কচ্ছপের ডিম
মোবারক হোসেন
একবার পানির রাজ্যে ভয়ংকর মহামারী দেখা দিল।পানি রাজ কুমির ভিষণ দুশ্চিন্তায় পড়লেন।রোগের কোন লক্ষন বোঝা যায়না।যে প্রানীর এ রোগ দেখা দেয়,কি জানি কি হয়,সে কিছুক্ষন নাচে,কিছুক্ষন হাসে,কিছুটা সময় গান গায়,তারপর নিতিয়ে পড়ে।চোখ যে বন্দ করে আর চোখ খোলেনা।মাছ ব্যাঙ হইতে শুরু করে পানি রাজ্যের কোন প্রাণীই শুধু কচ্ছপ ছাড়া এ রোগ থেকে রেহাই পেলনা।দিন দিন রাজ্যের প্রানী কমে যেতে লাগলো।কুমির রাজ হেকিম,বৈদ্য ডেকে সব রকমের চিকিৎসার ব্যবস্হা করলেন। কিছুতেই কিছু হলনা।পানি রাজ্যে চরম অশান্তি বিরাজ করতে লাগল।এমন করে দিন মাস যায়,কিছুতেই কিছু হয়না।একদিন কচ্ছপ ছাড়া সকল প্রাণী এসে কুমির রাজার কাছে আরজি জানাল এই যে,সাপ আর ব্যাঙ প্রায় ডাঙ্গায় যায়।
তাই তাদের বিষেশ দায়িত্ব দেওয়া হউক যে,ডাঙ্গার প্রাণীকূল থেকে এই রোগের চিকিৎসা জেনে আসুক।ডাঙ্গার প্রাণীদের মধ্যে আছে মানুষ।তারা খুব জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান।তাদের জ্ঞান বুদ্ধিতে তারা সকল রোগের ঔষধ নিজেরাই তৈরী করতে পারে এমনকি এও শুনা যায়,পশু-পাখিরদেরও নাকি চিকিৎসা তারা করে থাকে।সব শুনে কুমির বলল,উত্তম প্রস্তাব,ব্যাঙকে ডাঙ্গায় পাঠানো হোক।ব্যাঙ নিরিহ প্রাণী,ব্যাঙ মানুষের কাছা-কাছি থাকতে পারবে।মানুষ তাদের ক্ষতি করবেনা।আরও ব্যাঙ ও সব জেনে আসতে পারবে।সাপ বলল,আমিও যাব।কুমির ধমকে বলল,জা বলছি তাই কর।
তুমি যে ধরনের বদ-মেজাজি সামান্যতেই তুমি মানুষকে ছোবল দিবে আর মানুষও তোমাকে মেরে ফেলবে।তোমার থেকে তফাতে থাকবে।হ্যা তুমি যাবে তবে লুকিয়ে লুকিয়ে ব্যাঙের সাথে যোগাযোগ করার জন্য।পরের দিন ব্যাঙ চলে গেল ডাঙ্গায়।
মানুষের ঘরের আনাচে-কানাচে থাকে। তবে পানির প্রয়োজন দেখা দিলে,পুকুরে বা নালাই নেমে যায়।মাঝে-মাঝে সাপ লুকিয়ে দেখা করে আসে।এইভাবে দুই মাস পরে ব্যাঙ পানি রাজ্যে ফিরে আসে।এবং এই রোগর সকল চিকিৎসার কথা কুমির কে বলল।কুমির বলল কালকে সকল প্রজাদের এক জায়গায় জড়ো করা হউক।সেখানে সকলকে বুঝিয়ে বলা হবে।যাতে সহজে সবাই বুঝতে পারে এবং তাড়া-তাড়ি চিকিৎসার মাধ্যমে সবাই ভাল হয়ে যায় এবং রাজ্যে শান্তি ফিরে আসে।পরের দিন বিশাল এক মন্স তৈরী করা হল।প্রথমেই মন্সে উঠলেন পানি রাজ কুমির।তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বললেন,তোমাদের জন্য সুখবর!অজ্ঞাত এই মহামারী রোগের নিরাময় ঔষধের খোজ পাওয়া গিয়েছে।এ বিষয়ে বিস্তারিত সব বলবে ব্যাঙ।ব্যাঙ মন্সে উঠে বলতে শুরু করলো।
