Mofak Hossain

মোফাক হোসেন

মোফাক হোসেনের কষ্ট ও কল্পনার জগৎ

তৈমুর খান

একই সঙ্গে রোমান্টিক আর উদ্বেগ নিয়ে কাব্যযাত্রা শুরু করেছেন তরুণ কবি মোফাক হোসেন। সম্প্রতি প্রকাশিত তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘ঈশ্বরের চশমা'(প্রথম প্রকাশ ২০২০) আমার হাতে এসে পৌঁছেছে। মোট ৫৭টি কবিতায় তাঁর উপলব্ধির নানান স্তরগুলি বিন্যস্ত হয়েছে। কবির অবস্থান, সামাজিক ও রাষ্ট্রিক সংকট এবং ব্যক্তিগত বিষাদের ছবিগুলি কাব্যে প্রকাশ পেয়েছে। যেমন স্বপ্নও নিখাদ স্বপ্ন হয়ে থাকেনি। সেখানেও মৃত্যুর পদধ্বনি শোনা গেছে:

“স্মৃতিগুলি দাঁড়িয়ে

শীতের চাদর মুড়ে

বিষণ্ন মনের ক্লান্তি দূর করে,

শেষ নিঃশ্বাসে থাকে হতাশার ছাপ!”

অর্থাৎ মৃত্যুতেও নিরিবিলি ফিরে আসেনি। যে অশান্ত সময় অভিশাপ হয়ে ফিরে এসেছে, তা-ই কবিতা হয়ে গেছে কবির লেখায়। রাষ্ট্রীয় আতঙ্ক বিষয়েও কবির বক্তব্য স্পষ্ট:

“অন্ন দাওনি, বস্ত্র হরণ করেছ

আমি কিছু বলিনি

আমার জন্মস্থানটাকেই অস্বীকার করছ

তখন আমি দিয়াশলাই-এর কাঠিটা

আর তালাবন্ধ বাক্সে রাখতে পারি না!”

তখন তো কবি বিপ্লবী হতে বাধ্য। তাঁর করুণ ও অসহায় মুহূর্তে ফিরে এসেছে আত্মরক্ষার সংগ্রামের শপথ। একদিকে প্রকৃতির হাতছানি, অপরদিকে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই কবি কোনটি সামলাবেন? দুই দিকেই হাত প্রসারিত করেছেন। কেননা কবি তো স্বয়ংক্রিয় এবং সক্রিয়। তাই হৃদয়মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনিকে যেমন উপেক্ষা করতে পারেননি, তেমনি নিসর্গ রাজ্যে উদ্দাম কল্পনার ঘোড়াকেও লাগাম পরাতে চাননি। ব্যক্তিগত বিরহের কাছে মুকুলিত যন্ত্রণাগুলিকে পোষ মানিয়েছেন। রোমান্সের আলো-আঁধারিতে তাদের স্নান করিয়েছেন। তাদের আশ্বাস দিয়ে লিখেছেন:

“আমার ভাঙা উঠোনে কাঁচাপাকা

রোদের আনাগোনায়

খিলখিলিয়ে হেসে উঠবে

গভীর ঘুমের অন্তরাত্মা,

আমি ঢলে পড়ব পড়ন্ত গোধূলিবেলার পরে,

পরীদের ভিড়ে।”

পড়ন্ত গোধূলিবেলায় ঘুমের আয়োজনে পরীদের ভিড় এসে যখন থামবে, দিন আঁধারের লুকোচুরিতে যখন খিলখিলিয়ে হাসির রোল উঠবে, তখন হৃদয় জুড়ানো সেই সমীক্ষণে কবি ফিরে পাবেন তাঁর দরদিয়া সম্মোহিত প্রেমকে। যে প্রেম নতুন করে বাঁচতে শেখায়, জীবনের জয়গান গাইতে শেখায়।

   কাব্যের সর্বত্রই একটা অযত্নের ছাপ যা পাঠককে পীড়া দেয়। এত বানান ভুল কেন? কবিতার পঙক্তিগুলিও বিক্ষিপ্ত। আঙ্গিক গঠনেও একটা শৈথিল্যের ছাপ স্পষ্ট। রেডিমেট প্রকাশনার জন্য একজন তরুণ কবির প্রতি এই অবিচার বলেই মনে হয়।

🍁

ঈশ্বরের চশমা : মোফাক হোসেন, চক্রবর্তী অ্যান্ড সন্স পাবলিকেশন, বারুইপুর, পুরাতন থানা, কলকাতা-৭০০১৪৪, প্রচ্ছদ : সঞ্জয়কুমার দে, মূল্য ১৩০ টাকা।

মোফাক হোসেন
মোফাক হোসেন
আলোচক ড. তৈমুর খান

Leave a Reply