনিয়াকে খুজে নিয়ে হারিয়ে গেলাম এক অজানা সুখের রাজ‍্যে।

(সমাপ্ত)

Leave a Reply