আমি জেনে এসেছিিএই রোগের একমাত্রঔষধ হল কচ্ছপের ডিম।কচ্ছপের ডিমে আছে এক শক্তি-শালী নিরাময় ক্ষমতা।তার যথেষ্ঠ প্রমাণও আছে যেমন কচ্ছপদের এই রোগ হয়নি।সুতরাং এই রোগ হতে মুক্তি পেতে হলে কচ্ছপ সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে এবং বেশি বেশি করে ডিম পাড়তে হবে।যাতে এই ডিম খেয়ে আমরা সকলে তাড়াতাড়ি ভাল হয়ে যেতে পারি।কচ্ছপদের মধ্যে থেকে নেতার মতন একজন উঠে বলল,আমরা সকলে সকলের তরে।তাই প্রাণী সমাজের মঙ্গলের জন্যে আমরা এ কাজে রাজি আছি।শুরু হল কচ্ছপদের উৎসাহে ডিম পাড়া উৎসব।আর পানি রাজ্যের সকল প্রানীদের কচ্ছপদের ডিম খাওয়া উৎসব।তারা ডিম খাওয়া উৎসবে এমন ভাবে মেতে উঠলো যে ভুলেই গেল তাদের রাজ্যে মহামারী কোন রোগ আছে।ধীরে দীরে মহামারী রোগ বিলিন হয়ে গেল।কিন্তু ডিম খাওয়া বন্ধ হলনা।এটা তাদের সুস্বাদু খাবার এবং অভ্যাসে পরিণত হল।কচ্ছপ সম্প্রদায়ে বংশ বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গেল।
তারা সকলে করজোরে মিনতি করলো কিন্তু কেউ তাদের কথায় কর্নপাত করলোনা।তারা নিরুপায় হয়ে গেল কুমির রাজ্যের কাছে।তারা কুমির রাজাকে সব খুলে বলল,এও বলল,এঅবস্থা চলতে থাকলে কচ্ছপ জানি একসময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে।সব শুনে কুমির রাজা মিটি-মিটি হাসতে হাসতে বলল,তোমাদের ডিম না খেলে আমরা যে মহামারীতে আক্রান্ত হব।তোমাদের একটা জাতীর জন্য তো আর হাজারটা জাতী ধংশ হতে দিতে পারিনা।আসলে কচ্ছপের ডিমের লোভ কুমিরের মাঝেও ঝেকে বসেছে।কুমির মনের কথা আর মুখে না এনে বলল,তোমরা যাও এখন থেকে এটাই নিয়ম বলবৎ থাকবে।তোমরা শুধু পানি রাজ্যের প্রজাদের জন্য ডিম পাড়বে।কচ্ছপের দল চলে এল,তার পর তারা ভাবতে লাগলো কি করা যায়।কিভাবে তাদের বংশধরদের রক্ষা করা যায়।
সেষে তারা েএক গোপন বৈঠকে বসলো।অকে আলোচনা হল,কিন্তু কোন উপায় বের হলনা।বৈঠক ভেঙ্গে যাবে এমন সময় এক প্রবীণ কচ্ছপ উঠে দাড়িয়ে বলল,তোমরা কেউ যাবেনা।সবাই ভাল করে শুন,উপায় একটা পাওয়া গেছে।সবাই নিরব হলে প্রবীণ কচ্ছপ বলল,কাল থেকে কেউ জলে ডিম পাড়বে না।জল থেকে উঠে বালুচরে গিয়ে বালির নিচে গর্ত করে ডিম পেড়ে আসবে।অন্য প্রাণীরা যখন জিজ্ঞাসা করবে তখন বলবে আমাদের মাঝে মহামারী দেখা দিয়েছে,সকল কচ্ছপের ডিম পাড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে।একদিন দুই দিন করে য়খন তারা আর আমাদের ডিম পাড়তে দেখবেনা তখন আস্তে আস্তে তারা সব ভুলে যাবে।সেই থেকে আজ অবদি কচ্ছপ আর জলে ডিম পাড়েনা।ডিম পাড়ে নদীর কাছা-কাছি বালু চরে বালুর নিচে। সারা বছর ডিম বালুর নিচে থাকে,আর যখন বন্যা হয় তখন পানির স্পর্শে খুব দ্রুত ডিম ফুটে বাচ্চা জন্ম নেয়।এবং বাচ্চা গুলো সাথে সাথে পানিতে ভাসতে পারে এবং সাতরাতে পারে।